করোনা মহামারী সংকট কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বিশ্ব দাঁড়ালো আরেকটি যুদ্ধের মুখে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। সপ্তাহ পেরিয়ে মাস, আর আজ এক বছর পূর্ণ হলো। বরাবরের মতো জাতিসংঘ রুশ সেনাদের ইউক্রেন ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতিসংঘ একটি ভোটের আয়োজন করে। ভোট শেষে রাশিয়াকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে ইউক্রেন থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি জানান জাতিসংঘ। এছাড়াও একটি ‘ন্যায় ও স্থায়ী’ শান্তির আহ্বান জানানো হয়।
জাতিসংঘের ভোটে ইউক্রেন জোরালো সমর্থন অর্জন করে। যেখানে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ১৪১ টি দেশ ইউক্রেনকে সমর্থন জানায়। আর সাতটি দেশ ভোট দেয় তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও চীন ও ভারতসহ ৩২ টি দেশ ভোট দানে বিরত ছিল।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, আজ, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ স্পষ্টভাবে বলছে, এই ভোটের মাধ্যমে প্রমাণিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘ভাল এবং মন্দের মধ্যে’ বেছে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দু’দিনের বিতর্কের পর ভোটের ফলাফল আসে। এছাড়াও তিনি এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করেন যে, কিয়েভ শুধুমাত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের প্রধান মিত্রদের অর্থাৎ পশ্চিমাদের সমর্থন পাচ্ছে।
কুলেবা বলেন, ভোটের ফলাফল এই যুক্তিটিকে অস্বীকার করে যে গ্লোবাল সাউথ ইউক্রেনের পক্ষে দাঁড়ায় না, কারণ ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী অনেক দেশ আজ ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিয়েছে।
এদিকে ভোটভুটিতে পাস হওয়া প্রস্তাবে ইউক্রেনের ‘সার্বভৌমত্ব’ এবং ‘আঞ্চলিক অখণ্ডতা’ এর পক্ষে সমর্থন পুনঃনিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া রুশ দখলে চলে যাওয়া ইউক্রেনীয় অংশগুলোতে রাশিয়ার যে কোনও দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে ওই প্রস্তাবে।
একইসঙ্গে এই প্রস্তাবে ‘রাশিয়ান ফেডারেশনকে অবিলম্বে, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানার মধ্যে ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে তার সমস্ত সামরিক বাহিনীকে সম্পূর্ণ এবং নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করার’ দাবি করার পাশাপাশি ‘শত্রুতা বন্ধ করার’ আহ্বানও জানানো হয়েছে।
এর আগে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে আরও একবার জোরালো ভাষায় আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব। এই যুদ্ধ ইউরোপ এবং সারা বিশ্বকে কতটা বিপদগ্রস্ত করে তুলেছে তা তুলে ধরার চেষ্টা করেন তিনি।
যুদ্ধের এক বছর পূর্তির একদিন আগে বুধবার রাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভায় ভাষণে অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেন, এই যুদ্ধ ‘আঞ্চলিক অস্থিরতা’ উসকে দিচ্ছে এবং সেই সাথে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা এবং বিভেদ সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, আর এ কারণে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সংকট সমাধানের ওপর থেকে নজর এবং সম্পদ সরে যাচ্ছে। গুতেরেস হুঁশিয়ার করেন, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের পরোক্ষ হুমকির কথাও উচ্চারিত হচ্ছে। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে সরে আসার এখন উপযুক্ত সময়।