পিলখানা হত্যাযজ্ঞ আমাদের জাতীয় জীবনে একটি শোকাবহ ও কলঙ্কজনক অধ্যায়। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি এই ট্র্যাজেডিতে সেনাবাহিনীর ৫৭ জন অফিসারসহ মোট ৭৪ জন শহীদ হন। কোন ঘটনায় এত কম সময়ে সেনাবাহিনীর এত সংখ্যক অফিসারকে হারানোর ইতিহাস সারাবিশ্বের কোথাও নেই। এমনকি একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসেও সেনাবাহিনীর এতসংখ্যক অফিসারকে হারাতে হয়নি। এই শোকাবহ ঘটনা কখনোই ভুলে যাওয়ার মতো নয়। কয়েকটি মামলায় ইতিহাসের বর্বরতম এই ট্র্যাজেডির সঙ্গে জড়িত বিডিআর সদস্যসহ অনেকের বিচার হয়েছে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার পর এসেছে মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজার রায়। তবে আমরা বিশ্বাস করি, অপরাধীদের যতই মৃত্যুদণ্ড কিংবা অন্য কোন সাজা হোক, উচ্চ প্রশিক্ষিত এসব অফিসারের মৃত্যুতে দেশের যে ক্ষতি হয়েছে তা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। আমরা মনে করি, এ অপূরণীয় ক্ষতি সংঘটিত হওয়ার আগে তা ঠেকানো গেলে এ অফিসারদের হারাতে হতো না। সারা জীবনের জন্য চোখের পানিতে ভাসতে হতো না এতগুলো পরিবারকে। কিন্তু আমরা দেখেছি, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখানে ব্যর্থ হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা চরম উস্কানিমূলক লিফলেট বিতরণ করেছে। বিডিআর জওয়ানরা অফিসারদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দাবি নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে গেলেও গোয়েন্দাদের কাছে সেই খবর ছিল না। এমনকি বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী পিলখানায় যাওয়ার আগে সেখানে কোন হামলার আশংকা নেই বলে প্রতিবেদন দিয়েছিল বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এ ট্র্যাজেডির পর গঠিত একটি তদন্ত সংস্থার রিপোর্টে জানা গেছে, পিলখানায় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই, এসবি ও এনএসআইয়ের নিজস্ব কোনো নেটওয়ার্কই ছিল না। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ঠেকাতেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা মনে করি, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পিলখানার মূল পরিকল্পনাকারীদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকল গোয়েন্দা সংস্থা ও তাদের কার্যপদ্ধতিকে আরো উন্নত করা প্রয়োজন। অসচেতনতার কারণে ভবিষ্যতে যাতে এমন ট্র্যাজেডি আমাদের জাতীয় জীবনে আর কখনো না আসে সেজন্য সব ধরণেরর প্রস্তুতি থাকতে হবে। পিলখানার গভীর শোককে শক্তিতে পরিণত করে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। শোকাবহ এই ট্র্যাজেডিতে নিহত সকল শহীদের প্রতি রইলো আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।