রমজানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ইতেকাফ। ইতেকাফ অর্থ নির্দিষ্ট জায়গায় নিজেকে আবদ্ধ করে রাখা। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায়, মসজিদে শর্তসাপেক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজেকে আবদ্ধ রাখাকে ইতেকাফ বলে।
ইতেকাফ ইসলামী শরীয়তের নতুন উপাদান নয়, বরং ইসলামপূর্ব যুগেও বিদ্যমান ছিল। হাদিসে এসেছে, হজরত উমর ফারুক রাদিআল্লাহু আনহু জিজ্ঞেস করেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ! জাহেলী যুগে আমার একদিনের ইতেকাফ মান্নত করা ছিল। উত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে মান্নত পূরণের নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারী শরীফ, ইফা, হাদিস নং ২৯২৩)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসের মধ্যম এবং শেষ দশদিন ইতেকাফ করেছেন। শেষ দশদিন ইতেকাফ সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস শরীফ রয়েছে। হজরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের মধ্যম দশকে ইতেকাফ করতেন।
এক বছর এমন ইতেকাফ করেন, যখন একুশতম রাত এলো, যে রাতের সকালে তিনি তাঁর ইতেকাফ হতে বের হবেন। সেদিন তিনি বললেন: যারা আমার সঙ্গে ইতেকাফ করেছে তারা যেন শেষ দশক ইতেকাফ করে। আমাকে স্বপ্নে এই রাত (লাইলাতুল কদর) দেখানো হয়েছিল। পরে আমাকে তা (সঠিক তারিখ) ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অবশ্য আমি স্বপ্নে দেখতে পেয়েছি যে, ঐ রাতের সকালে আমি কাদা-পানির মাঝে সেজদা করছি। তোমরা তা শেষ দশকে তালাশ কর এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তালাশ কর। পরে এই রাতে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হল, মসজিদের ছাদ ছিল খেজুর পাতার ছাউনির। ফলে মসজিদে টপটপ করে বৃষ্টি পড়তে লাগল। একুশতম রাতের সকালে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কপালে আমি কাদা-পানির চিহ্ন দেখতে পেয়েছি। (বুখারী শরীফ, ইফা, হাদিস নং ১৯০০)
হাদিস শরীফ থেকে শেষ দশকে ইতেকাফের ফজিলত অত্যন্ত সুস্পষ্ট। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্য দশকের ইতেকাফ করেছিলেন সাহাবায়ে কেরাম নিয়ে। যেদিন ইতেকাফ থেকে বের হবেন তার পূর্বমুহূর্তে তাঁকে লাইলাতুল কদরের ব্যাপারে নিদর্শন দেখানো হয়েছে। তখনই তিনি ঘোষণা দিলেন যে, “যারা আমার সঙ্গে ইতেকাফ করেছে তারা যেন শেষ দশক ইতেকাফ করে” ; কিন্তু কেন? কারণ, “আমাকে স্বপ্নে এই রাত (লাইলাতুল কদর) দেখানো হয়েছিল। পরে আমাকে তা (সঠিক তারিখ) ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অবশ্য আমি স্বপ্নে দেখতে পেয়েছি যে, ঐ রাতের সকালে আমি কাদা-পানির মাঝে সেজদা করছি। তোমরা তা শেষ দশকে তালাশ কর এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তালাশ করো”। অর্থাৎ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশকে ইতেকাফ করেছিলেন লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য।
শেষ দশকে ইতেকাফের মূল ফজিলত এইখানে। যখন একজন বান্দা ইতেকাফে বসবেন সে সদাসর্বদা ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। ফলে বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ করা তাঁর জন্য অনেক সহজ হবে। আর লাইলাতুল কদর নসীব হওয়া যে কোনো বান্দার জন্য খোশনসীবের ব্যাপার। কারণ লাইলাতুল কদরের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন: “লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও জিব্রাইল তাঁদের রবের অনুমতিক্রমে অবতীর্ণ হয়। শান্তিময় সেই রাতের মেয়াদ ফজরের আগ পর্যন্ত।” (৯৭:৩-৫)
লাইলাতুল কদরের ফজিলত ছাড়াও ইতেকাফের আরও তাৎপর্য রয়েছে। যেমন: যে ব্যক্তি যতদিন ইতেকাফে থাকবেন ততদিন তিনি সব ধরনের গুনাহ থেকে হেফাজতে থাকবেন। সকল ফেতনা ফাসাদ থেকে দূরে থাকতে পারবেন। তাঁর দ্বারা কারো ক্ষতি হবে না। অর্থাৎ, সব ধরনের গুনাহ থেকে বিরত থেকে নীরবে নিভৃতে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল হওয়ার জন্য ইতেকাফ প্রতিটি মুসলমানের জন্য জরুরী বিষয়।
রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করা সুন্নত। তাই শেষ দশকের ইতেকাফে লাইলাতুল কদরের ফজিলত হাসিলের পাশাপাশি সুন্নত আদায়ের ফজিলতও ইতেকাফকারীর নসীব হবে, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে কবুল করুক।