আরেকটি বিশ্বকাপ যখন দুয়ারে কড়া নাড়ে, তখন আগের আসরগুলোতে সর্বাধিক রান, উইকেট এবং ক্যাচের রেকর্ডগুলো নিয়ে আলোচনা হয়ে দাঁড়ায় অবধারিত। কোন রেকর্ডগুলো ভাঙবে, কোনগুলো টিকে রইবে, তা নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের থাকে বাড়তি উন্মাদনা।
দিনের হিসাব পেরিয়ে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসর মাঠে গড়াতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। এবারের টুর্নামেন্টে কয়েকটি রেকর্ড রয়েছে হুমকির মুখে। কোনোটিতে রয়েছে নিজেকে ছাড়িয়ে অনন্য উচ্চতায় ওঠার সুযোগ।
সাকিব আল হাসান, রোহিত শর্মা, জস বাটলার, ডেভিড ওয়ার্নার সহ সাদা বলের তারকারা টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিংয়ে বড় মাইলফলকে পা রাখতে পারেন।
২০ ওভারের বিশ্বমঞ্চে এবার ১০টি রেকর্ড ভাঙার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্ব আসর শুরুর আগে সেগুলো একনজরে জেনে নিন।
১. মোট রান
মাহেলা জয়াবর্ধনে একমাত্র ব্যাটার যিনি একাধিক বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক ৩১ ম্যাচ খেলে করেছিলেন ১,০১৬ রান।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে অবস্থান করা ক্যাবিবীয়ান ব্যাটিং দানব ক্রিস গেল ৩৩ ম্যাচে করেছিলেন ৯৬৫ রান। জয়াবর্ধনের মতো অবসরে যাওয়া স্বদেশী তিলকরত্নে দিলশানের ৩৫ ম্যাচে সংগ্রহ ৮৯৭ রান।
জয়াবর্ধনের রেকর্ড ভাঙার দৌড়ে আছেন ভারতীয় দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। ৩৩ ম্যাচে রোহিত করেছেন ৮৪৭ রান। তার চেয়ে মাত্র ২ রান কম করা কোহলির, খেলেছেন ২১ ম্যাচ। দৌড়ে খানিকটা পিছিয়ে থাকলেও ব্যাট হাতে ধারাবাহিকভাবে রানের ফোয়ারা ছোটালে রেকর্ড ভাঙতে পারেন অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। ৩০ ম্যাচে তার উইলো থেকে এসেছে ৭৬২ রান।
২. মোট সেঞ্চুরি
টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে মাত্র আটজন ব্যাটার করেছেন সেঞ্চুরি। শুধুমাত্র দুইবার সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন ক্রিস গেইল। গত বিশ্বকাপের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান ছিলেন জশ বাটলার। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে হওয়া বিশ্ব আসরে শতক হাঁকিয়েছিলেন অ্যালেক্স হেলস। সেঞ্চুরির সংখ্যায় গেইলকে স্পর্শ করা কিংবা তাকে কেউ ছাড়িয়ে যাবেন কি না, তা বলবে সময়। বাকি যারা সেঞ্চুরি করেছিলেন, তারা সবাই টি-টুয়েন্টি থেকে অবসরে চলে গেছেন।
৩. মোট উইকেট
বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এখন পর্যন্ত হওয়া সাতটি টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের সবকটিতে খেলেছেন। বল হাতে তিনি ৩১ ম্যাচে ৪১ উইকেট নিয়েছেন। টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে তিনিই সর্বাধিক উইকেট শিকারি।
সাকিবের পর তালিকার পরের স্থানগুলোতে যারা আছেন, তারা সবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। ভারতের অফ-স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন ১৮ ম্যাচে পেয়েছেন ২৬ উইকেট। মিচেল স্টার্ক পেয়েছেন ২৪ ও টিম সাউদি পেয়েছেন ২২ উইকেট। তাই সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা সাকিব নিজেকে আরও ছাড়িয়ে যাওয়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।
সুপার টুয়েলভ পর্বে ৫টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশের জার্সিতে সাকিবের অনন্য মাইলফলকে পা রাখতে পারেন। এবারের আসরে ৯ উইকেট পেলেই মি.অলরাউন্ডার হবেন বিশ্বকাপের সব আসর মিলিয়ে প্রথম ৫০ উইকেট শিকারি বোলার।
৪. মোট হাফ সেঞ্চুরি
ভারতের সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলি এখন পর্যন্ত ২০ ওভারের বিশ্বকাপে ১০ বার হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। নিজের গড়া রেকর্ডটি তার সামনে আরও বাড়িয়ে নেয়ার দারুণ সুযোগ থাকছে।
ক্রিস গেইল দ্বিতীয় সর্বাধিক ৯টি হাফ সেঞ্চুরির মালিক। কোহলিকে টপকে যাওয়ার সুযোগের সামনে আছেন রোহিত শর্মা। তার মোট হাফ সেঞ্চুরির সংখ্যা ৮টি।
৫. টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের এক আসরে সবচেয়ে বেশি রান
বিরাট কোহলি ২০১৪ সালের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে ৩১৯ রান করেন। বিশ্বমঞ্চে এক আসরে সর্বাধিক রানের এ রেকর্ড এখনো অক্ষত রয়েছে। দীর্ঘ রান খরা কাটানোর পর এশিয়া কাপে হেসেছে তার ব্যাট। তাই অস্ট্রেলিয়ায় নিজের রেকর্ড ৩৩ বর্ষী ব্যাটার ভাঙাটা মোটেও বিস্ময়কর হবে না।
কোহলির রেকর্ড ভাঙতে পারেন এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে রয়েছেন- রোহিত শর্মা, ডেভিড ওয়ার্নার, মোহাম্মদ রিজওয়ান, সূর্যকুমার যাদব, বাবর আজম ও জস বাটলার।
৬. এক ম্যাচে সর্বাধিক ৪ উইকেট শিকার
এই রেকর্ডেও সবার উপরে যার নামটি শোভা পাচ্ছেন, তিনি টাইগার সাকিব আল হাসান। যদিও এককভাবে নয়, সাবেক পাকিস্তানি স্পিনার সাঈদ আজমলও তার সঙ্গে রয়েছেন। বিশ্বকাপে তারা যৌথভাবে সর্বাধিক তিনবার ৪ বা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন।
এবার আজমলকে ছাড়িয়ে এককভাবে রেকর্ডের মালিক বনে যেতে পারেন সুপার-৭৫। কোনো একটি ম্যাচে ৪ কিংবা তার অধিক উইকেট পেলেই এককভাবে শীর্ষে তার নাম থাকবে। যদিও কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন। দুইবার ৪ বা তার বেশি উইকেট পাওয়া দ্য ফিজকে অবশ্য নিজের পুরনো রূপে ফিরতে হবে।
৭. এক আসরে সবচেয়ে বেশি উইকেট
শ্রীলঙ্কার স্পিনার ভানিডু হাসারাঙ্গা ২০২১ বিশ্বকাপে ১৬ উইকেট নিয়ে সর্বাধিক উইকেট শিকারি হন। বিশ্বকাপের কোনো এক আসরে এটিই সবচেয়ে বেশি উইকেট নেয়ার রেকর্ড।
আফগানিস্তানের স্পিনার রশিদ খানের মতো ইনফর্ম বোলার এবার হাসারাঙ্গার রেকর্ড ভেঙে দিতে পারেন। তবে গত বিশ্বকাপে ১৩ উইকেট পাওয়া কিউই পেসার ট্রেন্ট বোল্ট ও অস্ট্রেলিয়ান লেগস্পিনার অ্যাডাম জাম্পাও নজরে থাকবেন।
মাত্র ছয় বোলার বিশ্বকাপের কোন এক আসরে ১৩ বা তার বেশি উইকেট পেয়েছেন। সাবেক পাকিস্তানি পেসার উমর গুল একমাত্র বোলার হিসেবে দুইবার এ কীর্তি গড়েন। ২০০৭ ও ২০০৯ বিশ্বকাপে ১৩ উইকেট দখল করেন।
৮. মোট ক্যাচ
সাউথ আফ্রিকার সাবেক তারকা এবি ডি ভিলিয়ার্স উইকেটরক্ষকের পাশাপাশি মাঠে ছিলেন নির্ভরযোগ্য এক ফিল্ডার। টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বাধিক ২৩ ক্যাচ নেয়ার রেকর্ডটি তার দখলেই রয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের সাবেক ওপেনার মার্টিন গাপটিল নিয়েছেন ১৯ ক্যাচ। তালিকার তৃতীয় স্থানে থাকা ক্যাঙ্গারুদের ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ধরেছেন ১৮ ক্যাচ। ওয়ার্নারের সামনে রেকর্ডটি ভাঙার কিছুটা সম্ভাবনা রয়েছে। টিম ইন্ডিয়ার কাপ্তান রোহিত শর্মা নিয়েছেন ১৫ ক্যাচ।
৯. মোট ডিসমিসাল
সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির মোট ৩২টি ডিসমিসালের রেকর্ডটি বেশ নিরাপদ অবস্থানে আছে। এবারের বিশ্বকাপে খেলার অপেক্ষায় থাকা সাউথ আফ্রিকার উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি ককের ডিসমিসাল সংখ্যা ১৫টি। অস্ট্রেলিয়ান উইকেটরক্ষক ম্যাথু ওয়েড ১৪টি ডিসমিসালের অধিকারী। তারা এবার না পারলেও ডিসমিসালের সংখ্যা বাড়িয়ে ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জ জানাতেই পারেন।
১০. এক আসরে সবচেয়ে বেশি ডিসমিসাল
টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের কোনো এক আসরে কোনো উইকেটরক্ষক এখনও ১০টি ডিসমিসাল করতে পারেননি। সর্বাধিক নয়বার ডিসমিসাল করেছেন যৌথভাবে এবি ডি ভিলিয়ার্স, অ্যাদাম গিলক্রিস্ট, কুমার সাঙ্গাকারা, ম্যাথু ওয়েড ও কামরান আকমল।
গত বিশ্বকাপে ৯ ডিসমিসাল করা ওয়েড এবার সবাইকে ছাড়াতে পারেন। ২০১৪ বিশ্বকাপে ৮ ডিসমিসাল করা ডি ককও ভাঙতে পারেন রেকর্ড। তবে যেকোনো দলের উইকেটরক্ষকের সামনেই রেকর্ড ভাঙার সুযোগ আসতে পারে।