বাংলাদেশে সাপ্তাহিক পত্রিকায় রিপোর্টিং ভিত্তিক বিদ্রোহীধারায় আধুনিকতার প্রবর্তক ছিলেন মিনার মাহমুদ। আজ ২৯ মার্চ সাংবাদিক মিনার মাহমুদের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১২ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মিনার মাহমুদের কবর জিয়ারত, দোয়া পাঠ ও দিলু রোড ছাতা মসজিদে বাদ জুম্মা মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
১৯৫৯ সালে ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন মিনার মাহমুদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞানে পড়েছেন। ছাত্র জীবনে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। ফরিদপুর থাকার সময়ে এক সময়ের আলোড়ন তোলা সংগঠন ‘লেখক শিবির’ করতেন মিনার মাহমুদ। সাপ্তাহিক বিচিত্রা’য় ঝড়তোলা সব প্রতিবেদন করে রিপোর্টিংয়ের সনাতনী প্রথাটাই ভেঙে দেন তিনি।
১৯৮৭ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সেই সম্পাদক হিসেবে মিনার মাহমুদের আবির্ভাব ঘটে। ৩২ পৃষ্ঠার নিউজপ্রিন্ট ‘বিচিন্তা’ তাকে কিংবদন্তীতুল্য সাফল্য এনে দেয়। ‘বিচিন্তা’ ছিল তারুণ্যের সম্মিলন। পত্রিকাটিতে যারা কাজ করতেন তাদের গড় বয়স ছিল ২৪। সোজা কথাটা সাদাভাবে বলতে গিয়ে সামরিক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রোষানলে পড়েন মিনার মাহমুদ। যেতে হয় জেলখানায়। বন্ধ করে দেয়া হয় পত্রিকাটির প্রকাশনা।
১৯৯০ সালে সামরিক শাসন হটিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হয় দেশে। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে মিনার মাহমুদ দ্বিতীয় দফায় বিচিন্তা প্রকাশ করেন। এবারের যাত্রাও মসৃণ হয়নি তার জন্য। নানা মহলের মামলা, হয়রানির কারণে কিছু দিন পর পত্রিকাটি বন্ধ করে দিয়ে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে বাধ্য হন।
দীর্ঘ নির্বাসন শেষ করে ২০০৯ সালে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি শুরু করতে চান সাংবাদিকতা। আবারও বিচিন্তা প্রকাশ করেন তিনি। তবে ‘করপোরেট সংস্কৃতি’র দাপট সামাল দিতে না পেরে এদফায় হাল ছাড়লেন মিনার মাহমুদ। তারপর ২০১২ সালের এই দিনেই আত্মহননের পথ বেছে নেন মিনার মাহমুদ।
মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শুয়ে আছেন মিনার মাহমুদ। তার ‘বিচিন্তা’, গল্পের বই ‘মনে পড়ে রুবী রায়’ উপন্যাস ‘আমার দেবী ফুলন’ জার্নাল ‘পিছনে ফেলে আসি’, ‘নির্ঘুম স্বপ্নের দেশে’ এখনো ঘুরছে পাঠকের হাতে হাতে।