চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

পুনরাবৃত্তি-প্রতিশোধ, নাকি ট্রফি ভাগাভাগি?

ইংল্যান্ড-পাকিস্তান ফাইনাল

বিদায়লগ্নের দুয়ারে দাঁড়িয়ে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ। প্রথম রাউন্ড, সুপার টুয়েলভ ও সেমিফাইনালে ৪৪ ম্যাচের যাত্রা পেরিয়ে এবার ফাইনাল মহারণ দেখার অপেক্ষা। শিরোপার মঞ্চে ব্যাট-বলের লড়াইয়ে নামবে দুই সাবেক চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান।

এই দুই প্রতিপক্ষ যখন মুখোমুখি হওয়ার সামনে দাঁড়িয়ে, উঁকি দিচ্ছে ১৯৯২ বিশ্বকাপের স্মৃতি। ওয়ানডে ফরম্যাটের সেই বিশ্বকাপে ফাইনালের ভেন্যুও ছিল মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এমসিজি)। ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল পাকিস্তান।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

৩০ বছর আগের সেই অতীতের মতো এবারও অনেককিছু মিলে যাচ্ছে। খাদের কিনারা থেকে সেবার পাকিস্তান সেমিফাইনাল ও ফাইনালে উঠেছিল। লিগ পর্বে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৪ রানে অলআউট হওয়ার পরও নিশ্চিত হারের মুখ থেকে রক্ষা পেয়েছিল। বৃষ্টির কারণে ম্যাচ হয় পণ্ড। রানরেটে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে ছিল। কিন্তু পরিত্যক্ত ম্যাচ থেকে পাওয়া এক পয়েন্টের সুবাদে অজিদের টপকে কোনোমতে চারে থেকে সেমিতে গিয়েছিল ইমরান খানের দল। সেমিতে নিউজিল্যান্ড ও ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন।

এবারের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপেও খাদের কিনারাতেই ছিল পাকিস্তান। সুপার টুয়েলভে শেষ ওভারের নাটকীয়তায় ভারত ও জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে দলটি বিদায়ঘণ্টা শুনতে পায়। পরের দুম্যাচে জিতলেও সম্ভাবনা কেবল কাগজে-কলমেই টিকে ছিল। তখন অবিশ্বাস্য কাণ্ড ঘটিয়ে সুবিধা করে দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। শক্তিশালী সাউথ আফ্রিকাকে হারিয়ে তারা সব সমীকরণ পাল্টে দেয়। বিশ্বকাপ থেকে প্রোটিয়াদের বিদায় করে দেয়। পরে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ হয়ে ওঠে অঘোষিত কোয়ার্টার ফাইনাল।

ইতিহাসে প্রথমবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান বিতর্কিতভাবে এলবিডব্লিউ হয়ে ক্রিজ ছাড়তে বাধ্য হন। এমন ঘটনায় ম্যাচটি আলোচিত ছিল। নাজমুল হোসেন শান্তর ফিফটি, বাকিদের ব্যর্থ ও দৃষ্টিকটু পারফরম্যান্সে ডোবে টাইগাররা। ম্যাচ জিতে সেমিতে যায় পাকিস্তান।

ডাচদের বিপক্ষে হার তো বটেই, বিস্ময়করভাবে ১৯৯২ বিশ্বকাপের মতো আবারও সাউথ আফ্রিকার দুঃখের কারণ হয় বৃষ্টি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বৃষ্টিবিঘ্নিত খেলায় একপর্যায়ে প্রোটিয়াদের জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৭ ওভারে ৬৪ রান। কুইন্টন ডি ককের ১৮ বলে ৪৭ রানের ঝড়ো ইনিংসে তারা ৩ ওভারে বিনা উইকেটে ৫১ রান তুলে ফেলেছিল। পরে বৃষ্টির জন্য ন্যুনতম ৫ ওভার বল মাঠে না গড়ানোয় খেলাটি পরিত্যক্ত হয়। এমনটি না হলে পাকিস্তানের সমান ৬ পয়েন্ট তাদের থাকতো, সঙ্গে রানরেটেও এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ১৯৯২’র মতো সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে পাকিস্তান বৃষ্টির সহায়তা পায়।

কাকতালীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় শেষ চারেও। ১৯৯২’র বিশ্বকাপের মতো এবারও মুখোমুখি নিউজিল্যান্ড-পাকিস্তান। ফলাফলটাও যায় মিলে। কিউইদের হারিয়ে পাকিস্তান ফাইনালে পৌঁছে যায়। আরেক সেমিতে ভারতকে ১০ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটে। তাতে ৩০ বছর আগের মতো সেই ইংল্যান্ডই হয়েছে ফাইনালের প্রতিপক্ষ।

অবশ্য কোনোভাবেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি চায় না ইংল্যান্ড। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে আসর শুরু করে দ্বিতীয় ম্যাচেই ছিল হোঁচট। ইংলিশদের হারিয়ে রূপকথার জন্ম দেয় আয়ারল্যান্ড। পরে বৃষ্টিতে ম্যাচ পণ্ড হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ইংলিশদের করতে হয় পয়েন্ট ভাগাভাগি।

শেষ দুই খেলায় নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সুপার টুয়েলভ পর্বে জশ বাটলারের দলের পয়েন্ট দাঁড়ায় ৭। নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার পয়েন্টও ৭ করে ছিল। আসে রানরেটের হিসাব। রানরেটে শক্ত অবস্থানে থাকায় নিউজিল্যান্ড গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ও ইংল্যান্ড গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে সেমির টিকিট কাটে। শেষ চারের আগে বাদ পড়ে অস্ট্রেলিয়া। স্বাগতিক দেশ হিসেবে ১৯৯২ সালেও অজিরা সেমিতে খেলতে পারেনি। এবারও একই দৃশ্যের অবতারণা।

সেমিফাইনালে ভারতের দেয়া ১৬৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অ্যালেক্স হেলস ও অধিনায়ক জস বাটলার ২২ গজে সাইক্লোন তৈরি করেন। টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে ওপেনিংয়ে সর্বোচ্চ ১৭০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ইংল্যান্ডকে ১০ উইকেটে জিতিয়ে ফাইনালে তোলেন।

টি-টুয়েন্টিতে মুখোমুখি লড়াইয়ে এর আগে ইংল্যান্ড এবং পাকিস্তান ২৮টি ম্যাচে নেমেছে। ইংল্যান্ড ১৮টি জয় তুলেছে, পাকিস্তান জিতেছে ৯ ম্যাচে। একটি ম্যাচ হয় পরিত্যক্ত।

ইংল্যান্ড যে ১৮ ম্যাচে জিতেছে, এরমধ্যে ৭টি ছিল ঘরের মাঠে, ৪টি পাকিস্তানের মাঠে ও বাকি ৭টি নিরপেক্ষ ভেন্যুতে। বিশ্বকাপের মঞ্চে দুবারের দেখায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আগে একবারও জিততে পারেনি পাকিস্তান।

পাকিস্তানের অবশ্য টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে রেকর্ড বেশ ভালো। প্রথম আসরে শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে হয়েছিল রানার্সআপ। দ্বিতীয় আসরে হয় চ্যাম্পিয়ন। চারবার খেলেছে সেমিফাইনালে, ফাইনালে এই নিয়ে তিনবার।

প্রথম দুই আসরে গ্রুপপর্বে বাদ পড়া ইংল্যান্ড ২০১০ সালে তৃতীয় আসরে হয় চ্যাম্পিয়ন। পরের দুই বিশ্বকাপে আবারও গ্রুপপর্বেই তাদের বিদায় নিতে হয়। ২০১৬ বিশ্বকাপে শেষ ওভারে ক্যারিবীয়দের কাছে হেরে হয় রানার্সআপ। গত আসরে খেলেছিল সেমিফাইনাল।

প্রথম সেমির ভেন্যু মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে এ দুদল কখনোই ২০ ওভারের ক্রিকেটে মুখোমুখি হয়নি। পরিসংখ্যান বলছে, ১৬৯ বছরের ইতিহাস ধরে রাখা এমসিজিতে হয়েছে ২১টি আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি।

আগে ব্যাটিং করা দল জিতেছে ৭ বার, হেরেছে ১০ বার। চারটি ম্যাচ হয়েছিল পরিত্যক্ত। এবারের বিশ্বকাপে আগে ব্যাট করা দল জিতেছে দুবার, রান তাড়া করে জয়ের নজির তিনবার। বৃষ্টিতে ৩ ম্যাচ ভেসে গেছে।

সিডনিতে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ইফতিখার আহমেদ এবং শাদাব খান ৩৬ বলে ৮২ রানের জুটি গড়েন। এটিই ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। ওই ম্যাচে বল হাতে শাদাব রাখেন বড় ভূমিকা, ১৬ রান খরচায় নেন ২ উইকেট। সেমিফাইনালে বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান তুলে নেন কার্যকরী ফিফটি, গড়েন ১০৫ রানের উদ্বোধনী জুটি। ফাইনালে এ চার খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্সের উপর অনেকটা নির্ভর করতে হতে পারে পাকিস্তানকে।

আবার সব আলো কেড়ে নিতে পারেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। পেস বোলিংয়ে গতি ও নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে টুর্নামেন্টে তুলে নিয়েছেন ১০ উইকেট। লেগ স্পিনে শাদাবও নিয়েছেন ১০ উইকেট, তাকে ইংলিশ ব্যাটারদের দেখেশুনেই খেলতে হবে।

ফাইনাল লড়াইয়ের আগ পর্যন্ত কেবল দুই ইংলিশ ব্যাটারের হাতে রান দেখেছে ইংল্যান্ড। ৫ ম্যাচে অ্যালেক্স হেলসের সংগ্রহ ২১১ রান। অধিনায়ক জস বাটলারের থেকে ১৯৯ রান এসেছে। বেন স্টোকস, মঈন আলীদের থেকে দলের পাওনা বাকি রয়েছে।

বোলিংয়ে ৪ ম্যাচে ৭.২৮ ইকোনমি রেটে মাত্র ১৩.৬০ গড়ে ১০ উইকেট নিয়ে সেরা ছন্দে আছেন স্যাম কারেন। ১২ গড়ে মার্ক উডের শিকার ৯ উইকেট। ইনজুরিতে পড়ায় সেমিতে উডের খেলতে না পারাটা ছিল বড় ধাক্কা। ফাইনালের আগে তার সুস্থতা থ্রি লায়ন্সদের সবচেয়ে বড় চাওয়া। বেন স্টোকসের ঝুলিতে ৫ উইকেট। শিরোপা জিততে পেসারদের পাশাপাশি স্পিন আক্রমণে আদিল রশিদ ও মঈন আলীকে রাখতে হবে বড় ভূমিকা।

ফাইনালে ব্যাট-বলের লড়াইয়ে বাগড়া দিতে হাজির হতে পারে বৃষ্টি। রোববার শিরোপা নির্ধারণী খেলার দিন তো বটেই, পরদিন সোমবার রিজার্ভ ডে-তেও বৃষ্টি ঝরার সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, রোববার ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা শতকরা ৯৫ ভাগ। এদিন ১৫ থেকে ২৫ মিলিমিটার পরিমাণ বৃষ্টি হতে পারে। বজ্রপাতসহ ঝড়ের কবলেও পড়তে পারে মেলবোর্ন। রিজার্ভ ডে অর্থাৎ সোমবারেও বৃষ্টির সম্ভাবনা শতকরা ৯৫ ভাগ।

আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, ডিএলএস পদ্ধতিতে খেলার ফলাফল বের করতে কমপক্ষে ৫ ওভারের ম্যাচ হতে হবে। তবে এবারের বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল ও ফাইনালের জন্য করা হয়েছে ভিন্ন নিয়ম। ফলাফল বের করতে হলে কমপক্ষে ১০ ওভারের খেলা হতেই হবে।

ফাইনালের নির্ধারিত দিন রোববার বৃষ্টি হলে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে ১০ ওভার অন্তত যেন বল মাঠে গড়ায়। সেটি সম্ভব না হলে রিজার্ভ ডে-তে খেলা হবে। যদি খেলাটি রোববার শুরু হয় এবং শেষ হতে না পারে, তাহলে খেলাটি যে অবস্থায় থেমেছিল রিজার্ভ ডে-তে ঠিক সেখান থেকেই আবারও শুরু হবে।

যদি খেলা রোববার শুরু হয় এবং সেখানে ওভার কমানো হয়, কিন্তু আবহাওয়ার কারণে খেলা পুনরায় শুরু করার সুযোগ না থাকে, খেলাটি রিজার্ভ ডে-তে তখন ২০ ওভারের হবে।

ফাইনাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায়) শুরু হবে। মূল দিনে মাত্র ৩০ মিনিট অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ থাকবে। তবে রিজার্ভ ডে-তে খেলা গড়ালে সেটি স্থানীয় সময় দুপুর ৩টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা) আরম্ভ হবে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত দুই ঘণ্টা সময় পাওয়া যাবে।

কোনোভাবেই ম্যাচ মাঠে না গড়ালে দুই ফাইনালিস্টকে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হবে। এমন হলে প্রথমবার টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট পাবে একসঙ্গে দুই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।