চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

পৃথিবীর শীর্ষ দশ চলচ্চিত্র উৎসব: চলতি বছরে বাংলাদেশের অর্জন

লন্ডন ফিল্ম উইক এর তালিকা

সিনেমাপ্রেমীরা সারাবছর থাকেন চলচ্চিত্র উৎসবের অপেক্ষায়। সশরীরে যেতে না পারলেও প্রিয় তারকা বা নির্মাতার সিনেমার প্রিমিয়ার, সিনেবোদ্ধাদের রিভিউ, লাল গালিচায় তারকাদের হাঁটার অপেক্ষায় থাকেন তারা। কোন ছবিটি সেরার পুরস্কার জিতে নিবে সেটা নিয়েও চলতে থাকে জল্পনা-কল্পনা। বছর ঘুরে ফিরে আসে এসব উৎসব, সঙ্গে সিনেমাপ্রেমীদের উত্তেজনা।

বিশ্বে এই মুহূর্তে ৫ হাজারের বেশি চলচ্চিত্র উৎসব রয়েছে। তারমধ্য থেকে গুণ মান বিচার বিশ্লেষণ করে বিশ্বের সবচেয়ে দাপুটে দশ চলচ্চিত্র উৎসবের তালিকা প্রকাশ করেছে লন্ডন ফিল্ম উইক।

বাংলাদেশি সিনেমাপ্রেমীদের জন্য এ বছরটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ‘লন্ডন ফিল্ম উইক’ এর তালিকাভুক্ত মর্যাদাপূর্ণ ১০ চলচ্চিত্র উৎসবের তিনটিতে এ বছর মোট ৪ টি বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে! এরমধ্যে একটি চলচ্চিত্র কান ও বুসানে নির্বাচিত হয়েছে। যা যে কোনো দেশের সিনেমার জন্য অত্যন্ত গৌরবের।

এরমধ্যে প্রথম চমক আসে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের দ্বিতীয় ছবি ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ এর হাত ধরে। এই ছবিটি বাংলাদেশের সিনেমার জন্য বিরল যোগ! কান চলচ্চিত্র উৎসবের মতো শীর্ষস্থানীয় চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের সিনেমা হিসেবে প্রথম অফিশিয়ালি (আঁ সার্তে রিগা) এন্ট্রি নেয়ার গৌরব অর্জন করে  ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। এরআগে কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’র প্যারালাল বিভাগ ‘ডিরেক্টরস ফোর্টনা্ইট’-এ মনোনয়ন ও পুরস্কার পাওয়া।

এ বছর লন্ডন উইকের তালিকায় থাকা ‘বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’-এও প্রথমবারের মতো ৩টি বাংলাদেশি চলচ্চিত্র জায়গা করে নেয়ার মতো বিরল ঘটনার সাক্ষী হলো দেশের সিনেমাপ্রেমীরা। এরআগে এই উৎসবে বিভিন্ন সময়ে পৃথক পৃথকভাবে নির্বাচিত হয়েছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, আবু শাহেদ ইমন, রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত সহ বেশ কয়েকজন চলচ্চিত্র নির্মাতার ছবি। কিন্তু এ বছর একসাথে তিনটি সিনেমা নির্বাচিত হয় বুসানে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’, আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ এবং মোহাম্মদ রাব্বি মৃধা ‘পায়ের তলায় মাটি নাই’।

বছরে শেষে এসে বাংলা চলচ্চিত্রে আরো দারুণ খবর নিয়ে এলেন ‘শুনতে কি পাও!’ খ্যাত নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন। তার নির্মিত তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘অন্যদিন…’ প্রধান বিভাগে প্রতিযোগিতা করবে নন-ফিকশন ছবির জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র উৎসব ‘আন্তর্জাতিক ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র উৎসব আমস্টারডাম’ (ইডফা) এ। বাংলাদেশি সিনেমার জন্য এমন দুর্দান্ত মুহূর্ত যা আগে আসেনি! যদিও একই উৎসবে এরআগে কামারের প্রথম সিনেমা ‘শুনতে কি পাও!’ অফিশিয়াল আমন্ত্রণ পেয়েছিলো।

‘লন্ডন ফিল্ম উইক’ এর তালিকায় পৃথিবীর শীর্ষ দশ চলচ্চিত্র উৎসব:

১. কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব: পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক চলচ্চিত্র উৎসব এটি। সবচেয়ে ব্যস্ত চলচ্চিত্রের মার্কেট এখানেই বসে। প্রিমিয়ার হয় বিশ্বের নামী সব নির্মাতার ছবি। সাধারণ দর্শক ছাড়াই প্রতি বছর এই উৎসবে প্রায় ৩০ হাজার সিনে সংশ্লিষ্ট মানুষেরা উপস্থিত থাকেন।

২. টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব: ১৯৭৬ সাল থেকে শুরু হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র উৎসবগুলোর মাঝে অন্যতম টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। সম্মানজনক এই উৎসবে পুরো বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে নির্মাতা, শিল্পী, বিনোদন সাংবাদিকরা অংশ নেন। উত্তর আমেরিকার ফিল্ম মার্কেট হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই উৎসব।

 ৩. ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব: ১৯৩২ সালে কাউন্ট জুজেপ্পে ভল্পি-এর হাত ধরে শুরু হয় ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। সেই থেকে প্রতি বছর আগস্ট এর শেষে অথবা সেপ্টেম্বর এর শুরুতে ভেনিসের লিডো দ্বীপে এই উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে।

৪. বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব: বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব বার্লিনেল নামেও পরিচিত। বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব এটি। প্রতি বছর জার্মানির বার্লিন শহরে অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবটি ১৯৫১ সালে পশ্চিম বার্লিন শহরে প্রথম অনুষ্ঠিত হয় এবং পরে ১৯৭৮ সাল থেকে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে আয়োজিত হয়। এই উৎসবে প্রতি বছর প্রায় ৪০০টি সিনেমা দেখানো হয়। বিক্রি করা হয় লাখের বেশি টিকেট।

৫. সানড্যান্স চলচ্চিত্র উৎসব: আমেরিকার স্বাধীন চলচ্চিত্রের উৎসব এটি। উৎসবে বিশ্বের নানা দেশের স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের তৈরি ছবি প্রদর্শন করা হয়। শিল্পী-নির্মাতাদের মাঝে বন্ধন গড়ে ওঠে। একে অপরের মাঝে মেধা খুঁজে নেয়, আলোচনায় মাতে।

৬. আন্তর্জাতিক ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র উৎসব আমস্টারডাম (ইডফা): নন-ফিকশন ছবির জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রগুলো উপস্থাপন করার জন্য চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে দুনিয়াজোড়া খ্যাত আন্তর্জাতিক ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র উৎসব আমস্টারডাম (ইডফা)। দুই শতাধিক ছবি দেখানো হয় ১২ দিনের এই উৎসবে, যেখানে টিকেট কেটে ছবি দেখতে আসেন এক লাখ বিশ হাজারের বেশি দর্শক।

৭. ক্লেরমন্ট-ফেরান্ড স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসব: স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় উৎসব এটি। ফ্রান্সে কান চলচ্চিত্র উৎসবের পরে এটিই সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র উৎসব। দর্শক ও ফিল্ম প্রফেশনালদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে এই উৎসব।

৮. ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল রোটারডাম: নতুন নির্মাতাদেরকে নতুন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য উৎসাহিত করে এই উৎসব। উৎসবে ৩ লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেয়। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা ২০০০ এর বেশি ফিল্ম প্রফেশনাল উপস্থিত থাকেন। ২৫০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং ২০০টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অংশ নেয় এই উৎসবে।

৯. সাউথ বাই সাউথ ওয়েস্ট: মিউজিক ফেস্টিভ্যাল, ইন্টারেক্টিভ মিডিয়া, সিনেমা, সব একসাথে পাওয়া যায় এই উৎসবে। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে টেক্সাসেস অস্টিনে বসে এই আসর। ১৯৮৭ সালে শুরু হওয়া এই উৎসবের জনপ্রিয়তা প্রতি বছরই বাড়ছে।

বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’ এর পোস্টার

১০. বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব: প্রতি বছর দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান শহরের হেউন্দে বীচ সংলগ্ন এলাকায় এই চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯৬ সালের ১৩ থেকে ২১ নভেম্বর প্রথম অনুষ্ঠিত এই চলচ্চিত্র উৎসব কোরিয়ার প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। বর্তমানে এই চলচ্চিত্র উৎসব এশিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব হিসেবে বিবেচিত হয়।