বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বিজয়ের ৫২ বছর অতিক্রম করেছে। এই বায়ান্ন বছরের ইতিহাসে রয়েছে অনেক অর্জন তবে সে অর্জনের পথে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
এসব প্রতিবন্ধকতা যে শুধু স্বাধীনতার আগে ছিল তা কিন্তু নয়, স্বাধীনতাত্তোর সময়েও এসব প্রতিবন্ধকতা সব সময়ই ছিল। হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে। যার উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পদ্মাসেতুর ষড়যন্ত্র। কিন্তু কোন প্রতিবন্ধকতাই বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রতিহত করতে পারেনি। পদ্মাসেতুর সফল বাস্তবায়নের পাশাপাশি বাস্তবায়িত হয়েছে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেল ও বঙ্গবন্ধু টানেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ।
বাংলাদেশে গত প্রায় ১৫ বছরে যে সকল ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে তার মধ্যে মাথাপিছু আয় ৭৫৯ থেকে ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলার উন্নীত করা অন্যতম। অন্যান্য তালিকায় রয়েছে, মানব সম্পদ সূচক ৫৩ থেকে বাড়েয়ে ৭৭ দশমিক ৩ এ নিয়ে আসা ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক ৪৬ থেকে কমিয়ে ২৬ দশমিক ৬ এ আনা। এর ফলে বাংলাদেশ স্বপ্লোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হয়েছে।
নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেনের মতে,কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেয়ার মতো সাফল্য আছে বাংলাদেশের। বিশেষত শিক্ষা সুবিধা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার ও জন্মহার কমানো, গরিব মানুষের জন্য শৌচাগার ও স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করা এবং শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম। এছাড়াও গত ১৫ বছরে যে সকল ক্ষেত্রে অভুতপূর্ণ উন্নতি হয়েছে তার মধ্যে, শ্রমিকের মজুরি ১ হাজার ৪৬২ থেকে ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকায় আনা। গৃহহীন পরিবারের জন্য ৫০ লাখ ঘর নির্মাণ।
এতিমখানায় মাসিক মাথাপিছু বরাদ্দ ১ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা করা। রেজিস্টার্ড বেসরকারি এতিমখানায় শিশুর সংখ্যা ৩৯ হাজার ৫৮৩ থেকে ১ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৬ এ নিয়ে আসা। সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রাপ্তিতে দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংখ্যা ১ লাখ ১০ হাজার ২২৫ থেকে ১ লাখ ৯১ হাজার ১৩০ এ বাড়ানো। প্রতিবন্ধী ভাতার সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ ছেষট্টি হাজার থেকে ২৯ লাখ করা। ৬ হাজার ৮৮০ জন হিজড়া শিক্ষার্থীকে ভাতা দেয়া। বিধবা ভাতার সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৬ লাখ ৫০ হাজার থেকে ২৫ লাখ করা। ৭৫ হাজারে উন্নীত করা। বয়স্ক ভাতার সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১৬ লাখ থেকে ৫৮ লাখে আনা।
এছাড়াও উন্নয়নের তালিকায় রয়েছে, ৬০ হাজার চা শ্রমিককে আর্থিক সহায়তা দেয়া। কৃষকের উন্নয়ন সহায়তার খাত ৫ হাজার ১৭৮ থেকে ২৫ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকায় উন্নীত করা। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ২ হাজার ৫০৫ থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৯ থেকে ১৮৪ মিলিয়ন নিয়ে আসা। মোবাইল ফোন উৎপাদনের হার ৯৭ শতাংশ বাড়ানো। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪০ লাখ থেকে ১২ কোটি ৯৪ লাখে নিয়ে আসা। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এবং ২০১৫ পে-স্কেল ।
বর্তমানে আমাদের দেশের ৯৮ শতাংশ এলাকা ফোরজি নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত হয়েছে । যার অন্যতম একটি কারণ এক দেশ এক রেট নীতি অনুসরণ করা। যার ফলে আমাদের দেশের মানুষ এখন ঘরে বসেই তাদের অনেক দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারছে। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ৪ হাজার ৫৫০টি ইউনিয়নে বসানো হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল যার সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজারটি।
এছাড়া দেশের প্রত্যেকটি উপজেলা ইন্টারনেটের আওতায় আনা হয়েছে। তাছাড়া সেবা প্রদান সহজীকরণের লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে ই-পেমেন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা যা সরকারি সেবা ত্বরান্বিত করেছে। আর এসবের সুফল দেশের আপামর জনগণ ভোগ করেছে যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ-করোনাকালীন সময়ে মানুষ প্রাতিষ্ঠানিক তথা ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড সম্পাদনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রেখেছে এমনকি বর্তমানেও এর প্রভাব বিদ্যমান রয়েছে। এ সকল উন্নয়নের কারিগর হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বকেই বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। তার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, এমডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, রপ্তানিমুখী শিল্পায়নসহ নানা অর্থনৈতিক সূচকে উজ্জ্বল হয়েছে বাংলাদেশ।
ধারণা করা হয় যে, পরিকল্পিত ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ এমনকি চলমান কয়েকটি প্রকল্প; যেমন-বরিশাল-ভোলা সংযোগ সেতু, শরীয়তপুরে শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর এবং বরিশালের নভোথিয়েটার, বরিশাল-কুয়াকাটায় রেললাইনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে বাংলাদেশ অচিরেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা তথা স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর হবে। এহেন পরিস্থিতিতে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখার বিকল্প নেই। তাই সবাই মিলে এ পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখতে বদ্ধপরিকর হতে হবে । মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)