চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আমরা কী বর্বর নির্মাণে প্রথম হতে যাচ্ছি!

দেশ এখন সামজিক সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। নতুবা একের পর এক সনাতন ধর্মালম্বি শিক্ষকদের নাজেহাল করা, গ্রেপ্তার করা এবং পিটিয়ে হত্যা করার মত ঘৃণিত ঘটনার অবতারণা হত না। আমরা একটি উন্নত দেশ নির্মাণ করতে গিয়ে নিজেরা অসভ্যতার প্রতিযোগিতায় নেমেছি। এক চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের সব ধরণের প্রতিষ্ঠাণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণের মত একটি পবিত্র জায়গা আজ কলুষিত ধর্মের নামে, বাণিজ্যের নামে।

ঢাকার সাভারে দশম শ্রেণির এক ছাত্রের বিরুদ্ধে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শনিবার দুপুরে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মারধরের শিকার হন শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে তার মৃত্যু হয়। নিহত উৎপল কুমার সাভারের আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। তিনি কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতিও ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়ালেখা করেছেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার এলংজানি গ্রামে। হত্যার অভিযোগ ওঠা শিক্ষার্থীর বাড়ি আশুলিয়ায়। সে হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র। সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আসামিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারসহ ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকশিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার প্রথম বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়। বিক্ষোভে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করা হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো ছিল: মামলার প্রধান আসামিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার, অজ্ঞাতনামা আসামিদের গ্রেপ্তার, প্রধান আসামি ওই ছাত্রের পলাতক পরিবারের সদস্যদের আইনের আওতায় আনা, নিহত শিক্ষকের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ, স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্থানীয় ও বাইরের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার ভেদাভেদ দূর করতে আইন প্রণয়ন এবং কিশোর গ্যাং ও কিশোর অপরাধ দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বুধবার দ্বিতীয় দিনের মত বিক্ষোভ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কলেজের সামনের সড়কে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এদিকে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত স্কুলছাত্রের বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল অভিযুক্তকে গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়ছে। এর আগে একজন বিজ্ঞান শিক্ষককে কথিত ধর্ম অবমাননার দায়ে গ্রেফতার করা হয়। তারপর একজন শিক্ষককে প্রশাসনের নাকের ডগায় জুতোর মালা পরানো হয়। এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। একটি গোষ্ঠি অসৎ উদ্দেশ্যে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির পায়ঁতারা করছে।

আমরা মনে করি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষককে একজন ছাত্র এভাবে পিটিয়ে মারার মধ্য দিয়ে সামাজিক বিশৃঙ্খলা নৈরাজ্যের চরম বার্তা দিচ্ছে। এহেন ন্যাক্কারজনক ঘৃণিত কাজের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হল আমরা নিদারুণ এক সামজিক অবক্ষয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমরা আশা করি সরকার বা সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান যেন দ্রুত এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। মানুষ হিসেবে আমাদের লজ্জা নিবারণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। উন্নত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা কেবল তখনই সম্ভব যখন আমরা নিজেদের ন্যুনতম সভ্য দাবি করতে পারবো।