বড় লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বকাপ মিশনে যাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। লিগপর্বে নয় ম্যাচের মধ্যে মাত্র দুটিতে জিতে টেবিলের আট নম্বরে থেকে শেষ করেছে আসর। কোনোমতে হাতে পেয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকিট। পুরো টুর্নামেন্টে ব্যাটারদের ব্যর্থতা নিয়ে নিয়ে কথা বলেছেন শ্রীধরন শ্রীরাম।
গতবছর অস্ট্রেলিয়ায় হওয়া টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের টেকনিক্যাল পরামর্শকের দায়িত্বে ছিলেন শ্রীধরন শ্রীরাম। এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপেও এ ভারতীয়কে নিয়োগ দেয় বিসিবি। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাবেক স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার বিশ্বকাপে লাল-সবুজের দলের ব্যাটিং ব্যর্থতা প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে নিজের মতামত জানান।
‘আমার মূল উদ্বেগের জায়গা হচ্ছে এই খেলোয়াড়রা ফিফটি পেলেই সন্তুষ্ট থাকে। আপনাকে বড় স্কোর করতে হবে। বিশ্ব ক্রিকেট আজকাল এভাবেই চলছে। তরুণরা ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হচ্ছে। রাচীন রবীন্দ্র দারুণ উদাহরণ। এই খেলোয়াড়দের কাছ থেকে একটি দৃষ্টান্ত গ্রহণ করুন এবং বড় স্কোরের জন্য ক্ষুধার্ত হন।’
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ছাড়া আর কোনো ব্যাটার বাংলাদেশ দলের হয়ে সেঞ্চুরি পাননি। একটি মাত্র খেলায় চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা দলীয় তিনশো রানের গণ্ডি পেরিয়েছিল। ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ৩৩০ রানের বেশি স্কোর পাওয়ার রাস্তা খুঁজে বের করার উপর গুরুত্ব দেন শ্রীরাম।
‘উপযুক্ত সময়ে ব্যাটারদের সেঞ্চুরি করতে না পারার অক্ষমতাই আমাদের দলকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে। ব্যাটিং অর্ডারের প্রথন চারজনের কেউ সেঞ্চুরি না পাওয়াটা দলের সবচেয়ে হতাশাজনক অংশ। যে দলগুলো সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে, তাদের খেলোয়াড়রা ডাবল সেঞ্চুরি করছে।’
‘৫০ ওভারের খেলায় যখন কেউ ১৩০-১৪০ রানের ইনিংস খেলে এবং তারপরে যদি তাকে চারপাশ থেকে যথেষ্ট শক্তি দিয়ে সবাই সঙ্গ দিতে থাকে, তাহলে আমরা দলীয় স্কোর ৩৩০-৩৪০ রান করতে পারি। আপনি ভারতে তখন ম্যাচ জিতবেন বলে আমার মনে হয়।’
ওয়ানডেতে ধারাবাহিকভাবে ৩০০-র বেশি রান করার জন্য বাংলাদেশকে কাজ করতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন শ্রীরাম। বললেন, ‘আমি মনে করি না তাদের কাছে অন্য কোনো বিকল্প আছে। খেলায় জিততে শুরু করার জন্য এটাই সর্বনিম্ন স্কোর। আপনাকে ৩০০-৩৫০ রান করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। একবার আপনি যখন উপলব্ধি করবেন,ধারাবাহিকভাবে শেষ দশ ওভারে ৮৫-১০০ রান তুলতে পারেন, এটা প্রথম ৪০ ওভারে ব্যাটিংয়ের সময় সহায়তা করবে।
‘এমনটা করার অনেক উপায় আছে। একটি উপায় হল উইকেট হাতে রেখে ব্যাট করা। আরেকটি উপায় হল সঠিক ও শক্তভাবে এগিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশের উচিৎ কোন উপায় তাদের কাজে লাগবে সেটা বের করা। সবাইকে সঠিক ভূমিকা প্রদান করতে হবে।ব্যাটিং অর্ডারের প্রথম চারজনের কারোর সেঞ্চুরি না পাওয়াটা আলোচনাযোগ্য নয়বলেই মনে করি।’
প্রতি ম্যাচের ব্যাটিং অর্ডারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাটা বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলে নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মেহেদী হাসান মিরাজের ভালো ফর্মকে কাজে লাগাতে তার ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে সবচেয়ে বেশি বদল হয়। টুর্নামেন্টের নয় ম্যাচে মিরাজ তিন থেকে আট নম্বরের মধ্যে পাঁচটি ভিন্ন পজিশনে ব্যাট করেছেন।
বাংলাদেশ দলের টেকনিক্যাল পরামর্শকের ভাষ্য, ‘এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। বিশ্বকাপের আগে ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে কেমন ধরনের কথোপকথন হয়েছিল, আমি জানি না। স্থিতিশীলতা নাকি প্রতি ম্যাচ ধরে পরিকল্পনা ছিল সেটাও জানি না। বুঝতে চাচ্ছিলাম, কীভাবে আমরা মিরাজকে অলরাউন্ডার হিসেবে তার সেরাটা ব্যবহার করতে পারি। আট নম্বরে নেমে ছক্কা মারার ক্ষমতা তার নেই। কিন্তু তার টেম্পারমেন্ট ভালো, জুটি গড়তে পারে, রান নিতে ব্যস্ত থাকে, স্ট্রাইক রোটেট করতে পারে, চাপ নিতে পারে।’
‘আমরা জানি কীভাবে তাওহীদ হৃদয় টি-টুয়েন্টিতে ব্যাট করতে পারে। মাহমুদউল্লাহ অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে করতে পারে। এটা ছিল মূলত ব্যাটিংকে দীর্ঘায়িত করার পন্থা। লেট অর্ডারে আমাদের আরও একটু আক্রমণাত্মক ব্যাটিং পাওয়ার কথা। মিরাজের একজন ব্যাটার হিসেবে গুণাবলী রয়েছে। মূল বিষয় ছিল, আমরা তার সম্ভাবনার সর্বোচ্চ করতে পারি কিনা। আমি যতটা জানি এমনটাই ছিল চিন্তাভাবনা।’