আর মাত্র কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা। রাত পোহাবার পর সকাল গড়িয়ে দুপুরেই দেশের মাটিতে পা রাখবে মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দল। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা অর্জন করা সাবিনা-স্বপ্না-কৃষ্ণাদের বহনকারী বিমান রানওয়ে স্পর্শ করার পর তাদের দেখার অপেক্ষায় থাকবে দেশবাসী।
ফুল দিয়ে বরণের পর ফুটবলারদের করানো হবে মিষ্টিমুখ। সংক্ষিপ্ত প্রেস কনফারেন্সে অংশ নেয়ার পর তারা ছাদখোলা বাসে করে বাফুফে ভবনের পথে রওনা দেবে। সেখানে চ্যাম্পিয়ন কন্যাদের বরণ করবেন দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থার প্রধান কাজী সালাউদ্দিন। চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের সঙ্গে কী কথা বলবেন, সেটিও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন।
মঙ্গলবার বাফুফে ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কাজী সালাউদ্দিন বলেন,‘আমি মেয়েদের সঙ্গে বসবো। এবার আমি তাদের সঙ্গে প্রফেশনাল কথা বলবো। এটাই বলবো যে, আগে যা ট্রেনিং করেছ এখন থেকে তার চেয়ে ৬০ ভাগ বেশি করতে হবে। আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে খেলার টার্গেট রাখবো। পরবর্তী ধাপে এছাড়া আমরা যেতে পারবো না।’
মেয়েরা যাতে নিয়মিত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারে, সেই পরিকল্পনাও করছে বাফুফে। তবে আর্থিক প্রতিবন্ধকতায় বিষয়টি বেশ কঠিন বলেও জানান কাজী সালাউদ্দিন।
‘একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললেই হোটেলে থাকা, খাওয়া, যাতায়াত এসবে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা খরচ হয়। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাজেত নিয়ে কথা বলেছি, যাতে আমরা ফিফা উইন্ডোতে খেলতে পারি। যেসব বড় দেশ বিশ্বকাপে খেলে যেমন জাপান, সাউথ কোরিয়া তাদের সঙ্গে খেলার চেষ্টা করবো। যদি টাকা না পাই তাহলে জানায়ে দেবো আমার পক্ষে মেয়েদের ম্যাচ আয়োজন সম্ভব না। টাকা পেলে আমি পারবো।’
ফুটবল অঙ্গনে বড় সাফল্য এনে দেয়া মেয়েদের ঘরোয়া ফুটবলের বেহাল দশা চলছেই। ছেলেদের লিগ নিয়মিত হলেও মেয়েদের দল গড়তে ক্লাবগুলোর রয়েছে চরম অনিহা। সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাফুফে সভাপতি নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও মহিলা উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ নাকি মেয়েদের দল গড়ার জন্য ক্লাবগুলোর কাছে রীতিমতো ভিক্ষাই চেয়েছেন!
‘এখন আমি ফিফার গাইডলাইন মানতে পারি। তবে ফিফার গাইডলাইন মেনে চলতে গেলে ক্লাবগুলোকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তখন আপনারাই প্রশ্ন করবেন কী এমন ব্যাপার হল যে মেয়েদের জন্য ছেলেদের খেলাই বাদ দিয়ে দিলেন? আমি বারবার অনুরোধ করেছি তারা যেন মেয়েদের দল গড়ে। আমিও এও বলেছিলাম দরকার হলে অর্থ আমরা দেবো তাও দল দাও। তবে এটাও ঠিক খেলোয়াড়ের অভাব আছে। সব খেলোয়াড় আমাদের বাফুফের ক্যাম্পেই রয়েছে এটাই বাস্তবতা।’
সাফে বাংলাদেশ শিরোপা জিতবে এমনটা আশা করেছিলেন কি না- জানতে চাইলে বাফুফে সভাপতি বলেন, ‘১০ বছর আগে এই দলকে নিয়ে যখন কাজ শুরু করেছিলাম তখন মনে করেছিলাম ২০২৪ সালে চ্যাম্পিয়ন হবে। তারা আগেই হয়েছে।’
এর আগে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম সংলগ্ন সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে ছেলে ও মেয়ে খেলোয়াড়দের বেতন বৈষম্য নিয়ে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন। জবাবে সমাজে মেয়েদের প্রতি তিনি সকলের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আহ্বান জানান।
‘দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, জীবন পাল্টে যাবে। ছোট বয়স থেকে দেখে আসছি মেয়েদের দমন করা হয়। ছেলেরা সব করবে, মেয়েরা করবে না। কিন্তু ফলাফল তারা আনছে। টাকার ক্ষেত্রে ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে ক্লাবগুলো আগায়ে আসে না। বাফুফের সক্ষমতা কম, বিসিবির বেশি। তারা আরও ব্যবস্থা করতে পারে। কোনো টুর্নামেন্টে যদি ছেলেরা চ্যাম্পিয়ন হলে যে ট্রফি আনবে, মেয়েরা জিতলেও একই ট্রফি আনবে। তাহলে মেয়েদের কেন কম টাকা দেয়া হবে? দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে।’
‘ছেলেরা চ্যাম্পিয়ন হলে যতটা আনন্দ পেতাম, মেয়েরা হওয়ায় তার চেয়ে বেশি আনন্দিত হয়েছি। কারণ তারা অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এসেছে।’
পূর্বাচল ও কক্সবাজারে নতুন ফুটবল স্টেডিয়াম নির্মাণের কথা জানিয়ে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার কারণে আমরা ২ বছর থমকে গিয়েছিলাম। তবে বাজেটের কারণে পিছিয়ে থাকবো না। সবার প্রত্যাশা অনেক। বরাদ্দের সময় কম পাই। এখন পাবো আশা করি ।অর্থমন্ত্রী কল দিয়েছিলেন আমি উনাকে বলেছি আপনারা যা বরাদ্দ দেন তাতে আমরা স্টেডিয়াম বানাতে পারি না।’
‘তবে ফেডারেশনকেও এগিয়ে আসতে হবে। স্পন্সরদের দায়িত্ব নিতে হবে। কোনো দেশেই সরকার খেলাধুলায় সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা করে না। পৃষ্ঠপোষকতায় বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠান যদি এগিয়ে আসে, তাহলে স্পোর্টস অনেক এগিয়ে যাবে।’
ক্রিকেটের মতো ফুটবলও স্পন্সর পেলে এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি আরও বলেন, ‘আগে ক্রিকেটে সংকট ছিল। ভালো করায় স্পন্সর এসেছে। ফুটবলে এবার ভালো করায় আশাকরি স্পন্সর পাবে। ৪৫০ কোটি টাকার প্রজেক্ট বাফুফে জমা দিয়েছে। স্টেডিয়াম ও একাডেমি কোথায় হবে,সেই স্থান পরিদর্শন করা হয়েছে।’
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী একই সঙ্গে জানান, আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এরপর ফুটবল ও অ্যাথলেটিক্সের জন্য স্টেডিয়ামটি ব্যবহার করা যাবে।