ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। বাংলাদেশ বিজয়ের ৫৩ বছরে পদার্পণ করলো। তাই বিজয় পতাকা ছিনিয়ে আনার জন্য প্রতিবারের মত এবারেও দেশের সর্বস্তরের জনগণ সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করলো তাদের অসামান্য অবদানকে।
যদিও এই বিজয় অর্জনের মূল লক্ষ্য ছিল মুক্তিকামী মানুষের স্বাধীনতা তথা একটি নতুন দেশের সূচনা। কিন্তু আজ সেই স্বাধীনতা রক্ষার্থে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিনিয়তই লড়াই করতে হচ্ছে স্বাধীন বাংলার জনগণকে।
সজাগ থাকতে হচ্ছে কিছু দেশবিরোধী মানুষের চক্রান্তের বিরুদ্ধে যারা সুযোগ খুঁজে বেড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমনকি গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে মিছিল-মিটিংয়ের নামে জনগণের জানমালের ক্ষতি তথা দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে এবং তারই অংশবিশেষে বারবার আক্রমণের শিকার হচ্ছেন সাধারণ জনগণ। অথচ, এই বিজয়ের মূলমন্ত্র ছিল খেটে খাওয়া মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতকরণে একত্রিত হয়ে কাজ করা।
১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধে ৩০ লক্ষ বাঙালি ও সরকারি হিসেবে ২ লক্ষ (বেসরকারি হিসেবে ৫ লক্ষ) মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বিশ্ব দরবারে পরিচিত পায় একটি নতুন দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু সে স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে বারবার বাধা আসে দেশবিরোধী কতিপয় গোষ্ঠী থেকে।
অথচ, এ সোনার বাংলা অর্জনের জন্য অকপটে প্রাণ দিয়ে গেছেন দেশের সর্বস্তরের জনগণ, পাশবিক নির্যাতনের শিকার ও মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন দেশের অসংখ্য মেধাবী বাঙালি। বিশেষত শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ক্রীড়াবিদ, চিত্রশিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী ও চলচ্চিত্রকার প্রমুখ। মূলত, বাংলাদেশ যাতে স্বাধীনতা লাভ করলেও মাথা ঘুরে যেন আর দাঁড়াতে না পারে সেজন্যই স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিতি প্রাপ্তির ঠিক দুই দিন আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পাশবিক নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয় যা বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে পরবর্তীতে বিবেচিত হয়।
মুক্তিকামী মানুষের স্বাধীনতা অর্জন মূল উদ্দেশ্য হলেও মূলত বিভিন্ন দিক থেকে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর অবমূল্যায়নের পুনরুদ্ধারই ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
জাতিসংঘের এক সাধারণ সভায় তাই তিনি বলেছিলেন, “বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত; একদিকে শোষক, অন্যদিকে শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে”। আর তার এই বক্তব্যের প্রতিফলন দেখা যায় তারই যোগ্য উত্তরাধিকার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার মধ্যে। তাইতো তিনি নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশকে অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করে বিশ্ব নেত্রীর জায়গায় নিজ আসন অলংকৃত করেছেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা করোনাকালীন সময়েও দেশকে উন্নয়নের পথে ধাবিত করেছেন। আর এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে এমনকি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে তাই এবারের নির্বাচনে সকল ভোটারকে উপস্থিত হয়ে ভোট প্রদান করে একটি স্থিতিশীল সরকার গঠণে ভূমিকা রাখতে হবে। অন্যথায়, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে স্বাধীন বাংলাদেশকে পুনরায় ছোঁবল মারতে।
তাই, এবারের বিজয়ের দিবসে আমাদের সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একত্রে কাজ করতে হবে দেশ মাতৃকার উন্নয়নে যাতে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ ত্বরান্বিত হয়। বিশেষ করে বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে এ ব্যাপারে আরও বেশি উদ্যোগী ও স্ব স্ব ভূমিকা পালনে সচেষ্ট হতে হবে যেন আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে যাতে কোন পরাশক্তি ভূলুন্ঠিত করতে না পারে।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শে সুখী-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণই হোক এবারের বিজয় দিবসের অঙ্গীকার। অন্যথায়, মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত মহান বিজয় ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা নির্মাণ বাধাগ্রস্থ হতে পারে। বর্তমান সরকার গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নয়নে যে ভূমিকা রেখে চলেছে তাতে করে এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে একটি ধারাবাহিক সরকারের বিকল্প নেই। এতে করে বাংলাদেশের ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়ন সম্ভবপর হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন অব্যাহত রাখতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে বলে আমার বিশ্বাস।
তাই আসুন, সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশমাতৃকার উন্নয়নে কাজ করি যাতে স্বাধীন বাংলাদেশ অচিরেই সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হয়।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)