কৃষিখাতে (কৃষি, খাদ্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৩৫ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ৩৩ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রস্তাবিত বাজেট বেড়েছে ১৬৭৬ কোটি টাকা।
আজ বিকেল ৩ টায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বাজেট উপস্থাপনকালে বলেন, ফসলের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য আমরা ইতিমধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে সার, বীজ ও অন্যান্য উপকরণ এবং সেচ সুবিধা প্রদান করছি। কৃষকদের নিকট সাশ্রয়ী মূল্যে প্রয়োজনমত সার সরবরাহের জন্য সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। সেচ কাজে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিলে ২০ শতাংশ হারে রেয়াত প্রদান করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সারা দেশে পতিত ও অব্যবহৃত জমিতে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। খাদ্যশস্যের পাশাপাশি আম, পেয়ারা, কুল, কলা, পেঁপেসহ বিভিন্ন উদ্যানভিত্তিক ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ইউনিয়নে ১০০টি করে মোট ৪ লক্ষ ৮৮ হাজার ৪০০টি পারিবারিক সবজি বাগান স্থাপনের কাজ চলছে।
তিনি জানান, দেশে কার্ডধারী কৃষকের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ২ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। সকল কৃষককে স্মার্ট কার্ড প্রদানের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, পাহাড়ি ঢল ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের ভর্তুকির পাশপাশি প্রণোদনা ও পুনর্বাসন সুবিধা দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে আধুনিক সংরক্ষণাগার, প্যাকেজিং হাউজ, কুল চেইনসহ অন্যান্য সুবিধা স্থাপনকে উৎসাহিত করছি। বর্তমানে ৭০টির বেশি সবজি ও ফল বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ইতোমধ্যে ১০০ কোটি ডলার আয়ের মাইলফলক অতিক্রম করেছি আমরা।
মন্ত্রী বলেন, কৃষিখাতে গবেষণার মাধ্যমে বিগত ১৪ বছরে বৈরি পরিবেশে সহনশীল জাতসহ মোট ৬৯০টি উন্নত/উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে ১ হাজার সবজি উৎপাদন গ্রাম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩০০টি উপজেলায় ৭৬টি ফসলের ক্রপ জোনিং কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া, এক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রেখেছি।
এবারের বাজেটে ভাসমান কৃষি, ছাদ কৃষি, হাইড্রোপনিক ও অ্যারোপনিক কৃষি, সমুদ্র সম্ভাবনা ও প্রিসিশন কৃষি কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
মুস্তফা কামাল বলেন, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী খাদ্যশস্য সংরক্ষণ ক্ষমতা বিদ্যমান ২১.৮ লক্ষ মেট্রিক টন হতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩৭ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি জানান, বঙ্গোপসাগরে জরিপ পরিচালনা করে ৪২৬ প্রজাতির মাছের একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যাটালগ এবং সমুদ্র উপকূলে ১৫৪ উপজাতির সি-উইড সনাক্ত করেছি। মেরিন ফিশারিজ একাডেমি ও মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে সমুদ্রগামী ও বাণিজ্যিক জাহাজ চালনা, সামুদ্রিক মৎস্য সংরক্ষণ ও মান নিয়ন্ত্রণ সেক্টরে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করা হচ্ছে।
দেশীয় মাছের প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন, মৎস্যচাষীদের মধ্যে দেশীয় মাছের পোনা বিতরণ, ভ্রাম্যমাণ মৎস্য ক্লিনিকের মাধ্যমে খামারি পর্যায়ে প্রযুক্তিগত সেবা প্রদানের কার্যক্রম চলমান আছে।
কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণ, কৌলিতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে মাছের জাত উন্নয়ন, মলিকুলার বায়োলজি ব্যবহার করে বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ মাছের ভ্যাকসিন উদ্ভাবন, ন্যানো টেকনোলোজি ব্যবহার করে হ্যাচারি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ আহরণ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ আধুনিকায়নের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
বিশ্ব অর্থনীতির অস্থির পরিস্থিতি ও মূল্যস্ফীতির মত চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছেন। এটি তার পঞ্চম বাজেট ঘোষণা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট।
বিজ্ঞাপন