ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলা, ভ্যালেন্টাইন ডে, পহেলা ফাল্গুন, একুশে ফেব্রুয়ারির মতো দিনগুলোতে তৎপর থাকে ছিনতাইকারী চক্ররা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকায় উৎসব মুখরতা তৈরী হয়। এ সুযোগে অত্র এলাকা যেমন; শাহবাগ, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, কমলাপুর, খিলগাঁওসহ আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় বড় ধরনের ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে আসছিল এই চক্রটি।
এছাড়াও আসন্ন একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে নাশকতা তৈরীর মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ছিনতাই করারও পরিকল্পনা ছিল এই চক্রটির।
গতকাল বুধবার ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত র্যাব-৩ এর কয়েকটি আভিযানিক দল একযোগে রাজধানীর মতিঝিল, মুগদা, ওয়ারী, খিলগাঁও, বংশাল, সবুজবাগ ও শাহজাহানপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ ২৯ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন: রাকেশ ওরফে কালাচাঁন, মান্নান, ইমরান গাজী, আকাশ, ইসরাফিল, সিয়াম, মানিক, নাহিদ পারভেজ, আরাফাত, শাকিল, রিয়াদ, আব্দুল রব মিয়া, সাইফুল ইসলাম, রাসেল ইসমাইল, লোকনাথ রাজ বংশি, শম্ভু চন্দ্র দাস, শামীম, রাজু , মোজাফ্ফর, হাসান, হৃদয়, আরিফ, আতিকুল ইসলাম, হেলাল, রুবেল, রতন ওরফে মানিক, তছলিম ও আনোয়ার।
আসামিদের কাছ থেকে সুইচ গিয়ার, চাকু, ক্ষুর, এন্টিকাটার, কাঁচি, ব্লেড, মোবাইল ফোন এবং নগদ টাকাসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র জব্দ করা হয়।
জনশূন্য এলাকায় বেপরোয়া ছিনতাইকারী
র্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক সময়ে খিলগাঁও মালিবাগ রেইল গেইট, কমলাপুর, মতিঝিল, হাতিরঝিল, শাহবাগ, পল্টন, মানিকনগর, নন্দীপাড়া, গুলিস্তান এলাকায় সন্ধ্যা হতে ভোর রাত পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের বেশ তৎপরতা দেখা যাওয়ায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এ সাঁড়াশি অভিযানটি পরিচালনা করে ২৯ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে।’’
তিনি বলেন, সাধারণত এসব এলাকায় ছিনতাইকারী এই চক্রটির সদস্যরা ঘোরাফেরা করতে থাকে। এছাড়াও সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন অলি গলিতে ওৎপেতে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। সন্ধ্যা হতে ভোর পর্যন্ত তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তা, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের ছিনতাইকাজে বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতে দ্বিধা বোধ করে না।
টার্গেট ব্যক্তির সঙ্গে কৌশলগতভাবে বিতর্কে জড়ানো
ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা যেসকল ব্যক্তির কাছ থেকে ছিনতাই করবে তাদেরকে আগে থেকে অনুসরণ করতে থাকে এবং অনুসরণকৃত ব্যক্তির সাথে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের কথা বলে থাকে। একপর্যায়ে কথা বলতে বলতে উক্ত ব্যক্তিকে সুবিধামতো কোনো জায়গায় নিয়ে যায় এবং সেখানে ছিনতাইকারী চক্রের অন্য সদস্যরা উপস্থিত হয়। চক্রের একজন সদস্য উক্ত ব্যক্তির সঙ্গে বিতর্কে জড়ায় ও মারধর শুরু করে।
র্যাব বলছে, লোকজন এগিয়ে আসলে চক্রের সদস্যরা বলে নিজেদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির কারণে এ মারামারি। ততক্ষণে ছিনতাইয়ের কাজটি তাদের চক্রের কেউ একজন সেরে ফেলে। এছাড়াও তারা ছিনতাইয়ের কাজে বিভিন্ন অভিনব কৌশল অবলম্বন করে থাকে এবং ছিনতাইয়ের কাজে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে। যখন কোন রিকশা অথবা সিএনজি আরোহী যাত্রীদেরকে টার্গেট করে তারা অন্য একটি রিক্সা অথবা সিএনজি নিয়ে উক্ত ব্যক্তির পিছনে যেতে থাকে। ছিনতাইকারীদের সুবিধামত স্থানে পৌঁছে যাত্রীকে এবং চালককে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে রিক্সা ও সিএনজি যাত্রীর সর্বস্ব লুটে নেয়।
জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়েও একই পেশা
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, ছিনতাইকারীরা তাদের ছিনতাইকৃত অর্থ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের নেশা করে এবং কেউ কেউ জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। চক্রের সদস্যদের রাজধানীতে বসবাসের জন্য স্থায়ীভাবে কোন বাসস্থান নেই। তারা সবাই রাজধানীতে ভাসমান অবস্থায় বসবাস করে। চক্রের সদস্যদের মধ্যে প্রায় সবার বিরুদ্ধে মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে উক্ত চক্রের সদস্যরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গ্রেপ্তার হবার পরে তারা জামিনে মুক্ত হয়ে পুনরায় একই অপরাধে জড়ায়।