‘পদ্মা-মেঘনা-যমুনা/ তোমার-আমার ঠিকানা’- এমন স্লোগানের ঐকান্তিকতায়, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিরিশ লক্ষ তাজা প্রাণ আর দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে মাত্র নয় মাসে বাঙ্গালি পাকিস্তানি সেনাদের সাথে লড়াই করে বাংলার স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়। বাংলার আজাশে উদিত হয় লাল সবুজের পতাকা। স্বাধীনতা লাভ করে, বিজয় অর্জন করে ১৯৭২ সালটা যে কতটা আনন্দ মুখরিত হয়েছিল তা মুখে বলে বা ইতিহাস রচনা করে ততটা বোঝানো সম্ভব নয় যতটা জাতি চোখে দেখে আনন্দিত হয়েছে।
আহা! বিজয়ের কতই না আনন্দ মুখরিত হয়ে উঠেছিল সারা বাংলায়! মাতৃভাষা অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়ে বিশ্বে রেকর্ড সৃষ্টি করেছ। এ সবই বাঙ্গালির সাহসিকতার পরিচয়।
নদীমাতৃক এই বাংলাদেশ। নদীগুলোই যেন বাঙ্গালির মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধনে বেঁধে রেখেছে। শিশুকাল থেকেই মেঘনা নদীর সেতু দেখেছি। যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতু সেই সময় প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা উদ্ভোধন করেন। তখনও মানুষ আনন্দে বিমোহিত হয়েছে। দেশের উত্তর অঞ্চলের সাথে ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চলে ব্যপক যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ছোট বড় প্রত্যেকটা সেতুই যোগাযোগ এবং অর্থনৈতিক সম্বৃদ্ধির মাইল ফলক। তবে পদ্মা সেতু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সেখ হাসিনা দৃঢ়প্রত্যয়ে যে স্বপ্ন দেখেছেন তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কারণ এই পদ্মা সেতু পরিকল্পনা এবং নির্মাণে তিনি দৃঢ়তা আর সাহসিকতার মোলাবেলা করেছেন বলেই আজ তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। তিনি বিশ্ব ব্যাংকের বিনিয়োগ প্রত্যাখান করেছেন। যা দেশ ও জাতির অহংকার, গৌরব ও আত্মমর্যাদার। পদ্মা সেতু গড়ে উঠেছে দেশের নিজস্ব অর্থায়নে। যেখানে মিশে আছে দেশি-বিদেশি মানুষের শ্রম-ঘাম-মেধা।
পদ্মা একটি খরস্রোতা নদী যা ভারত থেকে প্রবেশ করা গঙ্গা-যমুনা আর ব্রহ্মপুত্রের সংমিশ্রণ। খরস্রোতা হওয়ার কারণে নদীর তলদেশের গভীরে পাইলিং করা হয়েছে। আগামী একশত বছরের গ্যারান্টি যা বড়মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষতির আশঙ্কা নেই। মাওয়া থেকে জাজিরা পর্যন্ত সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। নির্মাণে বিশালতা এবং বিস্তৃতভাবে সংযুক্ত করা হবে সেতু সড়ক, রেল, বিদুৎ, গ্যাস। পুনর্বাসন, পরিবেশ ও প্রাণীকুল রক্ষায় স্থাপন করা হবে বিভিন্ন প্রকল্প। পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থনৈতিক সম্বৃদ্ধি ঘটবে বহুলা ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ে, ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে তৈরিতে সম্ভাবনার দার উন্মোচিত হবে যা বিভিন্ন দেশের মধ্যে শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটবে। দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মংলা বন্দর দিয়ে দিয়ে বৈদেশিক বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভাবনা রয়েছে।
২০১৪ সালে পদ্মা সেতুর কার্যক্রম শুরু হয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নানা আয়োজনে উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলাদেশের মানুষের কাছে উদ্ভোধনের দিনটি ২৫ জুন ২০২২ মাহেন্দ্রক্ষণটি সামনে আসে। আজকের এই উৎসব যেন ১৯৭১ সালের বিজয় দিবসেরই মতো আরেক বিজয়। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী সেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্ভোধন করেন।
নদীমাতৃক এই দেশের কবি-সাহিত্যিকরাও পদ্মা নদীকে ঘিরে লেখেছেন অনেক গল্প-উপন্যাস, নাটক, কবিতা গান।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)