মহান মুক্তিযুদ্ধে গাইবান্ধার আতঙ্কের নাম ছিল যুদ্ধাপরাধী মো. জাছিজার রহমান ওরফে খোকা। তিনি মানবতাবিরোধী কাজে সরাসরি অভিযুক্ত। তিনি যুদ্ধকালীন সময়ে রাজাকার, আলবদর এবং পিস কমিটির সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
র্যাব জানায়, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধী জাছিজার রহমান রাজাকার বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরা গাইবান্ধা সদরে হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট-অগ্নিসংযোগ, ভয়-ভীতিসহ আতঙ্ক ছড়িয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ধর্মান্তর ও দেশান্তরে বাধ্য করে। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন মানবতাবিরোধী কাজ করেছিলেন।
বৃহস্পতিবার ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দীর্ঘ ১৪ বছর পলাতক থাকার পর রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী জাছিজার রহমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-২।
শুক্রবার ১৭ ফেব্রুয়ারি র্যাব-২ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন খান চ্যানেল আই অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, ১৯৭১ সালের ১৮ অক্টোবর পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়ে জাছিজারসহ অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীরা গাইবান্ধার সদর এলাকার সাহাপাড়া ইউনিয়নের নান্দিনা গ্রামসহ মোট ৮ টি গ্রামের ১৪ জন নিরীহ মানুষকে মেরে ফেলেন। মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক, ইসলাম উদ্দিন ও নবীর হোসেনসহ ৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে গিয়েও হত্যা করেছে তারা। তিনিসহ অন্যান্য রাজাকাররা মোট ২১ জনকে হত্যা, শতাধিক বাড়ি-ঘর লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ এবং কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষের উপর নৃশংসভাবে হামলা চালায়। এছাড়া সাহাপাড়া ইউনিয়নের তিন থেকে চারশত সংখ্যালঘুকে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করেন জাছিজার।
এসব ঘটনায় ২০০৯ সালে হত্যা- গণহত্যা, ধর্ষণ, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট-অগ্নিসংযোগ, ভয়-ভীতি এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ধর্মান্তর ও দেশান্তরে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন মানবতা বিরোধী কাজে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেফতার আসামি জাছিজার রহমান ও তার বাবা মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডলসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
পরে আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দেন। এই আদেশের প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কর্তৃক একটি মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ (বাংলাদেশ) মামলা দায়ের হয়।
আসামির বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল মো. জাছিজার রহমান ওরফে খোকার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৯ সালের ১৫ অক্টেবর জাছিজার রহমান ওরফে খোকাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ প্রদান করেন ট্রাইব্যুনাল-১।
অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি মো. জাছিজার রহমান জানায়, ২০১৬ সাল পর্যন্ত জামিনে থাকার পর আদালতে জামিন নামঞ্জুর হলে তখন তিনি আত্মগোপনে চলে যায়। তিনি বিভিন্ন সময় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হাতে গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করতেন। তার ছেলেরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ায় তার প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তারা নিয়মিত অর্থ দিয়ে সহায়তা করতেন। এভাবেই তিনি পলাতক জীবনযাপন করে আসছিল।
জাছিজার রহমান ১৯৫৪ সালের ২২ এপ্রিল জন্ম গ্রহণ করে। ১৯৬৮ সালে গাইবান্ধার খোদ্দকোমরপুর হাই স্কুল হতে এসএসসি পাস করেন। তার বাবা যুদ্ধের সময় গাইবান্ধা ৪নং সাহাপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। যুদ্ধের সময় তিনি রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বিভিন্ন কাজে সহায়তা করেন।