১১ বছরের ক্যারিয়ার তমা মির্জার। লম্বা সময় ধরে অভিনয়ে জড়িত এ অভিনেত্রী ২০১৫ সালে ‘নদীজন’ ছবির জন্য পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ক’দিন আগে মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত রায়হান রাফীর ‘ডার্ক সাইড অব ঢাকা’। দেশীয় প্লাটফর্ম চরকিতে সদ্য মুক্তি পেয়েছে একই নির্মাতার আরেকটি ওয়েব ফিল্ম ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’। আর এই ফিল্মটির জন্যই তুমুল প্রশংসিত হচ্ছেন তমা।
গ্ল্যামারহীন তমার দুর্দান্ত উপস্থিতি তাক লাগিয়ে দিয়েছে দর্শকদের। পাচ্ছেন অন্যরকম প্রশংসা। ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ এবং নিজের ক্যারিয়ার বিশ্লেষণ করে তমা মির্জা কথা বললেন চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে…
‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ মুক্তির পর কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
সাধারণ দর্শকদের কাছ থেকে বেশী সাড়া পাচ্ছি। আমাদের মিডিয়ার বা কাছের মানুষদের ভালো কাজের উৎসাহ দেয়ার চর্চা বাড়ানো উচিত। আমার কাছে কাজটি অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ গল্পের বেশীরভাগ জুড়ে দুটো মানুষ দেখানো হয়েছে। আমার জেনারেশনের কারও সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করিনি। ফজলুর রহমান বাবু ভাইয়ের মতো কিংবদন্তী অভিনেতার সঙ্গে কাজ করেছি। উনি সবসময় শতভাগ অভিনয় করেন। কিন্তু তার ২০ ভাগ দিয়েছি এটা যেন দর্শকদের চোখে না লাগে এটা মাথায় ছিল। সবসময় ভালো করার চেষ্টা ছিল। এখন পর্যন্ত কেউ বলেনি ‘তমার থেকে আরও ভালো আশা করেছিলাম’।
পর্দায় সবাইকে নিজেকে গ্ল্যামারস দেখাতে চান। ব্যাক টু ব্যাক আপনি গ্ল্যামারহীন, এটা কীভাবে সম্ভব হচ্ছে?
এর আগে ‘নদীজন’, ‘ফ্রম বাংলাদেশ’, ‘ডার্ক সাইড অব ঢাকা’ ছবিগুলোতেও নন গ্ল্যামারস চরিত্রে অভিনয় করেছি। ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’তে ননগ্ল্যামারের পর ফারজানা চরিত্রটি যখন প্রকাশ পায় তখন অনেক বেশী গ্ল্যামার ছিল না। গল্পের সঙ্গে লুক ফিল যেটা ডিম্যান্ড করছে যেভাবে কাজ করেছি। মানুষ কাজগুলো দেখছে, পছন্দ করছে। এটাই প্রাপ্তি। এতবছর ধরে কাজ করে এখন এসে বেশী বেশী উৎসাহ পাচ্ছি। চেষ্টা করছি নিজেকে বারবার প্রমাণ করার। এই চেষ্টা সবসময় বজায় থাকবে।
ছবিতে দেখা গেছে, আপনি ক্ষুধার যন্ত্রণায় ময়লা পাউরুটি খাচ্ছেন, টয়লেটের ট্যাবের পানি খাচ্ছেন। বেশীরভাগ সময় নোংরা পরিবেশে অভিনয় করেছেন। এগুলোর জন্য প্রস্তুত ছিলেন?তৃষ্ণা এবং খাবারের ক্ষুধা যেন চেহারায় বোঝা যায় সেজন্য খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমিয়েছিলাম। সকালে শুধু নাস্তা করে শুটিংয়ে যেতাম। দিনে হালকা ফলমূল ছাড়া কিছুই খেতাম না। এমনও হয়েছে দিনে অনাহার থেকে রাতে হোটেলে ফিরে খাবার খেয়েছি। যে পাউরুটি খেয়েছিলাম ওটা সত্যি সত্যি ময়লা ছিল। পানি খাওয়ার যে দৃশ্য আছে ওটা ন্যাচারাল ছিল। একশটে নেয়া হয়েছে মানুষকে বিশ্বাস করানোর জন্য। এজন্য আমাকে ওই ময়লা পানিই খেতে হয়েছে। তেলাপোকার গন্ধ ছিল। আমি যে মাটিতে পড়েছিলাম ওই জায়গা বিশ্রী নোংরা ছিল। সবকিছু মিলিয়ে পরিশ্রম করেছি।
ওটিটিতে কাজের পর কি মনে হচ্ছে সিনেমা হলের মতো রেসপন্স আসে?
অসম্ভব, সিনেমা হলের রেসপন্স সবসময় আলাদা। এর কোনো বিকল্প নেই। ওটিটির কাজ দেখে মানুষ অনুভূতি লিখে জানাচ্ছে বা ফোনে করে বলছে। কিন্তু সিনেমা হলের রেসপন্স তো পাশাপাশি থেকে সরাসরি দেখা যায়। শিস বাজানো, তালি দেয়া, গালি দেয়া, নাচা এই অনুভূতিগুলো একেবারে অন্যরকম। এগুলো ওটিটি থেকে পাওয়া যায় না। চিন্তা করছিলাম এই ছবিটা যদি হলে রিলিজ হতো পাখির কান্না, খাবার খাওয়া, তার রিলিভ হওয়া, বাবু ভাইয়ের অভিনয় দেখে দর্শক কীভাবে রিয়েক্ট করতেন!
প্রায় এক যুগের ক্যারিয়ার আপনার। কখনও মনে হয়েছে আপনার অবস্থান আরও উঁচুতে থাকতে পারতো?
২০১০ সালে আমার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল থার্ডক্লাস ভাবে। আমার শুরুটা কোটি টাকার কাবিন, পোড়ামন ২, ভালোবাসার রঙ-এর মতো ছবিগুলো দিয়ে হয়নি। কিন্তু এসব ছবি দিয়ে যারা এসেছেন তারা আমার প্রতিযোগী। ২০১০ সালে মফঃস্বল থেকে যখন ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলাম চিন্তা ছিল সিনেমায় দেখা যাবে, শাকিব খানের সঙ্গে দৃশ্য আছে, একটা গান থাকবে এটাই অনেক। কিন্তু নায়িকা হওয়া, প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে যাওয়া এগুলো বুঝতে সময় লেগেছে। ‘ও আমার দেশের মাটি’ ছবি করার পর বুঝেছি ইন্ডাস্ট্রিতে টিকতে গেলে পরিশ্রম করতে হবে। ‘চলেন একটা মুভি করি’ টাইপের চিন্তা করলে ওই কাজগুলো কখনও টেকে না। টেকার জন্য অন্য ধরনের কাজ করতে হবে। বড় প্রোডাকশন থেকে ব্রেক পাইনি, স্ট্রাগল করে করে আজকে এই জায়গায় এসেছি। এখন আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, আমার সঙ্গে শুরু করেছিলেন অনেকেই ইন্ডাস্ট্রিতে নাই। শুরুতে যে জিনিসগুলো আমি পাইনি, এখন এসে পাচ্ছি। আশা করছি, ভবিষ্যতে আরও ভালো কাজ দিয়ে এগিয়ে যেতে পারবো।
শুনেছিলাম, আপনি প্রযোজনায় আসবেন…
প্রযোজক শব্দটা অনেক ওজনের। একজন প্রযোজকের অর্থের পাশাপাশি অনেককিছু জানতে হয়। যেটা আমার নামের সঙ্গে যায় না। ইচ্ছে ছিল ইনভেস্ট (বিনিয়োগ) করার। আমার পক্ষে কোটি টাকা দিয়ে সিনেমা বানানো সম্ভব না। ছোট ছোট বাজেটে তৌকীর ভাইয়ের মাধ্যমে প্রোডাকশন নির্মাণ করতে চেয়েছিলাম। তিনি ‘স্ফুলিঙ্গ’ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, আমেরিকা চলে গেলেন, কোভিডের নতুন ওয়েভ এলো, আমারও কিছু ব্যক্তিগত সময় খারাপ গেছে। আমার পিছনে এমন কেউ নেই যে উনি টাকা দেবেন আমি নিজের নামে চালিয়ে দেব। পুরোটাই নিজের উপার্জনের টাকা ব্যয় করতে চেয়েছিলাম। প্রথম কাজটি আমি করবো কিন্তু পরে নতুন সম্ভবনাময় যারা তারা কাজের সুযোগ পাবেন। এমনকি পুরনো যারা আছেন তাদের বেইজ করে ভালো ভালো কাজের ইচ্ছে আছে। এখন ওটিটির মার্কেট বেড়েছে। সে কারণে বিনিয়োগ ফেরত আসার সুযোগ বেশী। আমার প্রতিষ্ঠান থেকে ‘মির্জাস ক্রিয়েশন’ থেকে কাজ শুরু করবো। তবে মাসে মাসে নিয়মিত কাজ করা সম্ভব না। বছরে দু-একটা করতে পারি।
ফেসবুকে আপনার রিলেশনশিপ স্ট্যাট্যাসে দেখা যায় ‘সিঙ্গেল’…
আমার ব্যক্তিজীবনে কী আছে কেউ জানে না। হয়তো ওখানে সিঙ্গেল লেখা কিন্তু আমি সিঙ্গেল না…। অফিসিয়ালি কোনো কিছু জানাইনি। কাজের বাইরে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কোনো কিছু চিন্তা করছি না। ভালো কাজ করার সময় সুযোগ সব সময় আসে না। সুযোগ যেহেতু এখন এসেছে কাজে লাগাতে চাই। পরে যদি কখনও মনে হয় ব্যক্তিগত জীবন সামনে আনা উচিত কথা বলবো।