২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। এই দিনটি এনে দিয়েছে একটি মুক্ত দেশ, একটি স্বাধীন জাতিসত্ত্বা। প্রতিটি স্বাধীনতা দিবসে আমাদের স্মরণ করতে হবে রক্তাক্ত সেই নির্মম এবং করুণ ইতিহাস। স্মরণ করতে হবে একাত্তরে হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছিলেন তাদের। স্মরণ করতে হবে টগবগে সেই তরুণদের, যারা নিজ দেহ দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে পাকিস্তানি ট্যাঙ্ককে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। স্মরণ করতে হবে কয়েক লাখ নারীকে, যারা সম্ভ্রম হারিয়েছেন দেশের জন্য।
মহান স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নারী শিক্ষার্থীরা তাদের ভাবনা এবং মতামত তুলে ধরেছেন।
তোনাজিনা জান্নাত মিম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
‘স্বাধীনতা’ যে শব্দের অর্থ নিজের অধিকার পরিপূর্ণভাবে ভোগ করা, যা পূর্ব পাকিস্তান নামক অংশ ১৯৪৭ এর দেশভাগের পরও ভোগ করতে পারে নি। পরবর্তী দীর্ঘ ২৩ বছর সংগ্রাম করে আজকের এই দিনে নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আনুষ্ঠানিক সূচনা করেছিল, এখন যা বাংলাদেশ নামে পরিচিত। প্রতিবছর এই দিনটি প্রত্যেক বাঙালির মাঝে নতুন প্রেরণার সৃষ্টি করে, উপলব্ধি করায় নিজ অস্তিত্বকে। স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা প্রতিটি বাঙালির সার্বক্ষণিক দায়িত্ব। এজন্য স্বাধীনতা দিবসের মহত্ত্ব শুধু একটি দিনে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রত্যেকের হৃদয়ে সর্ব সময়ের জন্য আবদ্ধ করে রাখা জরুরি। এই স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ সকলের জীবনে নতুন শক্তির সঞ্চার করুক এবং এটি রক্ষা করার প্রতিজ্ঞার মাধ্যমে উদযাপন করাই হোক এই মহৎ দিনের একমাত্র উদ্দেশ্য।
নৌরিন নিথি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে গরীব-দুঃখী মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। এই স্বাধীনতাকে অর্জন করতে বিভিন্ন বয়সের, শ্রেণির মানুষকে জীবন ত্যাগ করতে হয়েছে। যাঁরা জীবন বাজি রেখে এই স্বাধীন দেশটি আমাদের উপহার স্বরুপ এনে দিয়েছেন তাঁদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞাতার শেষ নেই। তাঁদের ত্যাগের মাধ্যমেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি। তাঁরা জীবনের বিনিময়ে যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন আমরা সেই বাংলাদেশকে যেন গড়ে তুলতে পারি। এজন্য আমাদের উচিত স্বাধীনতার মর্ম উপলব্ধি করে এটি রক্ষার জন্যে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া এবং এ বিষয়ে সচেতন থাকাই আমাদের দায়িত্ব। স্বাধীন বাংলাদেশকে উন্নয়ন এর সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে দিতে আমাদের নিজেদের মধ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
শেখ অনন্যা জামান
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
আমার কাছে স্বাধীনতার অর্থ হচ্ছে স্বেচ্ছায় নিজের ক্ষমতায় থাকা। এটি বাংলাদেশের জাতীয়তার একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলমন্ত্র। স্বাধীনতার উদ্দেশ্য হল সামরিক, রাজনৈতিক, আর্থিক এবং সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার মাধ্যমে মানুষের স্বাধীনতা ও সমান অধিকার নিশ্চিত করা। এটি একটি সর্বজনীন ধারণা যা মানুষের অধিকার ও মৌলিক মানবিক স্বাধীনতা উপেক্ষা না করে মানুষের স্বশক্তিতে ভর দেয়। এটি একটি আদর্শ যা মানুষের মধ্যে স্বতন্ত্র চিন্তা, ব্যক্তিগত মতামত ও ধর্মমুক্ত মতামতের প্রতিষ্ঠা করে। আমারা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হলেও এখন ও অনেক ক্ষেত্রে আমরা পরাধীন মুক্তচিন্তা প্রকাশে এখনো সাধারণ মানুষ পরাধীন।
সুরাইয়া আফরিন আমান্তা
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
কথায় আছে স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে, রক্ষা করা কঠিন। আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, স্বাধীন নাগরিকত্ব পেয়েছি, স্বাধীন বাংলা ভাষা পেয়েছি কিন্তু বর্তমানে এই স্বাধীনতা কতটুকু রক্ষা করতে পারছি বা পেরেছি তার প্রশ্নে একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন থেকেই যায়। আমাদের বিশ্বাস ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ হবে সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক দেশ, প্রতিষ্ঠিত হবে শোষণমুক্ত একটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা, যেখানে মানবাধিকারকে মূল্যায়ন করা হবে সবার ওপরে। প্রতিটি মানুষের অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসায় জীবনধারণের মৌলিক উপকরণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায় এই স্বাধীন দেশে এখনো শোষণ এবং শোষিতের চিত্র অহরহ। স্বাধীন জাতির প্রত্যাশা বা বিশ্বাসের যতটুকু প্রাপ্তি আমাদের, তা কি আমাদের দ্বারা অর্জন হয়েছে। সবশেষে এই স্বাধীনতা দিবসে আমার একটাই ভাবনা, আমরা যা চেয়েছি তা কী আদৌও পেয়েছি?
সাবিহা সুলতানা নীতি
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
স্বাধীনতা বা এর পূর্ব ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উৎপত্তির যে বিষয়টি আলোকপাতের দাবি রাখে তা হলো বাঙালি জাতিসত্তা। মুক্তিযুদ্ধের অর্ধ শতাব্দীকাল পেরিয়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে বাঙালি জাতিসত্তার শেকড়ের আত্মপরিচয়ের প্রতি বুদ্ধিশক্তির সাথে প্রয়োজন আমাদের সুক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গির। পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশগুলোকে নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি আর আত্মপরিচয়ের অন্বেষণে আমাদের মতো ত্যাগ স্বীকার করতে হয়নি। কিন্তু আমারা আমাদের দেশকে কিনেছি, দেশের ভাষা ও সংস্কৃতি কিনেছি, যার মূল্য টাকা নয় রবং এর মূল্য দিতে হয়েছে শরীরের তাজা রক্ত, সম্ভ্রম এবং তিতিক্ষার বিনিময়ে। বর্তমানে আমাদের স্বাধীনতা দিবস একটি নয় বরং আমাদের মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে আমরা এই স্বাধীনতা দিবসের জন্য প্রতিদিন স্বাধীন, প্রতিদিন মুক্ত। আমরা এক মুক্ত জাতি, এক মুক্তসত্তা।