পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, যদি নিরপেক্ষভাবে বিচার বিশ্লেষণ করেন, তাহলে শেখ হাসিনার মতো একজন যোগ্য দক্ষ শক্তিশালী নেতার বিকল্প দেখাতে পারবেন কি এখানে? তার মতো স্ট্রং স্টেটম্যানশীপ আর কার মধ্যে রয়েছে? বিরোধী দলে কি তেমন কোন নেতা রয়েছেন ? তাহলে দেশটা চালাবে কে? কার নেতৃত্বে বাংলাদেশটা চলবে?
চ্যানেল আই’য়ের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একথা বলেন। সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হল:
প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বর্তমানে বাংলাদেশ বেশ ভালো একটি অবস্থানে রয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চমৎকার সুন্দর সম্পর্ক বিরাজ করছে। কূটনৈতিক সাফল্যের কারণে বর্তমানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। বিভিন্ন দেশে রপ্তানি বেড়েছে। জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রেও নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে। দেশের একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এই সাফল্যকে বিশ্লেষণ করবেন কীভাবে?
এ কে আব্দুল মোমেন: আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। বৈশ্বিক রাজনীতি, অর্থনৈতিক ফোরামে, বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট নিরসনে, উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণী সম্মেলনে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রমাণ করেছে আমরা শুধু নিজ দেশ নিয়ে ব্যস্ত নই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নেতৃত্ব দানের সক্ষমতা রয়েছে আমাদের । এসবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে। তার সুদক্ষ নেতৃত্ব, কূটনৈতিক কৌশল, পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো অসাধারণ মেধা ও বিচক্ষণতার কারণে।
আমরা আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে তিন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। সেগুলো হল, অর্থনৈতিক কূটনীতি বা ইকনোমিক ডিপ্লোম্যাসি, পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা। দেশের অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি বাড়ানো, নতুন নতুন দেশে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ইত্যাদি ইকনোমিক ডিপ্লোম্যাসিতে প্রাধান্য পাচ্ছে। যার সুফল তো দেখা যাচ্ছে বর্তমানে। পাবলিক ডিপ্লোম্যাসির মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যমে সেসব দেশে বাংলাদেশের মিশন, দূতাবাস চালুর কাজ করছি। নতুন নতুন অনেক দেশের সঙ্গে এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে নানামুখী প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে নিয়মিত সেমিনার, মতবিনিময় সভা আয়োজন করে এখানকার বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে। ফলে ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে নতুন নতুন বিনিয়োগকারী আসছেন এদেশে। আর আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে আমরা বেশ জোর দিচ্ছি। দেশের অভ্যন্তরে যদি শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় না থাকে তাহলে আমাদের সব অর্জন বিলীন হয়ে যাবে। অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যাবে দেশ। ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এই শান্তি ও স্থিতিশীলতা না থাকায় আমাদের চোখের সামনে কত কত দেশ বেশ ভালো অবস্থা থেকে বর্তমানে অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় পৌঁছে গেছে। ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা না থাকায় তারা নানা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। আমরা কোনভাবেই যাতে দেশ ও আঞ্চলিক পর্যায়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হওয়ার মতো অবস্থায় পৌঁছে না যায় তার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। আমাদের সঙ্গে চমৎকার পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় থাকার কারণে সৌদি আরবে জনশক্তি রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। মালয়েশিয়ায় বন্ধ হয়ে যাওয়া জনশক্তি রপ্তানির দরজা আবার খুলতে সক্ষম হয়েছি। সেখানেও আমাদের দেশের মানুষজন আবার কাজের জন্য যেতে পারছে।
প্রশ্ন: এক সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাওয়া বাংলাদেশি মানুষের সংখ্যা ছিল খুবই কম। অথচ বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাওয়া এবং সেখানে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত বাংলাদেশির সংখ্যা অনেক বেড়েছে। পৃথিবীর নানা দেশে এক কোটিরও বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি রয়েছেন। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙা রাখছে। এটা বাংলাদেশের একটি বিরাট অর্জন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এটা আপনার অনন্য কৃতিত্ব। এ সাফল্যটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
এ কে আব্দুল মোমেন: এ সাফল্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের। আমরা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এ কাজে যার যার অবস্থান থেকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি তাকে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে সেখানে এখানকার জনশক্তি রপ্তানির নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যেমন অবদান রয়েছে। আবার জনশক্তিকে সুসংগঠিতভাবে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে বৈদেশিক জনশক্তি রপ্তানি মন্ত্রণালয় বিভিন্নমুখী উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে কাজটিকে বেগবান করছে।
প্রশ্ন: সিলেটের একজন মানুষ হিসেবে এখানকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
এ কে আব্দুল মোমেন: আমি স্বীকার করছি অনেক ক্ষেত্রেই সিলেট পিছিয়ে রয়েছে এখনও। এখানে শিক্ষিতর হার সবচেয়ে কম। যে কারণে সিলেট অঞ্চলে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হারও বেশি। সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটেনি। সিলেট-ঢাকা সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে চার লেনের সড়ক নির্মাণ প্রকল্প ১৯৯২ সালে অনুমোদিত হলেও এখন পর্যন্ত কাজ হয়নি কিছুই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে অনেকগুলো প্রকল্প অনুমোদন করেছেন। এখন ছয় লেনের রাস্তা তৈরি হবে। এক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দও হয়েছে। কিন্তু তারপরও কাজ এগোচ্ছেনা অন্যান্য জায়গার মতো।
রেল যোগাযোগও পুরনো ব্যবস্থায় পড়ে আছে। ১৮৭৪ সালে ব্রিটিশদের স্থাপিত সেই মিটারগেজ রেললাইন ধরে সিলেটে যাচ্ছে ট্রেন। মাঝে মধ্যে দূর্ঘটনার কবলে পড়ছে। এখানেও নতুন ডাবল লাইন স্থাপনের প্রকল্প অনুমোদিত হয়ে আছে। আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত উন্নত আধুনিক রেললাইন স্থাপনের কাজটিও তেমন এগোচ্ছে না। নানা কারণে এ কাজগুলো ধীর গতিতে চলছে। নৌপথে একসময় সিলেটে ব্যবসা-বাণিজ্য বেশ চাঙ্গা ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার পর ড্রেজিং করা হয়নি। ফলে নৌপথে এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগও বন্ধ হয়ে গেছে। দীর্ঘ ৫০ বছরে এখানকার নদীগুলো ড্রেজিং করা হয়নি। বর্তমানে আবার এখানকার নদীগুলো ড্রেজিং শুরু হয়েছে। নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষায় খুব সহজেই বন্যাকবলিত হয়ে পড়ছে সিলেটের বড় একটি অংশ। নদীগুলো ড্রেজিং করা সম্ভব হলে এখানে বন্যার প্রকোপ কমবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। সিলেটে যোগাযোগ অবকাঠামোর দুর্বলতা ও পিছিয়ে থাকার কারণে এখানে শিল্প ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হচ্ছেনা। কারণ শিল্প ব্যবসা-বাণিজ্যে যারা উদ্যোগী হবেন তারা সর্বপ্রথম এ অঞ্চলের যোগাযোগ অবকাঠামোর শক্ত অবস্থানের নিশ্চয়তা চাইবেন।
প্রশ্ন: সিলেট অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রচুর ব্যবসা-বাণিজ্যেতে সুপ্রতিষ্ঠিত অবস্থায় আছেন। শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন সেখানে। অথচ সিলেটে ব্যবসা-বাণিজ্যে, শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে তারা বিনিয়োগে তেমন আগ্রহী নন। ব্যাপারটি নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন আপনিও?
এ কে আব্দুল মোমেন: দেশ বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে, শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সিলেটের অনেকেই সফলতা অর্জন করেছেন। সিলেটে উদ্যোক্তা শ্রেণী গড়ে উঠলেও স্থানীয় শিল্প-বাণিজ্যে ব্যবসায় তাদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য নয়। সিলেটে তারা কিছু করতে তেমনভাবে আগ্রহী না। সিলেটে এখন ব্যবসা-বাণিজ্য বলতে কিছু হোটেল ব্যবসা, ভারত থেকে কয়লা আমদানি আর স্টোন ক্র্যাশিং প্ল্যান্ট ছাড়া আর কিছু চোখে পড়েনা। সিলেটে রপ্তানি প্রক্রিয়াজত অঞ্চল করা হয়েছে। সেখানে সিলেটের মাত্র দুইজন উদ্যোক্তা আগ্রহী হয়ে এগিয়ে এসেছেন। বিনিয়োগে উৎসাহী হয়ে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি অন্য উদ্যোক্তাদের।
সিলেটে নতুন নতুন শিল্প স্থাপনা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় এখানে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে এগিয়ে আসতে চাইছেন না সিলেটেবাসীরা। তবে এ অবস্থা বেশিদিন বিদ্যমান থাকবেনা। সারা বাংলাদেশ জুড়ে উন্নয়নের যে জোয়ার চলছে তাতে সিলেটেও পিছিয়ে থাকবেনা কোনভাবেই। বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা, দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে অচিরেই সিলেটও শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। সিলেটে বিমানবন্দর স্থাপিত হয়েছিল ১৯৪৫ সালে। যা বর্তমানে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হিসেবে সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। কিন্তু এর পরিসর এখনও বেশ ছোট। যদিও সরকার এই বিমানবন্দর সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছেন আরও আগেই। এ লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে বটে তবে তা ধীর গতিতে চলছে। এক্ষেত্রে আরও গতিশীল হতে হবে। নেত্রী তো টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও গতি বাড়ছেনা কাজে।
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে একটি কথা সবার মুখে মুখে বেশ চাউর হয়েছে যে, দেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে যতই বিরোধী দলগুলোর তৎপরতা দেখা যাক না কেন সবকিছুকে ছাপিয়ে আগামীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই দেশের সরকার গঠিত হতে চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যতই নানা ধরণের ইস্যু নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টির চেষ্টা করুক না কেন শেষ পর্যন্ত তাদের ম্যানেজ করতে সক্ষম হবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে আপনি মন্তব্য করুন।
এ কে আব্দুল মোমেন: দেশের আগামী সরকার হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই। তার বিকল্প আর কেউ নেই এদেশে। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে। তার মতো স্টেটসম্যানশিপ গুণাবলী ও যোগ্যতা আর কার মধ্যে রয়েছে এই মুহূর্তে? তিনি সব ধরণের সংকট, যে কোন ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার মতো দক্ষতা, বিচক্ষণতা এবং অসাধারণ যোগ্যতা অর্জন করেছেন। যা এখানে আর কারও মধ্যে দেখা যায় না। তার বিকল্প দেখাতে পারবেন আপনি? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত কিছুদিন ধরে নানা ইস্যুতে প্রশ্ন তুলে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত কিছুই করতে পারেনি তারা। মূলত তাদের কিছু চাহিদা রয়েছে আমাদের কাছে।
প্রশ্ন: কী ধরণের চাহিদা সেগুলো?
এ কে আব্দুল মোমেন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের তৈরী বেশ কিছু অস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম আমাদের কাছে বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। যেগুলোর মূল্য অনেক বেশি। আমাদের তো যুদ্ধাস্ত্র কেনার দরকার নেই। আমাদের লক্ষ্য হলো, দেশের মানুষের কল্যাণ। তাদের জীবনমানের উন্নয়ন। দেশের মানুষের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, চিকিৎসা নিশ্চিত করতেই তো আমাদের সব টাকা-পয়সা ব্যয় করছি। দামি অস্ত্র কিনে কী হবে আমাদের? আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুই কেনা সম্ভব হচ্ছেনা প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা না থাকায়। আমাদের জ্বালানী চাহিদার পুরোটাই বিদেশ থেকে আনতে হয় বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে। যা কিনতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যেতে হচ্ছে মাঝে মাঝে। আমাদের বেশ কিছু এয়ার বাস কেনা দরকার। অর্থের সংকটের কারণে তা কেনা যাচ্ছে না। আমাদের কাছে এসবই অগ্রাধিকার। যুদ্ধাস্ত্র নয় কোনভাবেই।
এসব কথা আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছি অনেকবার। তারা বলেছে, অস্ত্রের দাম একবারে দিতে হবে না। ধীরে ধীরে পরিশোধ করলেও চলবে। তারা শর্ত দিয়েছে, তাদের কাছ থেকে অস্ত্র কিনলে তাদের কারিগরী বিভিন্ন বিষয়গুলো অন্যদের কাছে কোনভাবেই প্রকাশ করা যাবে না। যেখানে এই অস্ত্রশস্ত্রগুলো থাকবে তার সঙ্গে অন্যান্য কোন কোন দেশ থেকে কেনা অস্ত্রশস্ত্র থাকছে সেটাও তাদেরকে জানাতে হবে। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নানা বিষয়ে প্রশ্ন তুলে আমাদেরকে অহেতুক চাপ দিয়ে দুর্বল করতে চাইছে। তাদের লক্ষ্য হলো, চাপে রেখে সেইসব অস্ত্রশস্ত্র কেনার চুক্তি করতে বাধ্য করা। আমরা আগামী নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে বড় ধরণের কোন চুক্তি করছি না। সবাইকেই বলে দিয়েছি, নির্বাচনের পর চুক্তির ব্যাপারগুলো দেখা যাবে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন বিভিন্ন টিম নিয়ে আসছেন। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাই।
এ কে আব্দুল মোমেন: বাংলাদেশ এখন আগের অবস্থানে নেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের গুরুত্ব নানা কারণে বেড়েছে। যে কারণে আমাদের আগামী নির্বাচন নিয়ে বিশ্বের নানা দেশ আগ্রহী, কৌতূহলী হয়ে উঠেছে। এ বছর পৃথিবীর আরও অনেক দেশেই তো নির্বাচন হয়েছে। আগামীতেও হবে। কই, সেইসব নির্বাচন নিয়ে তো এরকম কৌতূহল কিংবা অতি উৎসাহী মনোভাব দেখছি না।
প্রশ্ন: বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী নির্বাচন নিয়ে বেশ তৎপরতা চালাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বর্তমানে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন, এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী, বলবেন?
এ কে আব্দুল মোমেন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বাংলাদেশ সম্পর্কে সবসময়ে আগ্রহী। মার্কিন রাষ্ট্রদূত এখানে নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে বটে। তবে তা নিয়ে আমরা তেমন চিন্তিত নই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বার বার বলেছে, বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ,সুন্দর, ভালো নির্বাচন দেখতে চান তারা যেখানে সংঘাত, মারামারি, সন্ত্রাস হবেনা। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে।
প্রশ্ন: বিরোধী দল যেভাবে চাইছে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে নির্বাচনের আগে। তাদের এমন দাবির প্রেক্ষিতে কী ঘটতে যাচ্ছে আগামীতে?
এ কে আব্দুল মোমেন: এ ধরণের দাবির কোন যৌক্তিকতা নেই। পৃথিবীর অন্য কোথাও কী তেমন উদাহরণ রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা প্রতিনিধিরা আমার কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে আমি তাদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করেছি, আচ্ছা আপনাদের দেশে কী নির্বাচনের সময় সরকার প্রধান এবং সরকার পদত্যাগ করে? জবাবে তারা বলেছেন, নাহ, প্রশ্নই আসেনা। বাংলাদেশের বিরোধী দলের দাবি এটা। আমাদের দাবি নয় তা। বিরোধী দল যেভাবে চাইছে সেভাবে তো সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার শক্তিশালী নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে উন্নয়ন, সমৃদ্ধি আর অগ্রগতির দিকে। তা যেকোনোভাবেই বজায় রাখতে হবে।
প্রশ্ন: তাহলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কাঠামো এবং নীতি কেমন হবে?
এ কে আব্দুল মোমেন: এটা তো নির্বাচনী আইনেই রয়েছে। একটি সুষ্ঠু সুন্দর শান্তিপূর্ণ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা করা প্রয়োজন, নির্বাচন কমিশন তা করবে। যারা নির্বাচনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করবেন তারা কোন পক্ষের হয়ে কাজ করবেন না। নিরপেক্ষভাবে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করবেন।
প্রশ্ন: সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের এখানে বিরোধী দলের আন্দোলন এবং তাদের দাবিসমূহ নিয়ে কথা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আপনি মন্তব্য করুন। তাদের দাবি কী মেনে নেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন আপনি?
এ কে আব্দুল মোমেন: বিরোধী দল চাইছে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের পদত্যাগ। এটা কি কোন কথা হলো? বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমার বন্ধু মানুষ। তাকে একজন ভালো মানুষ, ভদ্র ব্যক্তি হিসেবে জানতাম। কিন্তু আজকাল তিনি যা কিছু বলছেন তা কোনভাবে যুক্তিসঙ্গত কথাবার্তা বলে মনে হয় না। পাগলের প্রলাপ মনে হয় মাঝেমাঝে। যদি কোন পাগল, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ তেমন কথা বলতো, তাহলে না হয় একটা কথা থাকতো। বিরোধী দল মানে তো যাচ্ছেতাই, আবোল-তাবোল দাবি তুলে রাজপথ গরম করা এবং পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তোলা নয়।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ ব্রিকস এর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হতে না পারায় বিএনপি একটা ইস্যু তৈরি করতে চাইছে যে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়েছে। এর জন্য বর্তমান সরকারের নেতৃত্বের ব্যর্থতাকে দায়ি করে নানা বক্তব্যও দিচ্ছে। এ সম্পর্কে বলুন।
এ কে আব্দুল মোমেন: বিএনপি তো সেই প্রথম থেকেই ব্রিকস এর সদস্য হওয়ার বিপক্ষে বলে আসছে। তারা তো ব্রিকস জোটে বাংলাদেশের যোগদান সম্পর্কে নেতিবাচক বক্তব্য দিয়ে আসছে আগে থেকেই। এখন এটা নিয়ে তারা নতুন ইস্যু তৈরি করবে কীভাবে? তবে তারা যদি স্রেফ বিরোধীতা করার জন্য সব সময় একটা ইস্যু তৈরির মতলবে থাকে তাহলে আমরা কী বলতে পারি? তাদের যদি সখ হয় তাহলে এ ধরণের ইস্যু তৈরি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তুলতে পারে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে ভারত, আমেরিকা কিংবা অন্যান্য দেশ কী ধরণের প্রভাব বিস্তার করবে? আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর চাপে কী নির্বাচনের পরিবেশ বদলে যাবে?
এ কে আব্দুল মোমেন: সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে আমরা বেশ কিছু ঘটনাপ্রবাহ দেখেছি। কম্বোডিয়া, তুরস্ক কিংবা হাঙ্গেরীর মতো দেশে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে আমেরিকা। আপনারা নিশ্চয়ই পত্রপত্রিকায় দেখেছেন বিভিন্ন সংবাদ। আমেরিকা কিছুই করতে পারেনি সেখানে। বাংলাদেশেও কিছু করতে পারবেনা তারা। বাংলাদেশের মানুষ যা চাইবে, তাই হবে।
প্রশ্ন: চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কটা কেমন হবে বলে মনে করেন?
এ কে আব্দুল মোমেন: আমাদের পররাষ্ট্র নীতি হল সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা সবার সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে চাই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর দেওয়া সেই পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করে চলতে চেষ্টা করছি আমরা। আমরা ভারসাম্য বজায় রেখে সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখছি। সবার সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক বাংলাদেশের। আমরা কারও লেজুড় হতে চাইনা।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে?
এ কে আব্দুল মোমেন: আমি মনে করি, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবেই। যদি তারা নির্বাচনে না যায়, তাহলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না এদেশে।