মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যায় সরাসরি শ্যুটার হিসেবে সম্পৃক্ত ছিল মাসুম মোহাম্মাদ আকাশ ও শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম। টিপু হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মূল সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন সুমন সিকদার ওরফে মুসা।
মাসুমকে বগুড়া থেকে ও শামীমকে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মুসাকে ইন্টারপোলের সহযোগিতায় ওমান হতে গ্রেপ্তার করে ফিরিয়ে আনা হয়।
সোমবার ৫ জুন দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার(ডিবি) হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ডিবি পুলিশের তদন্তে টিপু হত্যার মোট আসামির সংখ্যা ৩৪। তবে একজনের পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায় তার নাম এক্সেল সোহেল। তার বাদ দিয়ে ৩৩ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলে তার নামও সম্পূরক হিসেবে সংযুক্ত করা হবে চার্জশিটে।
তিনি বলেন, মামলায় ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ অনুসারে জবানবন্দি প্রদান করেছেন তিন জন। তারা হলেন, মাসুম মোহাম্মাদ আকাশ (৩৪), নাসির উদ্দিন মানিক ও সুমন সিকদার ওরফে মুসা (৪৩)।
আধিপত্য ও আর্থিক সংশ্লিষ্টতায় টিপু হত্যার বড় কারণ। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মতিঝিল এলাকা। এখানে স্কুল-কলেজসহ অনেক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেখানে ছিল ভর্তি বাণিজ্য। এছাড়া এখানে অনেক মার্কেট, কাঁচা বাজার রয়েছে। সেখানে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, আধিপত্য বিস্তারের জেরে টিপুকে খুন করা হয়।
তবে টিপু হত্যায় যারাই জড়িত ছিলেন তাদের কারো রাজনৈতিক পরিচয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। যারাই সম্পৃক্ত বা টিপু খুনের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রত্যেককে মামলার চার্জশিটে উল্লেখ করে আজ আদালতে দাখিল করা হয়েছে।
টিপু হত্যার মামলার তদন্ত সম্পর্কে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, জাহেদুল ইসলাম টিপু মতিঝিলের আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন, অনেক ভাল মানুষ ছিলেন। ১৪ মাস আগে টিপু খুন হন। তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হবার পর ডিবি মতিঝিল টিম তদন্ত কাজ শুরু করে। প্রথম কয়েকদিনের মধ্যে আমরা মাস্টারমাইন্ড পর্যায়ের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করি। টিপু একা খুন হননি। তাকে মার্ডার করতে আসা শ্যুটারদের গুলিতে খুন হন কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি (২২)।
এই খুনের তদন্তে আমরা প্রায় ২৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। আজকে আমরা ৩৩জন আসামীর নামে চার্জশিট দাখিল করেছি। মোট পলাতক রয়েছেন ৯ আসামি।
হারুন বলেন, ঘটনা ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা শ্যুটার আকাশকে বগুড়া থেকে ও মোল্লা শামীমকে ইন্ডিয়া পালানোর প্রাক্কালে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছি। গ্রেপ্তার ২৪ জনের সঙ্গে কথা বলে ও সাক্ষ্যপ্রমাণে উঠে এসেছে যে, টিপু হত্যা পরিকল্পিত। টিপুকে হত্যার জন্য বেইলী রোড, বায়তুল মোকাররম এলাকা ও হোটেলসহ বিভিন্ন এলাকায় মিটিং করেছেন জড়িতরা। হত্যার পর প্রথম এক মাসে অধিকাংশ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরও যেহেতু এটা স্পর্শকাতর ঘটনা। সেজন্য কোনো ধরণের ভুল বা ক্রুটি না হয় সেজন্য তদন্তে সময় নেয়া হয়। আজ সেটার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
আমরা মনে করি, যারা জড়িত, অপরাধী, সাক্ষ্য প্রমাণ পারিপাশ্বিক তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে শুধু তাদের নামই মামলায় সংযুক্ত করা হয়েছে। যারা ঘটনার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত না তাদের কারো নাম সংযুক্ত করা হয়নি। অপরাধীদের রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা আমরা করিনি।
টিপু হত্যায় গ্রেপ্তার আসামি যারা
জিসান ওরফে জিসান আহাম্মেদ ওরফে মন্টু ওরফে) এমদাদুল হক (৫০), জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক (৪৫), সুমন সিকদার ওরফে মুসা (৪৩), মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ (৩৭), শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম (৩৫), মারুফ রেজা সাগর ওরফে সাগর (৪০), আরিফুর রহমান সোহেল ওরফে ঘাতক সোহেল (৪৫), জুবের আলম খান ওরফে রবিন ওরফে রেলওয়ে রবিন (৫১), হাফিজুল ইসলাম ওরফে হাফিজ (৫০), তৌফিক হাসান ওরফে বাবু ওরফে বিডি বাবু (৩৬), মাহবুবুর রহমান ওরফে টিটু (৪০), নাসির উদ্দিন ওরফে মানিক (৪৭), মশিউর রহমান ওরফে ইকরাম (৩৬), ইয়াসির আরাফাত সৈকত (৩৩), আবুল হোসেন মোহাম্মদ আরফান উল্লাহ ইমাম খান ওরফে দামাল (৪৯), সেকান্দার সিকদার ওরফে আকাশ (২৬), খাইরুল ইসলাম মাতব্বর ওরফে খোকা (88) আবু সালেহ শিকদার ওরফে সুটার সালে (৩৮), নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির (৩৮), ওমর ফারুক (৫২), সোহেল শাহরিয়ার (৪১), মোহাম্মদ মারুফ খান (২৮), ইসতিয়াক আহম্মেদ জিতু (৩৯), ইমরান হোসেন ওরফে জিতু (৩২), রাকিবুর রহমান ওরফে রাকিব (৩১), ও মোরশেদুল আলম পলাশ।
পলাতক আসামি যারা
এনামুল ইসলাম ওরফে এক্সেল সোহেল (৪৮), রিফাত হোসেন (৩৮), রানা মোল্লা (৪০). আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব (৩৫), সামসুল হায়দার ওরফে উচ্ছল উজ্জল (৪১), কামরুজ্জামান ও বাবুল ওরফে বাবুল তালুকদার (৬২), গোলাম আশরাফ তালুকদার (৬৮) ও মারুফ আহমেদ মনসুর (৫৭)।
২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরের আমতলা মসজিদ এলাকায় এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়ে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপুকে হত্যা করা হয়। সড়কে যানজটে আটকা পড়ে রিকশায় বসে থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন প্রীতিও (২২) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন জাহিদুলকে বহন করা মাইক্রোবাসের চালকও। নিহত জাহিদুলের স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ডলি।
পরদিন ২৫ মার্চ দুপুরে নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা (নং-১৮) দায়ের করেন। তবে নিহত শিক্ষার্থী প্রীতির পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।