মাহে রমজান মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে উম্মতের জন্য একটি উপহার স্বরূপ। ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে একটি হল রোজা। আর পবিত্র রমজানুল মোবারাক হল এই রোজার জন্য নির্ধারিত মাস। এই মাসের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উপকারিতা এবং ব্যপ্তি রয়েছে। এই মাহে রমজানুল মোবারকের সংযম আমাদেরকে সারা বছরের সংযম এবং আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালার আনুগত্যে থেকে আমাদের সার্বিক বিষয়ে সচেতন হওয়ার শিক্ষা দেয়। শিক্ষা দেয় আমাদের সমাজ এবং রাষ্ট্রকে।
মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এই মাহে রমজানুল মোবারকের ব্যক্তিগত যে উপহার আছে তা তিনটি ভাগে বিভক্ত। আউয়ালুহু রহমাহ, আউসাফুহু মাগফিরাহ, ওয়া আখেরুহু আয়েতকুম মিনান নার। প্রথম দশদিন রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ হয়ে যত পাপ, দিলের যত ময়লা, চাতুর্য যা কিছু আছে তার সবকিছু ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে যায়। তার পরবর্তী দশদিনে অবশিষ্ট যা কিছু বাকি থাকে সেটিও পরিষ্কার হয়ে যায় এবং সর্বশেষ যে ১০দিন, সে ১০দিনের এত বেশি ফজিলত যে এই কয়দিনে যেন সকলেই জাহান্নাম থেকে চির মুক্তি পেয়ে জান্নাতের চির সুখময় এবং আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালার সন্তুষ্টির জায়গার অধিকারী হতে পারেন। প্রত্যেকেই জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
এই রমজানুল মুবারাকের মাঝে একটি রাত এমন থাকে, যে রাত্রি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কোরআন শরিফে বলেছেন, খাইরুম মিন আলফি শাহার। আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা বলেছেন, এই রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। তাই এই রাতটি মুসলমানদের জন্য ভাগ্য রজনী হিসেবে সম্মানিত। সেই রাতে যদি কেউ ইবাদত করে তাহলে তা হবে হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম। রমজানের এটি হলো ফজিলতের দিক।
আরেকটি হলো রমজানকে পরিপূর্ণ যেমনটা হওয়া দরকার ঠিক তেমনটা যেন আমরা রাখতে পারি। শাহারুল মুওয়াসাদ, অর্থাৎ একে অপরের বেদনা-সমবেদনা এবং উপকার এগুলো করার জন্য রমজান মাসে বিশেষ ফজিলত রয়েছে। আল্লাহর নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) নিজে রমজান মাসে অনেক বেশি দান করতেন। মানুষের কষ্ট লাঘব করার জন্য, অভাবী মানুষকে খাবার সাহায্যের জন্য যে মাসে দান সদকাহকে এত উৎসাহিত করা হয়েছে সেখানে আমাদের দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই সময়ে অসৎ ব্যবহার করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়। অথবা একটা কৃত্তিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করে।
সারা বছরই মুনাফাখোরি এবং অধিক লাভ করা বা এক ধরণের সিন্ডিকেট সৃষ্টি করা এটা শরিয়তের ভাষায়ও গর্হিত কাজ। এটি আল্লাহর নবী নিষেধ করেছেন। এটি রাষ্ট্রীয় ভাবে এমনকি নৈতিকভাবেও এটি গর্হিত কাজ। এ অভ্যাস আমাদের পরিহার করা দরকার। বিশেষ ভাবে রমজানুল মুবারক উপলক্ষে এ বিষয়টা আরো বেশি আমাদের লক্ষ্য রাখা দরকার।
বায়তুল মোকাররম, জাতীয় মসজিদের খতিব, হাফেজ মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন বলেছেন, ‘রমজানুল মুবারক উপলক্ষে ব্যবসায়ী ভাইদের বলবো, আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা অবশ্যই আপনাদের ব্যবসায় বরকত দেবেন। আপনাদের জন্য আমরা দোয়া করবো, আপনারা যদি মাহে রমজানুল মুবারক উপলক্ষে অতিরিক্ত মুনাফাখোরিটা বাদ দিয়ে একটু ছাড় দেন’।