বহু কষ্ট, অপমান ও অবহেলা সহ্য করে এবং সাধারণ মানুষের আস্থার উপর নির্ভর সময়ের আলোচিত ‘আদিম’ সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন তরুণ নির্মাতা যুবরাজ শামীম। ছবিতে যারা অভিনয় করেছেন, অভিনয়ে তাদের কোনো পাঠ তো ছিলোই না- এমনকি তাদের একজনও কখনও এরআগে ক্যামেরার সামনেই দাঁড়াননি!
‘আদিম’ এর প্রধান তিন চরিত্র সোহাগী, দুলাল ও বাদশা- বস্তিতেই তাদের বাস। একেক জনের পেশাও একেক রকম। সেখানের বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে তাদের কেউ কখনও স্বপ্নেও ভাবেননি যে সিনেমায় অভিনয় করবেন! আর সেই সিনেমাটি পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন কোনো চলচ্চিত্র উৎসবে বোদ্ধাদের প্রশংসা কুড়াবে, পুরস্কার পাবে- সেটাতো ছিলো কল্পনারও অতীত!
৪৪তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘আদিম’ চলচ্চিত্রটি সিলভার সেন্ট জর্জ পুরস্কার জয়ের পর শুধু যুবরাজ শামীম নয়, আলোচনায় তার সিনেমার বাস্তব চরিত্র সোহাগী, দুলালরাও। সংবাদ মাধ্যমও তাদের খুঁজে!
শেষ পর্যন্ত সোহাগী-দুলালদের নিয়েই বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন যুবরাজ শামীম। নিজেদের অভিজ্ঞতার গল্প মন খুলে বলেন তারা।
সংবাদ সম্মেলন শেষে ‘আদিম’ এর কেন্দ্রীয় দুই চরিত্র সোহাগী ও দুলাল কথা বলেন চ্যানেল আই অনলাইনের সাথেও। এসময় নিজেদের অনুভূতির কথা জানিয়ে সোহাগী বলেন, ‘আমাকে যখন প্রথমবার সিনেমায় অভিনয়ের কথা বলা হলো, আমি ভেবেছি মস্করা করছে! এটা একটুও বিশ্বাস করি নাই’।
সোহাগী বলেন, ‘প্রথমে দুলাল ভাই আমাকে আদিম সিনেমার কথা বলেন। জিজ্ঞেস করেন, আমি অভিনয় করবো কিনা! পরে যুবরাজ ভাইয়ের সাথে দেখা হয়। তিনি আমাকে বিষয়টা খুলে বলেন। কিন্তু তখনও আমি বুঝি নাই। বলছি, আমরা আবার কীভাবে সিনেমা করবো! প্রথমে কারও কথায় আমি পাত্তা দেই নাই। কিন্তু দিন যাওয়ার সাথে সাথে দেখি, যুবরাজ ভাই খুব সিরিয়াস। তিনি নিজেও আমাদের বস্তিতে থাকতে শুরু করেছেন। আমাদের রিহার্সেল করার ব্যবস্থা করলেন। তখন বুঝছি যে, তিনি আসলেই সিনেমা করতে চান।’
সোহাগীর কথার সূত্র ধরেই পাশে বসে থাকা দুলাল বলেন, ‘টঙ্গীর ব্যাংকের মাঠ বস্তির একটি দোকানে যুবরাজ ভাইয়ের সাথে আমার প্রথম পরিচয়। তিনি প্রথম আমাকে ‘আদিম’ সিনেমায় অভিনয়ের কথা বলেন। আমরা কেউ ই বিশ্বাস করি নাই। সিনেমা বানাবে, এজন্য তিনি যখন বস্তিতে থাকা শুরু করলেন- তখন তাকে নিয়ে আমরা হাসাহাসি করতাম। মনে করতাম বড়লোকের ছেলে, কী থেকে কী করে! কিন্তু উনি যখন ‘আদিম’ নিয়ে আমাদের সাথে রেগুলার কথা বলতে থাকলেন, তখন আমরা কিছুটা সিরিয়াস হই। ধীরে ধীরে বুঝতে পারি, তিনি সত্যি সত্যিই সিনেমা করতে এই বস্তিতে এসে উঠেছেন!’
এসময় পাশ থেকে সোহাগী বলেন, যুবরাজ ভাইয়ের কথায় আমরা যখন শুটিং শুরু করি, তখন অনেক রকম ঝামেলা সামাল দিতে হয়েছে তাকে। বস্তিতে পুলিশ এসে যেমন ঝামেলা করেছে, তেমনি সাধারণ মানুষেরও অনেক বাজে ব্যবহারের শিকার হতে হয়েছে। আমরা বস্তিতে শুটিং করছি, এজন্য পড়শিদের অনেকেই নাক সিঁটকানো দেখতে হয়েছে। তারা বলেছেন এগুলো কী শুরু করেছি আমরা! কিন্তু এসবে কখনই প্রতিক্রিয়া দেখাননি যুবরাজ ভাই। তিনি সব সহ্য করে শুটিং চালিয়ে গেছেন। যার ফল তিনি পেলেন মস্কো শহর থেকে।
পেশা যাই হোক, যেহেতু ‘আদিম’ এর মধ্য দিয়ে অভিনয়ের সুযোগ পেলেন, তাই আগামিতে কেউ যদি তাদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে পোষণ করেন, তাহলে অভিনয়টাও করতে চান বলে জানান সোহাগী ও দুলাল। তারা জানান, ‘আদিম’ এর শুটিংয়ের সময় যারা মন্দ চোখে দেখতো, সেই তারাই আজ আমাদেরকে বাহবা দিচ্ছে। এভাবে গর্বিত হওয়ার সুযোগ পাবো তা বিশ্বাস করি নাই। তাই আমরা চাই, সবার সহযোগিতায় সামনে এগিয়ে যেতে।