ঢাকাই সিনেমায় শাকিব খানের ছবি মানেই সিনেমা সংশ্লিষ্টদের হুড়োহুড়ি। হল মালিকদের অগ্রিম বুকিং উৎসব! প্রায় দেড় যুগ ধরে এটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। বলা হয়, শাকিবের ছবি মুক্তির জন্য উৎসবের প্রয়োজন হয় না, বরং শাকিবের ছবি মুক্তির খবরই সিনেপ্রেমী দর্শকের জন্য উৎসব!
দেশী সেলুলয়েডের প্রাণভোমরা শাকিব। ব্যবসাসফল ছবির অক্সিজেন পাওয়া যায় তার বাগানে! চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক ও সিনেমা হল মালিকরা মনে করেন, সিনেমার বাজারে আশার ফুল শাকিব।
ঢাকাই সিনেমায় শত অনিশ্চয়তার মধ্যে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা এখনও মনে করেন, সিনেমায় শাকিবকে চুক্তিবদ্ধ করানো মানেই সেই সিনেমা হিট!
এর মধ্যেই বছর যায় বছর আসে, আলোচনা সমালোচনা ও ভাল-মন্দ মিলিয়ে শাকিব খান তার আসনে থাকেন বহাল তবীয়তে! গেল বছরেও এসবের ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এই নায়কের ক্যারিয়ার গ্রাফ অনুযায়ি ২০২২ সালে তুলনামূলক কম সংখ্যক ছবি মুক্তি পেয়েছে।
‘বিদ্রোহী’ ও ‘গলুই’- মাত্র এ দুই ছবির মাধ্যমে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে শাকিব ভক্তদের। অনেকে শঙ্কা করেছিলেন, এই বুঝি দম ফুরালো দেশ সেরা এ নায়কের! কিন্তু না, দম ফুরায়নি। অন্তত এমনটাই মনে করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বৈশ্বিক করোনা ভাইরাসের সার্বিক প্রভাবে এমন হয়েছে। এই চিত্র বিশ্বজুড়ে সব সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে বিদ্যমান ছিল।
পাশাপাশি গেল বছরে প্রায় সাতমাস শাকিব যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। দেশে ফিরেই হইচই ফেলে দেয়ার ঠিক পরেই শেষ তিন মাস ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে শাকিব খানকে। এসব কারণেই কাজে ফিরতে সময় লাগছে। এতে করে অনেকেই ধরে নিয়েছেন, শাকিব খান এর রাজত্ব বুঝি এবার শেষ! কিন্তু কিংবদন্তি অভিনেতা ও প্রযোজক সোহেলা রানা এই কথার সঙ্গে মোটেও একমত নন।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছর ধরে শাকিব রাজত্ব করছে। সে যে অবস্থানে আছে একেবারে সর্বোচ্চ চূড়ায়, তার আর উপরে যাওয়ার জায়গা নেই। বাংলা সিনেমার সাম্রাজ্যে সে সত্যিকারের কিং। সিনেমায় শাকিব যেভাবে শাসন করেছে এতে সে ইতোমধ্যে এই ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসের বড় একটি অংশ হয়ে গেছে। কাজেই শাকিব খান চ্যাপ্টার ক্লোজ হতে যাচ্ছে যারা এই কথা বলে, তাদেরকে ‘নিজের জীবন ও অবস্থান’ সম্পর্কে আগে চিন্তা করতে বললেন সোহেল রানা।
তিনি আরও বলেন, মানুষ সারাজীবন বেঁচে থাকে না। প্রকৃতির নিয়মে শারীরিক ও মানসিক অবসাদের জন্য পৃথিবীর সকল বীর পুরুষেরও একটা সময় বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। শাকিব তো লম্বা রেসের ঘোড়া। লং রেসের ময়দানে সে হয়তো বিশ্রাম নিচ্ছে, নতুন করে হয়তো আবার শুরু করবে।
একের পর এক ইনিংসে ব্যাট করলে ব্যাটসম্যানরা ক্লান্ত হন। টানা দেড় যুগ দাপিয়ে কাজ করে শাকিবের মধ্যেও হয়তো ক্লান্তি এসেছে বলে মনে করেন বরেণ্য চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াত।তিনি বলেন, একটি দুটি হিট ছবি দিয়ে, মাল্টিপ্লেক্সে হিট করিয়ে একজন সুপারস্টার তৈরি হয় না। সুপারস্টার হতে হলে সিঙ্গেল স্ক্রিনে হাউজফুল দিতে হবে এবং আমজনতার পছন্দের নায়ক হতে হলে তাকে ব্যাক টু ব্যাক সাত থেকে দশটি সুপারহিট ছবি দিতে হবে। তার স্টারডম স্টাইল অনুকরণীয় হতে হবে, যেটা দেখেছি উত্তম কুমার, রাজরাজ্জাক, সালমান শাহ্ এবং সর্বশেষ শাকিবের মধ্যে বিরাজমান।
গেল আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে হইচই ফেলে দেন শাকিব খান। হাজারও ভক্ত তাকে ঢাকা বিমানবন্দরে রাজকীয় সংবর্ধনা দিয়ে বরণ করে নেয়। তখন শাকিব খান নিজেই বলেছিলেন, এই ইন্ডাস্ট্রি ও দেশ থেকে এভাবে ভক্তদের বরণ করে নেয়ার ব্যাপারটি সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।
দেশে ফিরলেও নতুন কোনো ছবির শুটিং করেননি শাকিব। এমনকি তার আর কোনো ছবি মুক্তি পায়নি। তবে মায়া, প্রেমিক, শের খান- এসব ছবির ঘোষণা শোনা যায়। এতে তার ভক্তরা উদগ্রীব হয়ে আছেন, অপেক্ষায় আছেন নতুন করে কবে শুটিংয়ে ফিরবেন এই ‘হিরো দ্য সুপারস্টার’!
এদিকে, নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে শাকিব খান তার ফেসবুক ও ইনস্টগ্রামে একটি পোস্টে লিখেছেন, আশা করি এই বছর আমি আমার সেরাটা করতে পারবো এবং দিতে পারবো। আমি দৃঢ়ভাবে আশাব্যক্ত করি, আমার কঠোর শ্রম ও ভক্তদের ভালোবাসা সর্বোচ্চ সেরা ফলাফল বয়ে আনবে।
নায়ক শাকিব খান ঢাকাই সিনেমার জন্য কতোটা অপরিহার্য- তা সিনেমার মানুষ ও তার সমসাময়িকরা ভালোভাবেই জানেন। সমকালীন নির্মাতাদের অনেকেই মনে করেন, শাকিবের সবচেয়ে বড় গুণ হাল না ছাড়া। তিনি নিশ্চয় দাপটের সঙ্গেই ফিরবেন! এ বিষয়ে নিজেও আশাবাদী শাকিব।
চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে তিনি তার দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, আমি আমার সকল দর্শকদের উদ্দেশে বলতে চাই, তোমরা কেউ নিরাশ হইও না; যখন ফিরবো, আমার মতো করেই ফিরবো।
শাকিব খান জানান, তার সঙ্গে মিটিং করে অন্যদের পাবলিসিটির জন্য তিনি আর মোটেও ঘোষণায় যাবেন না। এতে করে ভিতরে ভিতরে ভীষণ বিরক্ত এই সুপারস্টার। তিনি আরও জানান, কাস্টিং, শুটিংয়ে নামা, লুক ফাইনাল ও রিলিজ ডেট চূড়ান্ত না করার আগে কাউকে কিছু জানতে দেবেন না।