কোভিডের ত্রাস কেটে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু কোভিডের প্রভাব কি আদৌ কেটেছে? শরীরের ওপর কোভিড যে প্রভাব ফেলেছিল, তা সবাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন কি? এমনই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছিলেন বিজ্ঞানীরা। খুঁজতে গিয়ে যে উত্তর পেলেন, তা বহু মানুষের জন্যই বেশ হতাশার। কারণ কোভিডের প্রভাবে কারও কারও বয়স ১০ বছর বেড়ে গিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের সংবাদ মাধ্যম দ্যা গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে অবস্থিত কিংস কলেজের চিকিৎসাবিজ্ঞান বিভাগের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি লং কোভিড বা কোভিডের সুদূরপ্রসারী প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন। সেখানে দেখা গিয়েছে, কোভিড মানুষের মস্তিষ্কের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। এই প্রভাব হয়তো সারাজীবনেও কাটবে না।
কী এই প্রভাব?
কোভিড সংক্রমণ যখন চরম আকার ধারণ করে, তখন একটি কথার সঙ্গে অনেকেই পরিচিত হয়েছিলেন। সেটি হল ‘ব্রেন ফগ’। অর্থাৎ কোভিডের কারণে মস্তিষ্ক ঠিক করে কাজ না করা। রোগটি প্রাণঘাতী না হলেও এর ফলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে।
চিকিৎসকরা বলেছিলেন, এই জাতীয় ব্রেন ফগের প্রভাব কাটতে বেশ কয়েক মাস থেকে বছর লেগে যেতে পারে। মহামারীর পর কেটে গিয়েছে প্রায় বছর তিনেক। এখন এই লং কোভিডের কারণে কী অবস্থায় রয়েছে ব্রেন ফগ, সেটি নিয়েই গবেষণা শুরু করেন কিংস কলেজের বিজ্ঞানীরা। গবেষণায় দেখা গেছে, কারও কারও ক্ষেত্রে এই প্রভাব সারাজীবন পর্যন্ত থেকে যেতে পারে।
কী হয় এই ব্রেন ফগ থেকে?
ব্রেন ফগ এমন একটি রোগ যার প্রভাবে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা এবং ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে এর যোগাযোগের মাত্রা ভীষণ কমতে থাকে। বয়স বাড়লে স্বাভাবিক কারণেই বহু মানুষের এই রোগ হয়ে থাকে। কিন্তু লং কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার কারণে অনেকেরই অল্প বয়সে হয়ে যাচ্ছে এই রোগ। আর সেটিই চিন্তায় ফেলেছে বিজ্ঞানীদের।
লং কোভিড কারও কারও ক্ষেত্রে আগাম বয়সের প্রভাব ফেলতে শুরু করছে। অর্থাৎ খুব কম বয়সেই তাদের শরীরে বার্ধক্যের ছাপ পড়তে শুরু করছে। এমনকী কারও কারও ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের বয়স ১০ বছর পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে। যা কোনও ভাবেই আর ফেরানো যাবে না।
ব্রেন ফগের লক্ষণ এবং প্রভাব কী?
গবেষকদের প্রাথমিক রিপোর্টে প্রকাশিত ব্রেন ফগের লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে,
- ক্লান্তি বা অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া
- কোনও কাজে মনোযোগ দিতে অসুবিধা
- মাংসপেশীর ব্যথা
- শ্বাসকষ্ট
তবে গবেষণার ফলাফলে এই রোগে আক্রান্তদের মধ্যে জ্ঞান কমে যাওয়া বা জ্ঞানীয় প্রতিবন্ধকতা সংক্রান্ত কোনোও প্রভাব পাওয়া যায়নি। বিষয়টিকে গবেষকরা ‘সুসংবাদ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
কিন্তু পুরো বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে আছেন গবেষকরা। পরবর্তী সময়ে লং কোভিড নিয়ে আরও গবেষণা হলে বিষয়টি আরও বেশি পরিষ্কার ভাবে জানা যাবে, এমনটাই বলছেন তারা।