রাজধানীর বেশিরভাগ বাসেই নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন নেই, থাকলেও রয়েছে সংখ্যাগত পার্থক্য। নতুন আইন যে আসছে সে ব্যাপারে অনেক বাসের চালক-সহকারী জানেন না। আইনটি নিয়ে যাত্রীদের পক্ষ থেকেও এসেছে ভিন্নমত।
গণপরিবহনে নারী/প্রতিবন্ধী/বয়স্কদের জন্য সংরক্ষিত আসনে পুরুষরা বসলে জেল-জরিমানার বিধান রেখে আইনের খসড়ায় সম্প্রতি অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনটি এখনও কার্যকর না হলেও খসড়া অনুমোদনের পর রাজধানীর গণপরিবহনের অবস্থা জানতে চ্যানেল আই অনলাইনের পক্ষ থেকে যাত্রীবেশে ভ্রমণ করা হয় একাধিক পরিবহনে।
রাজধানীর আরামবাগ থেকে জিরানি পর্যন্ত চলাচলকারী ওয়েলকাম পরিবহনের চালক আজমত এরকম কোন আইনের কথা জানেনই না। আরামবাগে তার কাছে প্রস্তাবিত আইনটির ব্যাপারে জানতে চাইলে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, না ভাই এমন কোন আইনের খবর জানি না।
‘তাছাড়া আমগো গাড়িতো সিটিং, মহিলাগো উডাই না। তারা নামতে-ওঠতে মেলা দেরি করে। দেরি অইলে অন্য যাত্রীরা বকাবকি করে,’ এই ছিল তার বক্তব্য।
আসন ফাঁকা হলেও বসার সুযোগ পাচ্ছেন না নারীরা
শাহবাগ থেকে এই প্রতিবেদক ওঠেন মোহাম্মদপুর-কমলাপুর রুটে চলাচলকারী রাজাসিটি পরিবহনের একটি বাসে। বাসটিতে নারী/শিশু/প্রতিবন্ধীদের জন্য নয়টি আসন সংরক্ষিত। নির্ধারিত আসনে নারীরা বসা থাকলেও বেশ কয়েকজন নারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব, পল্টনে একাধিক সাধারণ আসন ফাঁকা হলে পুরুষরা বসে পড়েন, কিন্তু গুলিস্তান গিয়ে নির্ধারিত আসনে বসা নারীরা নেমে গেলে সেখানে সঙ্গে সঙ্গে বসে পড়েন পুরুষ যাত্রীরা।
শাহবাগ থেকে বাসটিতে উঠে নারীদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়েন এক চল্লিশোর্ধ পুরুষ যাত্রী। বাস সহকারী ওই যাত্রীকে সরে দাঁড়াতে বললে ধমকের সুরে তিনি বলেন: চুপ থাক বেটা। ভাড়া কাটা দরকার ভাড়া কাট।
‘আফারা-খালারা সিট খালি নাই’
যাত্রাবাড়ি থেকে গাজীপুর পর্যন্ত চলাচলকারী বলাকা সার্ভিসের একটি লোকাল বাসে কমলাপুর থেকে মহাখালী পর্যন্ত ভ্রমণ করে জানা যায় পরিস্থিতি আরও নাজুক।
বাসটিতে লেখা আছে নারি/শিশু/প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্ধারিত আসন ছয়টি। কিন্তু ছয়টি আসনেই পুরুষ যাত্রীরা বসা ছিলেন। বাসটি রাজারবাগ স্টপেজে থামলে দুই নারী বাসটি উঠার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাস সহকারী তাদের পথ আগলে তাদের উদ্দেশে বলেন, আফারা-খালারা সিট খালি নাই।
তবে সেখান থেকে একাধিক পুরুষ যাত্রী বাসে উঠেন।
বাসটি মালিবাগ মোড়ে পৌঁছলে সেখান থেকে তিনজন নারী বাসে উঠতে চান। সহকারী আসন ফাঁকা নেই জানানোর পর নারীরা বলেন, আমরা দাঁড়িয়ে যাবো। তখন রুঢ় ভাষায় সহকারী তাদের বলেন, কইলাম না সিট খালি নাই। পরের বাসে আসেন।
‘পুরুষদের সিটে নারীরা বসলে তাদের সিটে বসতে সমস্যা কী?’
রাজা সিটি পরিবহনের সহকারী শরিফুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘ভাই আমাগো বাসে মহিলাগো জন্য সিট আলাদা। আমরা সবসময় চেষ্টা করি তাগো বসতে দিতে। কিন্তু অনেক ‘ত্যাড়া যাত্রী’ আছে যারা আইসাই মহিলাগো সিটে বইয়া পড়ে। উঠতে বললে উল্টো আমাগো ঝাড়ি দিয়া কয় পুরুষগো সিটে মহিলারা বইতে পারলে আমরাও তাগো সিটে বসমু।’
নতুন আইন সম্পর্কে শুনেছেন জানিয়ে এই বাসের চালক রাকিব বলেন: আইনডা ভালোই অইছে। তয় এর বাস্তবায়ন করবে কেডা? আমরা কইতে গেলেতো যাত্রীরা আমাগো মারতে আসে।
গত সোমবার বাসে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষিত আসনে কেউ বসলে বা তাদের বসতে দিলে এক মাসের কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানাসহ আরও কিছু বিধান যুক্ত করে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৭-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
এ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।