আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু। এরপর ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ভারত ও সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে দাঁড়াতেই পারেনি টিম টাইগার্স। নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে ডাচদের বিপক্ষেও পরাজয় এড়াতে পারেনি টিম টাইগার্স। স্বল্প রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় হেরেছে ৮৭ রানে।
কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন নেদারল্যান্ডসের অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস। নির্ধারিত ওভার শেষে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২২৯ রানে থামে ডাচবাহিনী। জবাবে নেমে ৪২.২ ওভারে ১৪২ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ছয় ম্যাচে পাঁচ পরাজয়ে বিশ্বকাপে সেমির পথ থেকে ছিটকে গেল বাংলাদেশ।
ডাচদের দেয়া লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দেখেশুনেই শুরু করেছিলেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও তানজিদ তামিম। পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে লিটন ফিরে যান আরিয়ান দত্তের শিকার হয়ে। গুড লেন্থের বল লিটনের ব্যাট স্পর্শ করে জমা হয় উইকেটরক্ষক স্কট এডওয়ার্ডসের হাতে। পরের ওভারেই তানজিদকে ফেরান ফন বিক। এডওয়ার্ডসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ১৬ বলে ১৫ রান করে।
১৯ রানে দুই ব্যাটারকে হারিয়ে চাপে পড়া টাইগারদের হাল ধরেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ৩৬ রানের জুটি গড়ে ফিরে যান শান্ত। বরাবরের মতই এদিনও ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন শান্ত। ১৮ বলে ৯ রান করে ফন বিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ফল মিকেরেনের হাতে।
১৬তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ৬৩ রানে সাকিবকে ফেরান মিকেরেন। ১৪ বলে ৫ রান করে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। ১৭ ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজকে ফেরান বাস ডে লেডে। ৪০ বলে ৩৫ রান করেন মিরাজ।
পরের ওভারে মুশফিকুর রহিমকে তৃতীয় শিকার বানান মিকেরেন। সরাসরি বোল্ড হয়ে ফিরে যান ৫ বলে ১ রান করে।
সপ্তম উইকেট জুটিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও শেখ মেহেদী হাসান ৩৮ রান তোলেন। ৩০তম ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় ১০৮ রানে রানআউট হয়ে ফিরে যান শেখ মেহেদী। ৩৮ বলে ১৭ করেন টাইগার অলরাউন্ডার।
৩৩তম ওভারের তৃতীয় বলে মাহমুদউল্লাহকে ফেরান ডে লেডে। আর তাতেই ম্যাচ থেকে পুরোপুরি ছিটকে যায় বাংলাদেশ।
৪২তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ১৪২ রানে কলিন অ্যাকেরম্যানের শিকার হন মোস্তাফিজুর রহমান। ৩৫ বলে ২০ রান করেন মোস্তাফিজ। পরের ওভারেই তাসকিনকে ফেরান মিকেরেন। ৩৫ বলে ১১ রান করেন তাসকিন।
ডাচদের হয়ে পল ফন মিকেরেন নেন চারটি উইকেট। ডে লেডে নেন দুটি। এছাড়া অ্যাকেরম্যান, আরিয়ান দত্ত ও ফন বিক নেন একটি করে উইকেট।
এর আগে নেদারল্যান্ডসের ইনিংসের শুরুতেই দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দেয় বাংলাদেশ। ডাচ অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি বাঁহাতি ওপেনার বিক্রমজিৎ সিং। দ্বিতীয় ওভারে পেসার তাসকিন আহমেদের বলে লংঅনে ক্যাচ তুলে দেন এ ব্যাটার, করেন ৩ রান।
বিক্রমের পথ অনুসরণ করেন আরেক ওপেনার ডানহাতি ম্যাক্স ও’ডাউড। তৃতীয় ওভারে কোনো রান যোগ করার আগেই বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলামের বলে ক্যাচ দেন। ক্যাচ নিতে ভুল করেননি স্লিপে থাকা তানজিদ হাসান তামিম।
৪ রানে দুই ব্যাটারকে হারিয়ে চাপে পড়া ডাচদের টেনে তোলেন কলিন অ্যাকেরম্যান ও ওয়েসলি বারেসি। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫৯ রান তোলেন তারা। ১৪তম ওভারের তৃতীয় বলে মোস্তাফিজ ফেরান বারেসিকে। ৪১ বলে ৪১ রান করে টপ এজ হয়ে ধরা দেন সাকিব আল হাসানের হাতে। পরের ওভারেই সাকিব ফেরান অ্যাকেরম্যানকে। ৩৩ বলে ১৫ রান করা অ্যাকেরম্যান মোস্তাফিজের তালুবন্দি হয়ে ফেরেন।
১৬তম ওভারে ফের বলে আসেন মোস্তাফিজুর রহমান। ওভারের দ্বিতীয় বলে এডওয়ার্ডসকে ফেরানোর সুযোগ আসে টাইগারদের সামনে। গালিতে থাকা লিটন দাস ড্রাইভ দিয়েও তালুবন্দি করতে পারেননি বল। একবল পরেই ফের জীবন পান ডাচ অধিনায়ক। মোস্তাফিজের অফস্টাম্পের ডেলিভারিতে খোঁচা লাগিয়ে ক্যাচের সুযোগ দেন উইকেটের পেছনে। তবে বল গ্লাভসবন্দি করতে ব্যর্থ হন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম।
পঞ্চম উইকেট জুটিতে এডওয়ার্ডস ও ডে লেডে মিলে ৭৪ বলে ৪৪ রান তোলেন। ২৭তম ওভারে ডে লেডেকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন তাসকিন। মুশফিকের হাতে ক্যাচ দেন ডে লেডে। আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেন সাকিব। আর তাতেই মিলে সফলতা। ৩২ বলে ১৭ রান করেন ডে লেডে।
ডে লেডে ফেরার পর ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখটকে নিয়ে ৭৮ রানের জুটি গড়েন এডওয়ার্ডস। তিন চারে ৭৮ বলে ডাচ অধিনায়ক পূর্ণ করেন ফিফটি।
৪২.৫ ওভারে ফের আরও একটি উইকেট তোলার সুযোগ হারায় বাংলাদেশ। মোস্তাফিজের বলে ক্যাচ তুলে দেন এঙ্গেলব্রেখট। ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। ২৯ রানে জীবন পান এঙ্গেলব্রেখট।
৪৫তম ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ১৮৫ রানে এডওয়ার্ডসকে ফেরান মোস্তাফিজ। এবার আর ক্যাচ হাতছাড়া করেননি মিরাজ। পয়েন্টে বল তালুবন্দি করেন টাইগার অলরাউন্ডার। ৮৯ বলে ৬৮ রান করেন এডওয়ার্ডস।
পরের ওভারে এঙ্গেলব্রেখটকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে ফেরান শেখ মেহেদী হাসান। রিভিউ নিয়েও সে যাত্রায় রক্ষা হয়নি ডাচ অলরাউন্ডারের। ৬১ বলে ৩৫ রান করে ফেরেন।
৪৮তম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ১৯৫ রানে অষ্টম উইকেট হারায় নেদারল্যান্ডস। শেখ মেহেদীর বল মিডউইকেটে ঠেলে প্রথম রান পূর্ণ করেন শারিজ। দ্বিতীয় রান নেয়ার সময় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দুর্দান্ত থ্রুতে স্টাম্প ভেঙে দেন মুশফিক। রানআউট হয়ে ফিরে যান ৮ বলে ৬ রান করা শারিজ আহমেদ।
৪৯তম ওভারের পঞ্চম বলে আরিয়ান দত্তকে ফেরান শরিফুল ইসলাম। মিরাজের তালুবন্দি হয়ে ফেরেন ৬ বলে ৯ রান করা আরিয়ান দত্ত।
ইনিংসের শেষ ওভারে ১৭ রান দেন শেখ মেহেদী। দুটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান লোগান ফন বিক। পঞ্চম বলে সিঙ্গেল নিয়ে পল ফন মিকেরেনকে স্ট্রাইকে পাঠান তিনি। শেষ বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান মিকেরেন। ফন বিক ১৬ বলে ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন।
টাইগার বোলারদের হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ, শেখ মেহেদী, শরিফুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়া সাকিব আল হাসান নেন একটি উইকেট।