হাউস বোট বলতে যা বোঝায়, সেগুলো সাধারণত ভারত (কাশ্মীরের ডাল লেকে), ভিয়েতনাম, চায়না, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে দেখা যায়। আমাদের রাঙ্গামাটিতেও এই ধরনের হাউস বোট চালু রয়েছে, সে তথ্যটি প্রথম পাই আমার এক সময়ের সহকর্মী নাহরিন রহমান স্বর্ণার কাছ থেকে।
রাঙামাটির কাপ্তাইলেকে ‘মায়ালীন’ নামে হাউজ বোটের সে অন্যতম শেয়ার হোল্ডার। তার প্ররোচনাতেই আমরা ১০ জনের একটা টগবগে টিম রাঙামাটি ভ্রমণের তৈরি হই। নদীর মধ্যে ভেসে থাকা, খাওয়া-ঘুমানো-বেড়ানো, রাত্রিযাপনের জন্য আলাদা কোনো হোটেল-রিসোর্টের প্রয়োজন হবে না। এর চেয়ে চমৎকার আর কী হতে পারে?
ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কলাবাগান কাউন্টারে একত্র হয়ে সেন্ট মার্টিন পরিবহনের রবি এক্সপ্রেসে রাত ১১টায় আমরা রাঙামাটির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি। পথে রঙ্গ-তামাসা করতে করতেই সকাল হয়ে যায়।
সকাল সাড়ে ৭ টার মধ্যেই আমরা রাঙ্গামাটি পৌঁছে যাই। বাস থেকে নেমে সিএনজি অটোরিক্সায় চেপে আমরা আসাম বস্তির উদ্দেশে যাত্রা করি। আধাঘণ্টার মধ্যে সেখানে পৌঁছে আমরা চিলেকোঠা ক্যাফে অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে হাতমুখ ধুয়ে খিচুড়ি, মুরগীর মাংস, আর চা দিয়ে সকালের নাস্তা করি।
নাস্তা শেষ হতেই আমাদের নিতে আসে ‘মায়ালীন’-এর গাইড কল্যাণ। সে হাসিখুশি সপ্রতিভ একটা ছেলে। কল্যাণ আমাদের পথ দেখিয়ে পাশের একটি ঘাটে নিয়ে যায়। ঘাটে একটি ছোট ফাইবার বোট আমাদেরকে ডিভাইন লেক আইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল।
বসন্তের বাতাসে কাপ্তাইয়ের নীল জলের মধ্যে হাঁসের মতো সাঁতার কাটতে কাটতে আমাদের ছোট্ট ইঞ্জিন নৌকাটি এগিয়ে চললো। দূরে পাহাড়। লেকের মাঝে ছোট ছোট টিলা। নির্জন, কোলাহলহীন। সকালের কাঁচা-সোনা রোদে লেকের জল চিক চিক করছিল।
আধাঘণ্টা নৌপথ পাড়ি দিয়ে আমরা গেলাম ডিভাইন লেক আইল্যান্ডে। আইল্যান্ডের ওপরে সুন্দর একটা রিসোর্ট। আমরা রিসোর্টে বসে লেকের সৌন্দর্য দেখছিলাম। আমাদের চেক-ইনের সময় দুপুর বারোটা। এই সময়টা আমরা গল্প-আড্ডায় কাটিয়ে দিলাম। সেখানে আরেক দফা চা পান করলাম।
অবশেষে, সাড়ে এগারটার দিকে আমরা ভাসমান ভিলা মায়ালীন-এ প্রবেশ করার সুযোগ পেলাম। প্রথম দর্শনেই আমরা এর অতুলনীয় সাজ-সজ্জা দেখে বিমোহিত হয়েছি। প্রথমেই দুটি বাঙ্ক বেডসহ চারটি জমকালো এসি কেবিন। কেউ সহজেই এই এসি কেবিনগুলিকে অত্যাধুনিক বেডরুমের সঙ্গে তুলনা করতে পারে। বিছানার চাদর থেকে দেয়াল এবং ছাদ পর্যন্ত সাদার বিভিন্ন শেডে সজ্জিত।
এর ভেতরে বিছানার চাদর থেকে শুরু করে দেয়াল ও ছাদ পর্যন্ত সাদার বিভিন্ন শেডের কেবিনগুলো শোভা পাচ্ছে। এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে স্বচ্ছ কাচের দেয়াল দিয়ে চারপাশ ঘেরা। ঘরের মধ্যে বসে চারদিকের প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখার সুযোগ। কাঁচের দেয়ালগুলো স্লাইড করে খোলা ও বন্ধ করা যায়। ফলে ইচ্ছে হলে প্রকৃতির বাতাস উপভোগ করা যায়। আবার ইচ্ছে হলে এসি-ফ্যান চালু করে শহুরে জীবনও উপভোগ করা যায়!
ভেতরে একটা বড় টেলিভিশন, কমন লাউঞ্জ, ডেকে বসার ব্যবস্থা, একটি জুস বারসহ দোতলার ছাদে লাউঞ্জ, বাচ্চাদের জন্য আর্কেড গেমিং জোন এবং একটি বহনযোগ্য সুইমিং পুল রয়েছে। গোপনীয়তা বজায় রেখে একটি জ্যাকুজির ব্যবস্থাও রয়েছে, যাতে লোকেরা বাইরের প্রকৃতি উপভোগ করতে পারে। চাঁদ, তারা, নক্ষত্র দেখার
জন্য রয়েছে একটি বিশাল টেলিস্কোপ।
আমরা মায়ালীনের ভেতরে প্রবেশ করে মুগ্ধ হয়ে যাই। দেয়ালের পাশে ছোট একটা কাঠের টেবিলে পানির বোতল। তার পাশে মোটা কাগজ দিয়ে বানানো একটা এক ফুট দৈর্ঘের একটি গোল কৌটো। কৌটোটার মধ্যে একটা মুখের ছবি আছে। যে মুখটা স্বচ্ছ নীল জলে নাক অব্দি ডুবে যাওয়া। লেকের নীল জলে মায়ায় ডুবে যাওয়ার প্রতীকি ছবি হয়তো! এই কৌটোর মধ্যে টুথব্রাশ পেস্ট, বাথজেল। ধবধবে সাদা বিছানা। কুশন আর কম্বলগুলো সবুজ ঢাকনায় আবৃত।
আমাদের কাছে এটি একটি অসাধারণ ‘ভাসমান বিস্ময়’ হয়ে দেখা দিয়েছিল। লেকের নীল জলের মৃদু স্রোত বোটটিকে হালকা দোলাচ্ছিল। মনে হয়েছে, স্বর্গীয় অনুভূতির স্বাদ গ্রহণ করবার জন্যই মায়ালীন নামের এই ভাসমান ভিলা পৃথিবীতে নামিয়ে আনা হয়েছে! এটি আমাদের পুরো দেড় দিনের জন্য জীবনে এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা দিয়েছে। আমাদের ব্যস্ত শহুরে জীবনের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দিয়ে এক অনন্য অনুভূতির স্বাদ দিয়েছে।
আমরা দুপুরের উজ্জ্বল রোদে কাপ্তাই হ্রদের ঢেউ খেলানো নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেখতে বেরান্নে বা বেরাইন্না লেক ধরে এগোতে থাকি। এটা কাপ্তাই লেকেরই অংশ। চাকমা ভাষায় বেরাইন্না শব্দের অর্থ বেড়ানোর আমন্ত্রণ বা বেড়াতে যাওয়া পছন্দ করে এমন ব্যক্তি। কিছুক্ষণ চলার পর আমরা একটা নির্জন দ্বীপে গিয়ে পৌঁছাই। এখানে গাছ লাগানো হবে। মায়ালীন বোটের মালিকপক্ষ একটি নিয়ম চালু করেছে।
যারা এই বোটে ভ্রমণে আসবে তারা প্রত্যেকেই এই দ্বীপে এসে একটি প্রতীকী গাছ রোপণ করবে। পরে কোনো লোকালয়ে এই গাছটি পরিচর্যার জন্য প্রদান করা হবে। যেকোনো ভ্রমণে প্রকৃতির ক্ষতি হয়। সামান্য হলেও এই ক্ষতি পুষিয়ে দেবার একটা ব্যবস্থা! বিষয়টি অভিনব ও মহৎ।
এখানে আমরা লেকের জলে স্নান করার সুযোগ গ্রহণ করি। আকাশে তপ্ত সূর্য। নিচে আমরা শীতল জলে সাঁতার কাটছি। এই খরার মৌসুমেও লেকের গভীরতা অনেক। সতর্কতার জন্য আমরা সবাই লাইফ জ্যাকেট পরে বেশ খানিকক্ষণ লেকে ভেসে বেড়ালাম। এমন অসাধারণ অনুভূতি ছেড়ে সহজে উঠতে মন চাইছিল না। কিন্তু গাইড কল্যাণ আমাদের তাড়া দিতে থাকে। আমাদের দুপুরের খাবারের সময় ছিল আড়াইটা। স্নান শেষ করে পোশাক বদলাতে আমাদের সোয়া তিনটা বেজে যায়।
এবার আমাদের ভাসমান ভিলা ছুটছে অন্য গন্তব্যে। পড়ন্ত দুপুরে দিগন্ত বিস্তৃত কাপ্তাই হ্রদ যেন পরিণত হয় ঝিলমিলিয়ে ওঠা সোনালি নদীতে। প্রায় সাড়ে তিনটায় পৌঁছলাম মনোমুগ্ধকর আরেকটি রিসোর্ট বার্গি লেক ভ্যালিতে।
পাহাড়ের বিলুপ্ত একটি ঐতিহ্যবাহী পাখির নামে পর্যটন কেন্দ্রটির নামকরণ করা হয়েছে। এটি শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বার্গি লেকে রয়েছে একটি নান্দনিক রেস্তোরাঁ। রেস্তোরাঁটি তৈরি করা হয়েছে বার্গি পাখির আদলে। যেন বার্গি পাখি তার দুটি ডানা দুদিকে ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে রয়েছে পিকনিক স্পট, কায়াকিং ও ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থা। হ্রদের পাড়ে রয়েছে পাহাড়িদের বাসস্থানের আদলে তৈরি একটি মাচাংঘর।
এখানে আমরা আতপ চালের গরম ভাত মুরগির মাংস, লেকের তাজা মাছ, আলু ভর্তা, মসুর ডাল দিয়ে পেটপুরে খেলাম। খাওয়া শেষে আমরা লেকের পাড়ে দোলনায় দোল খেতে খেতে কফি পান করলাম। এখানে বসে লেকের সৌন্দর্য দেখতে খুব ভালো লাগছিল, কিন্তু আমাদের হাতে সময় ছিলো না। সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে। কাজেই আর দেরি নয়। মাঝ লেকে গিয়ে সূর্যাস্ত দেখব, মেয়েরা শাড়ি পরে ছবি ছবি তুলবে-কাজেই প্রস্তুতির একটা ব্যাপার আছে। আমরা আবার গেলাম মায়ালীনে।
এর মধ্যেই মায়ালীন চলতে শুরু করে। আমরা মায়ালীনের সামনের ডেকের খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে নানা ভঙিতে ছবি তোলার পাশাপাশি এক অপরূপ দৃশ্যের সাক্ষী হই। সূর্য দিগন্তে একটু করে হেলে পড়ছে আর রূপ বদলাচ্ছে।
হলুদ থেকে কমলা, কমলা থেকে টুকটুকে লালের বর্ণচ্ছটা ছড়িয়ে দিগন্তে হারিয়ে যাচ্ছে। এসময় আকাশে চলে বিচিত্র রঙের প্রদর্শনী। কমলা-গোলাপি-বেগুনি রঙের সেই ছোঁয়ায় রাঙে মেঘেরা, রাঙে আকাশ, রাঙে তার চারপাশ। সেই রঙের আভা ছুঁয়ে যায় আমাদের হৃদয়কেও। সূর্যাস্তের সৌন্দর্যের গভীর ভালোলাগার আবেশে আবিষ্ট হই আমরা, এক অদ্ভুত প্রশান্তি ভর করে হৃদয়মনে।
মনে হচ্ছিল হ্রদে হারিয়ে যাচ্ছে রক্তিম সূর্য, গোধূলির লাল আলোয় হ্রদের পানিতে তখন আলো-আঁধারের খুনসুটি। সন্ধ্যায় আবছা আঁধারে লেকের ঝিরঝিরে ঢেউয়ের ওপর বিচূর্ণ আলোর কারুকাজ সত্যিই বিস্ময় জাগিয়ে দেয়। ইচ্ছে হয়, সেই ঢেউয়ের কারুকাজে একটু হাত রাখি। ছুঁয়ে দেখি আলোছায়ার বিচিত্র লুকোচুরি। ঘনায়মান সন্ধ্যার অপরূপ রূপের মাধুর্য ধরে রাখি হৃদয়ে।
সর্যাস্তের পর মায়ালীন ডিভাইন লেক আইল্যান্ডে ফিরে আসে। আমরা রেস্তোরাঁয় গিয়ে চা-নাস্তা করি। নাস্তা শেষে বসে আমাদের গানের আসর। মিথুন গিটার বাজিয়ে গান ধরে। তার সঙ্গে স্বর্ণা, আফরীন, ইভানা গান গায়। বৃষ্টি, নীনা, নাজিয়া, ফাহমিদা, ববি গলা মেলায়!
আকাশে তখন তারার মেলা। জলে ভাসা ভিলায় আমাদের সঙ্গীত উৎসব। সাড়ে দশটায় আমরা চিকেন, ফিস বার-বি-কিউ দিয়ে রাতের খাবার খাই। খাবারের পরে আরেক দফা গানের আসর বসে। শেষে ডেকে গিয়ে গল্প-আড্ডা চলতে থাকে।
ঢাকার বাইরে গেলে রাতের আকাশের তারা স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়। আকাশের দিকে তাকালেই মন ভালো হয়ে যায়। পুরো আকাশে তারার মেলা, গ্রহ, নক্ষত্রের সমাহার। আবহাওয়া না গরম, না ঠাণ্ডা। অসাধারণ লাগছিল সব। ভ্রমণক্লান্তির পরও কারো মধ্যে ঘুমানোর তাড়া ছিল না। এক সময় অবসন্ন হয়ে আমরা নির্জন নক্ষত্র ভরা রাত, আর সূদুর নিহারিকাকে একলা ফেলে ঘুমাতে যাই।
খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যায় পাখির শব্দে। ঘুম থেকে উঠে বাইরে বের হয়ে কিছুক্ষণ চারপাশ দেখলাম। কি সুন্দর! কোলাহলমুক্ত নীরব পরিবেশ, বসন্তের উদীয়মান সূর্যের সাথে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের শান্ত জলরাশি আবছা সোনালী আভা দিচ্ছে। স্বচ্ছ কাঁচের দেয়াল, দূরের পাহাড়, হালকা কুয়াশায় আবৃত, স্বপ্নের মতো দেখাচ্ছে। পাখির কিচিরমিচির সুরেলা শব্দ বুনছে। পাহাড়ি বাতাসের মৃদু স্পর্শ আমাদের প্রলুব্ধ করে ঘুমানোর বদলে এই সৌন্দর্য আস্বাদ করতে।
একে একে আমরা উঠে পড়ি। এরপর আমরা ডিভাইন লেক আইল্যান্ডের রেস্তোরাঁয় পরোটা, ডাল, ভাজি, ডিম, চা ইত্যাদি দিয়ে সকালের নাস্তা করি। নাস্তা খেয়ে তৈরি হতে হতে সকাল সাড়ে দশটা বেজে যায়।
১০ টায় আমাদের মায়ালীন ছেড়ে দেয়ার কথা। সব কিছু গুছিয়ে আমরা উঠি একটি ফাইবার বোটে। এই বোট আমাদের সারাদিন রাঙামাটির বিভিন্ন আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে নিয়ে যায়। এর মধ্যে রয়েছে ঝুলন্ত সেতু, শুভলং জলপ্রপাত, অনির্বাণ নগর বৌদ্ধ মন্দির। যদিও আমরা বোটে বসে আড্ডা দিতে এবং লেকের সৌন্দর্য দেখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলাম।
বোটে স্পিকারে গান চলছিল। পাশাপাশি আমাদের গল্প-আড্ডা-শব্দ দিয়ে গানের কলি খেলা। এভাবে আমরা শুভলং জলপ্রপাত পৌঁছে যাই। সেখানে নেমে ছবি তুলে ফিরতে ফিরতে দুপুর আড়াইটা বেজে যায়। আমরা কাপ্তাই হ্রদের আরেকটি নির্জন দ্বীপে মধ্যাহ্নভোজনের জন্য বিরতি দিই। টিলার উপর ছিমছাম রেস্টুরেন্ট। নাম স্বর্গ ছেঁড়া ক্যাফে। রেস্টুরেন্ট থেকে কাপ্তাই লেকের এরিয়াল ভিউ। নিসর্গের অপূর্ব দৃশ্য।
ছোট ছোট টিলার পাশে লেকের বেষ্টনী। পাশের টিলার উপর বাঁশের কয়েকটি ঘর। চারদিকে কলা গাছ। মাথার উপর নীল আকাশ। মনে মনে ভাবি, এখানে যদি অনন্তকাল কাটানো যেত! কোনো কোলাহল নেই, বিদ্যুৎ নেই, প্রকৃতির বাতাসে মনপ্রাণ জুড়িয়ে যায়। ভোজনপর্ব শেষ করে আমরা বেশ কিছুটা সময় এখানে আরাম-আয়েসে কাটিয়ে দিই। রেস্টুরেন্টের খাবার অত্যন্ত সুস্বাদু। ছোট মাছ ফ্রাই ছিল মুচমুচে। আর ব্যাম্বু চিকেন তো অসাধারণ!
এখানকার চায়ের স্বাদও দারুণ। এক কাপে আমাদের তৃপ্তি মেটে না। পর পর দুকাপ দুধচা নিঃশেষ হয়ে যায়। আমার যখন আবার বোটে উঠলাম বেলা তখন প্রায় সাড়ে ৪ টা।
সূর্যের আঁচ তেমন একটা নেই। টুরিষ্ট বোটগুলো ফিরে চলছে। আমরাও ফিরে চলছি শহরপানে। বিভিন্ন নৌকার শব্দে পাখির ঝাঁক উড়ে যাচ্ছে। আবার তারা ভিন্ন স্থানে বসছে। এই ওড়াউড়ির দৃশ্য দেখে মনটা ভরে যায়। সূর্য তখন একটু একটু পাহাড়ের কোলে হেলে পড়তে শুরু করেছে।
সূর্যের লাল আভায় কাপ্তাইয়ের নীল জল কী যে এক অসাধারণ বর্ণ ধারণ করেছে, তা বলে বোঝানো যাবে না। এই রূপ কেবল নয়ন ভরে দেখতে হবে। এক-আধবার ছবি তোলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু
না, ক্যামেরার কী সাধ্য এমন অপরূপ সৌন্দর্যকে ধরে রাখে! অগত্যা দুই নয়ন ভরে আমরা অসামান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকলাম।
ঠিক সন্ধ্যা বেলা বোট আমাদের রিজার্ভ বাজারের ঘাটে নামিয়ে দিল। আমরা বোট চালককে টিপস দিয়ে বিদায় নিলাম। ঘাট থেকে পায়ে হেঁটেই পৌছে গেলাম রবি এক্সপ্রেসের কাউন্টারে। সেখানে ব্যাগ রেখে গেলাম তবলছড়ির টেক্সাইটাইল মার্কেটে। কিছু পাহাড়ি জিনিস কেনা-কাটা করে যখন কাউন্টারে ফিরলাম, রাত তখন সাড়ে ৮ টা। নয়টায় আমাদের গাড়ি ছাড়বে। এই সময়টুকু কাউন্টারেই কাটিয়ে দিলাম।
গাড়ি যখন ছাড়ল, আমরা সবাই সিটে শরীর এলিয়ে দিলাম। তিন দিনের ঘুমহীন দাপাদাপি, আর ঢাকায় ফিরে আবার চেনা রুটিনে দমবন্ধ জীবনে প্রত্যাবর্তনের অনিবার্যতা আমাদের শরীর-মনকে অবসন্ন করে ফেলল। ফুল ফুটুক আর না ফুটুক, কোকিলের কুহুতানে এই বসন্তের পর আবার বসন্ত আসবে। ঠিক তেমনি মায়ালীনে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের নীলাভ স্বচ্ছ জলে ভ্রমণ আমাদের স্মৃতিপটে নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বলে থাকবে।
যারা মায়ালীনে ভ্রমণ করতে চান, তাদের পুরো ভিলা রিজার্ভ করতে খরচ হতে পারে ৫৫ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে ছোট বোটের ভাড়াও অন্তর্ভুক্ত আছে। খাবারের জন্য জনপ্রতি ব্যয় হবে ২ হাজার টাকা। ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে যোগাযোগ করে রুম ভাড়া নিতে পারেন।