বায়েজিদ আহমেদ:
সরকারের ভিশন হলো ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা। এক্ষেত্রে স্টার্টআপ শিল্পই পারে লক্ষ্যে পৌঁছতে ভীষণভাবে সহায়তা করতে।
কেস স্টাডি এক:
মহাখালীতে অফিস শেষ করে নিচে নেমে অপেক্ষা করছি বাসের জন্য। রাস্তায় ভীষণ জ্যাম দেখে রাইড শেয়ারিং অ্যাপসের মাধ্যমে ফোন করি একজন বাইক ড্রাইভারকে। দ্রুত বাইক নিয়ে হাজির হন মধ্যবয়সী একজন বাইকার। দেখতে বেশ স্মার্ট ও ফিটফাট। তাড়াহুড়ো না করে ঠান্ডা মাথায় বাইক চালানোর অনুরোধ করে তার পেছনে বসে রওনা দেই ইন্দিরা রোডের গন্তব্যে। পথে যেতে যেতে বিভিন্ন সিগন্যালে গাড়ি থেমে থাকার সুযোগে ড্রাইভার আমার সঙ্গে গল্প জুড়ে দেন। নাম-ধাম জেনে কৌতুহলবশত জিজ্ঞেস করি এটি তার পেশা কি না ? উত্তরে জানালেন তার চাকরি জীবনের করুণ কাহিনী।
মুহিবুল আলম নামের এই যুবকের বাড়ি দেশের সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরায়। জন্ম, বেড়ে ওঠা ও পড়াশোনা সেখানেই। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে যোগ দেন বাগেরহাটের একটি সৌরবিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানে। সেখানেই পরিবার নিয়ে থাকতেন। সবকিছু বেশ ভালোই চলছিলো। কিন্তু ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে হানা দেয় করোনা ভাইরাস। বাংলাদেশেও এর আঁচড় লাগে মারাত্বকভাবে। অনেক মানুষের মৃত্যু হয়, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। অসংখ্য কোম্পানি ঠিকমতো বেতন দিতে না পারায়, কর্মী ছাঁটাই শুরু করে। মুহিবুল আলমেরও চাকরি চলে যায় ওই সময়।
হঠাৎ মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। চাকরি হারিয়ে দিশেহারা। সংসারে থাকা স্ত্রী, এক সন্তান ও মাকে নিয়ে পড়েন অথৈ সাগরে! কারণ, তার রোজগারে যে চলে চারজনের সংসার। কিন্তু মুহিবুল দমে যাওয়ার পাত্র নন; তাকে জীবন যুদ্ধে জিততেই হবে! অগত্যা শুরু হয় নতুন যুদ্ধ। ঐ সময় রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো হয়ে যায় চাকুরিচ্যুত ও কর্মহীন মানুষের নতুন ঠিকানা, ভরসার জায়গা। জীবিকার তাগিদে করোনার মধ্যে ঢাকায় মটর সাইকেল কিনে রাইড শেয়ার করতে থাকেন মুহিবুল। উবার ও পাঠাও-এর কর্মী হিসেবে সারাদিন রাজধানীর এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে চলে ছুটোছুটি। দিনশেষে উবার ও পাঠাওকে কমিশন দিয়ে যা থাকে, তাই দিয়ে সংসার চালানো শুরু করেন।
মুহিবুলের মতো হাজারো কর্মহীন বিভিন্ন বয়সী মানুষ রাইড শেয়ারিংকে পেশা হিসেবে নেয়া শুরু করেন, যা তারা এখনও করে যাচ্ছেন। কথায় কথায় মুহিবুল জানান, করোনা মহামারি থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হলেও রাইড শেয়ারিংকে তিনি এবং তার মতো জীবন যুদ্ধে হোচট খাওয়া অসংখ্য মানুষ পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। বর্তমানে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পাঠাওয়ের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে কয়েক লাখ মানুষের।
কেস স্টাডি দুই:
সোহাগ মাতুব্বর নামের এক যুবক কাজ করতেন একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে। ২০২০ সালে করোনার ভয়ংকর থাবায় চাকরি হারায় সে। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তার! কাঁধে যে সংসারের বিরাট বোঝা। সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তান, স্ত্রী এবং শাশুড়িকে নিয়ে পথে বসার মতো অবস্থা! কোন কিছু বুঝে উঠতে পারছিলেন না। পরে জানতে পারেন মোকাম নামের একটি বিটুবি (বিজনেস টু বিজনেস) কমার্স কোম্পানিতে রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে বিপণন সহায়ক কর্মকর্তা পদে লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। মূলত মোকাম হলো শপআপ নামের একটি বড় স্টার্টআপ কোম্পানির (২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত) একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যারা সারাদেশে মুদি দোকানের মাধ্যমে ৩ দশমিক ১ কোটি মানুষের কাছে খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করে।
সাত-পাঁচ না ভেবে সোহাগ মাতুব্বর মোকামের বিপণন সহায়ক কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি পেতে পরীক্ষা দেয়। উত্তীর্ণ হয়ে নতুন জীবন খুঁজে পায়! সে চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসতো। মোকামে ঢোকার পর কাজের পাশাপাশি নিজের দক্ষতা বাড়াতে প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ স্কিলড ট্রেনিং বিভাগ ‘পাঠশালা’তে যুক্ত হন। সেখানে ডিস্ট্রিবিউশন প্ল্যানিং এবং প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ নিয়ে দ্রুত নিজেকে বদলে ফেলেন। রাতারাতি তার পারফর্মেন্সে মুগ্ধ হয় মোকাম কর্তৃপক্ষ। কঠিন পরিশ্রমের ফল হিসেবে সোহাগ মাতুব্বরের প্রমোশন হয় ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম-এমআইএস অফিসার হিসেবে। বর্তমানে মহাখালীতে এসকেএস টাওয়ারে মোকামের প্রধান কার্যালয়ে কাজ করছে সে। পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ফরিদপুরে রাজেন্দ্র কলেজে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করছে জীবনের কাছে হার না মানা এই কর্মবীর! সোহাগের মতো অসংখ্য যুবকের ঠিকানা এখন স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলো।
স্টার্টআপ শিল্পে কারা কাজ করছে ?
বর্তমানে দেশীয় পণ্যের চাহিদা, জোগান এবং কর্মসংস্থান তৈরিতে কাজ করছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে নির্মিত অসংখ্য স্টার্টআপ। এর মধ্যে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে আছে উবার, পাঠাও, ও-ভাইসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। খাবার ও নিত্য পণ্য সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে শপআপ, চাল-ডাল, সিন্দাবাদ, ফুড প্যান্ডা বেশ এগিয়ে। অনলাইন মার্কেট প্লেসের মধ্যে দারাজ, মোনার্ক মার্ট ও পিকাবু প্রথম সারিতে। কুরিয়ার বা লজিস্টিকস সাপোর্ট সার্ভিস হিসেবে রেডএক্স, পাঠাও, ট্রাক লাগবে, স্টেডফাস্ট বেশ ভালো ব্যবসা করছে। অন্যদিকে, স্বাস্থ্যখাতের স্টার্টআপগুলোর মধ্যে প্রাভা হেলথ, আরোগ্য, ডক টাইম অন্যতম। আর বই সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে রকমারি এবং অনলাইন শিক্ষার প্লাটফর্ম টেন মিনিট স্কুল, শিখোসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বেকার ও কর্মহীন তরুণ-তরুণীদের জব মার্কেট তৈরি করে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে কার্যকর ভ‚মিকা পালন করছে।
স্টার্টআপগুলোর কাজের ধরন :
স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের তথ্য বলছে-দেশে প্রায় ১২ লাখ মানুষ সরাসরি স্টার্টআপ শিল্পের সাথে জড়িত। বর্তমানে রয়েছে ১২ শ’র বেশি উদ্যোগ। উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগই বয়সে তরুণ, মেধাবী, চৌকস এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শী। টেকনোলজি এবং বিজনেস আইডিয়ার দারুণ মিশেলে যাদের রয়েছে চোখ ধাঁধানো পারফরমেন্স। দেশকে আমূল বদলে দেওয়ার সংকল্পে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ লাখো উদ্যোমী তরুণ-তরুণী। তারাই গড়ছে আগামীর বাংলাদেশ!
স্টার্টআপ শিল্পের বিকাশে বিগত ১৩ বছরে ৯৪০ মিলিয়ন ডলারের বিদেশি অর্থের বিনিয়োগ হলেও তা ছিলো অপ্রতুল। গত এক যুগেরও বেশি সময়ে দেশে ৫ লাখের বেশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। তথ্য বলছে, তরুণদের অদম্য স্পৃহা ও অজেয় শক্তির কারণে স্টার্টআপ খাত একটু একটু করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। গাড়ি থেকে গৃহস্থালী সেবা অর্থাৎ খাবার, পণ্য, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, সামাজিক সমস্যা, কৃষি, টেকনোলজি, আর্থিক ও নানা সমস্যার যৌক্তিক সমাধানের পাশাপাশি অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে এই শিল্প।
শিল্পের মূলধন :
স্টার্টআপগুলোকে সহযোগিতা দিতে ৫০ কোটি টাকার মূলধন নিয়ে ২০২০ সালে সরকারি উদ্যোগে যাত্রা শুরু করে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবিত তহবিল ৫০০ কোটি টাকা। তবে, বেসরকারি পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান যেমন সৃষ্টি হবে, তেমনি অসংখ্য মানুষের রুটি-রুজির ব্যবস্থাও হবে।
দেশে স্টার্টআপ শিল্পে কর্মসংস্থানের চিত্র :
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শেষ তথ্য বলছে-শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ। এর মধ্যে ১৬ লাখ ৭০ হাজার পুরুষ এবং ৮ লাখ ৩০ হাজার নারী। (ডয়চে ভেলে, ২৭ আগস্ট ২০২৩) যদিও ২০২০ সালে করোনাকালে বেকারের সংখ্যা ছিলো শতকরা ৫.২১ ভাগ। অথচ ২০১৯ সালে ওই সংখ্যা ছিলো শতকরা ৪.৩৮ ভাগ। করোনা মহামারির বিরাট ধাক্কা কিছুটা সামলে বর্তমানে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তবে ডিজিটাল জেনারেশনের স্মার্ট ও প্রযুক্তিনির্ভর ছেলে-মেয়েদের সাথে নিয়ে আরও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করতে স্টার্টআপ শিল্প প্রতিষ্ঠায় সামর্থ্যবান উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার বিকল্প নেই।
স্টার্টআপ কোম্পানি পাঠাও বলছে, ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটির জন্মের পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে তারা ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। কারণ তাদের রয়েছে রাইড শেয়ারিং, ফুড ডেলিভারি এবং কুরিয়ার বা লজিস্টিকস সার্ভিস। (ঢাকা ট্রিবিউন, ৩০ জুলাই ২০২৩) অন্যদিকে, দেশের সবচেয়ে বড় বিটুবি রিটেইল বিজনেস মোকাম এবং অন্যতম বড় লজিস্টিকস সার্ভিস প্রতিষ্ঠান রেডএক্সের মাদার প্রতিষ্ঠান শপআপের সারাদেশে জনবল রয়েছে প্রায় ৭ হাজার। এর মাধ্যমে বর্তমানে প্রায় ৩ কোটি ১০ লাখ মানুষের কাছে খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করছে। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ২০২৬ সালের মধ্যে দেশের প্রায় ৮ কোটি মানুষের কাছে এসব পণ্য পৌঁছে দেওয়া। (প্রথম আলো, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩)
দেশের সবচেয়ে বড় ফিনটেক প্রতিষ্ঠান বিকাশ। স্টার্টআপ হিসেবে ২০১০ সালে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে জনবল প্রায় ৩ হাজার (স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে)। সারাদেশে ডিস্ট্রিবিউটর আছে ২০০ জন। এজেন্ট বা বিজনেস পার্টনার ৩ লাখ, আর মার্চেন্ট বা দোকানদার আছে ৬ লাখের বেশি। অন্যদিকে, ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন নগদে স্থায়ী কর্মী আছে ৮০০ জনের মতো, সেলস অফিসার হাজার দশেক আর দেশব্যাপী এজেন্ট আছে ২ লাখ ৭০ হাজার জন। তবে, সারাদেশে বিকাশের এজেন্টরা নগদের বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করছে। তাই বলা যায়, স্টার্টআপ শিল্পে কর্মসংস্থানের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
স্টার্টআপ শিল্পের চ্যালেঞ্জ!
বিশ্বজুড়ে স্টার্টআপের উত্থান যেমন ঘটেছে, তেমনি বাংলাদেশের স্বপ্নবাজ তরুণ জেনারেশন প্রযুক্তিনির্ভর স্টার্টআপ ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার মাধ্যমে একটা পরিচিতি পেয়েছে। স্টার্টআপ একদিকে যেমন এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনি এর বিকাশে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই বাধা দূর করে সামনে এগিয়ে যেতে পারলে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাছে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।
বর্তমান সরকারের লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে ৫টি উইনিকর্ন (কমপক্ষে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের স্টার্টআপ কোম্পানিকে ইউনিকর্ন বলা হয়) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০টি ইউনিকর্ন স্টার্টআপ তৈরিতে সহায়তা করা। এটি যত দ্রæত বাস্তবায়ন হবে, তত দ্রæত ব্যাপক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন ?
স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ বলেন, স্টার্টআপ শিল্পের বিকাশে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছেন। চলতি বছরের ২৯ জুলাই হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত স্টার্টআপ সামিট উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই শিল্পের জন্য একটি ফান্ড গঠন করে দিয়েছেন। সামি আহমেদের মতে, তারা খুবই ভাগ্যবান যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যখনই স্টার্টআপ নিয়ে কোন কাজে যাওয়া হয়, তিনি তা অনুমোদন করে দেন। এই খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকারের কাছ থেকে সব ধরনের সহায়তা পাচ্ছেন বলে যোগ করেন সামি আহমেদ।
স্টাটআপ সামিটে প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, ‘‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেটের ব্যবহার, বøকচেইন, রোবোটিক্স, বিগ ডেটা, মেডিকেল স্ক্রাইব এবং সাইবার সিকিউরিটির মতো উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করতে হবে।’’ এতে করে সহজেই বোঝা যায়, সরকার এই খাতের উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যাপক আন্তরিক।
এদিকে, দেশের প্রখ্যাত ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিশেষজ্ঞ শওকত হোসেনের মতে, সরকারের ঘোষিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বড় স্টেক হোল্ডার হতে পারে স্টার্টআপ শিল্প। এই ইন্ড্রাস্ট্রির টেকসই বিকাশে জরুরি ভিত্তিতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। এগুলো হলো :
- অনিবন্ধিত কোম্পানিগুলোকে দ্রুত নিবন্ধন দেওয়া
- আইপি নিবন্ধন পদ্ধতি সহজ করা
- স্টার্টআপ খাতে সঠিক ও যৌক্তিক বিনিয়োগ করতে নীতিমালা প্রণয়ন করা
- স্টাটআপগুলোকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা
- বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া
- সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসা
- বিনিয়োগ পদ্ধতি সহজ করা
- তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ, উদ্যোমী ও প্রযুক্তিবান্ধব কর্মী তৈরি করা
- অ্যাঞ্জেল ও কর্পোরেট ইনভেস্টরের সংখ্যা বাড়াতে অনুক‚ল পরিবেশ সৃষ্টি
- বাজেটে স্টার্টআপ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো
- ইন্টারনেট সেবায় স্থিতিশীলতাসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন
- গ্রামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবা প্রদান
- কর্পোরেট ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং স্টার্টআপ ফ্রেন্ডলি শিল্প তৈরির দিকে মনোযোগি হওয়া
- স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডকে আরও ফান্ড দেওয়া যাতে প্রতিষ্ঠানটি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে পারে
- স্টার্টআপে বিনিয়োগকারিদের ট্যাক্স বেনিফিট দেওয়া
- বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ইতিবাচক ভূমিকা পালন করা। নতুন কোন স্টার্টআপ মার্কেটে আসলে তাকে আর্থিক সাপোর্ট দেওয়া
জায়ান্ট স্টার্টআপগুলোর স্ট্র্যাটেজিক অ্যালায়েন্স বাড়ানো - বড় কোম্পানির উচিত ধুঁকতে থাকা অপেক্ষাকৃত ছোট ও নতুন স্টার্টআপকে অ্যাকুয়ার করা
তাই ফিনটেক, রিটেইল, লজিস্টিকস অ্যান্ড মবিলিটি, এগ্রিটেক, এনার্জিটেক, হেলথটেক, ই-কমার্স, কনজ্যুমার সার্ভিস, সফটওয়্যার, টেকনোলজি এবং এডুটেকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তাহলেই দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিরাট পরিবর্তন আসবে। ২০২৫ সালের মধ্যে সঠিক নীতিমালা করে দ্রুত বাস্তবায়ন করা গেলে জিডিপিতে স্টার্টআপ খাতের অবদান শতকরা ২ শতাংশে নিয়ে আসা সম্ভব। দেশীয় স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো সফল হলে তারাই ভবিষ্যত অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করবে, নিয়ে যাবে বহুদূর!