বৃহস্পতিবার (১ জুন) পর্দা নামলো রাশিয়ার ‘চেবাক্সারি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভাল’ এর ষোড়শ আসরের। উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশি ছবি ‘আম কাঁঠালের ছুটি’। যার ইংরেজি নাম ‘সামার হলিডে’। এটি মোহাম্মদ নূরুজ্জামান পরিচালিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাশিয়া থেকে নুরুজ্জামান জানান, ‘আম কাঁঠালের ছুটি’ নিয়ে রাশিয়া যাওয়ার অভিজ্ঞতা দারুণ। উৎসবের প্রথম দিনে লাল গালিচায় হাঁটা, ছবিটি নিয়ে সাধারণ দর্শক থেকে চেবাক্সারি চলচ্চিত্র উৎসব কর্তৃপক্ষের যে উচ্ছ্বাস দেখেছি, এটা যে কোনো পুরস্কারের চেয়ে বেশি মূল্যবান বলে মনে হয় আমার।
তিনি জানান, ছবিটি মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে ছিলো। উৎসবে ‘আম কাঁঠালের ছুটি’র দুটি শো হয়েছে। দুটি শো’তেই দর্শক ছবিটির প্রশংসা করেছেন। ছবিটির নাম কেন ‘সামার হলিডে’, ছবির মিউজিক, অ্যাম্বিয়েন্স- এসব কিছু নিয়ে অনেকেই আগ্রহ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন। যা সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করেছে।
শরীফ উদ্দিন সবুজের ছোটগল্প অবলম্বনে শিশুতোষ ঘরানার ছবি ‘আম-কাঁঠালের ছুটি’। গত শতাব্দীর সত্তর-আশি কিংবা মধ্য নব্বইয়ের দশকে যারা শৈশব-কৈশোর পার করেছেন তারা তাদের সেই বয়সের যাপিত জীবনকে নস্টালজিক আবহে তৈরি এই চলচ্চিত্রে দেখতে পাবেন বলে মনে করেন নির্মাতা। সেই সাথে হারিয়ে যাওয়া কিংবা হারাতে বসা প্রাকৃতিক পরিবেশ আর আমাদের নিজস্ব লোকজ সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হবে নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোররা।
কারো সাথে মিশতে না পারা আট বছর বয়সী একটি শহুরে ছেলে গ্রীষ্মের ছুটিতে গ্রামে বেড়াতে এসে কীভাবে নতুন এক জগৎ আবিষ্কার করে, খুঁজে পায় বন্ধুত্বতা আর রোমাঞ্চের স্বাদ তারই আখ্যান এই পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।
এরআগে গত বছর নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অনুষ্ঠিত ‘জগজা নেটপ্যাক এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভাল’ এ ‘আম-কাঁঠালের ছুটি’ সিনেমার ইন্টারন্যাশনাল প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়। এশিয়ান পার্স্পেক্টিভ বিভাগে ছবিটির আরও একটি প্রদর্শনী হয় সেখানে। উৎসব কমিটি এবং উপস্থিত দর্শকেরাও ছবিটির প্রশংসা করেন।
দেশে মুক্তি নিয়ে নির্মাতা জানিয়েছেন, দেশে মুক্তি দিতে আগামি ২১ জুলাই আবেদন করেছেন। দেশের দর্শকদের জন্য সেই হিসেবেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে সেন্সর ছাড়পত্রও পেয়ে গেছেন।
সিনেমাকার প্রযোজিত এই চলচ্চিত্রটির পিছনে রয়েছে দীর্ঘ সাত বছরের পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের গল্প। খুব ছোট একটি কারিগরী ইউনিট আর আনকোরা একদল অপেশাদার অভিনয় শিল্পীদের নিয়ে গাজীপুরের হারবাইদ সংলগ্ন প্রায় পঁচিশ-ত্রিশ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে থাকা লোকেশনে ধারণ করা এই চলচ্চিত্রের সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন নির্মাতা নিজেই, সাথে ছিলেন ম্যাক সাব্বির।
প্রযোজনা, পরিচালনা, চিত্রনাট্য রচনার পাশাপাশি সাউন্ড ডিজাইনও করেছেন মোহাম্মদ নূরুজ্জামান। প্রধান চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছে লিয়ন, জুবায়ের, আরিফ, হালিমা ও তানজিল। আরও ছিলেন ফাতেমা, কামরুজ্জামান কামরুল, আব্দুল হামিদ প্রমুখ। চলচ্চিত্রটির প্রধান সহকারী পরিচালক যুবরাজ শামীম।