চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

নিজেকে মনে হয় আমি একটা নিউ বর্ন বেবি: শারমিন আঁখি

বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে প্রায় দুই মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শারমিন আঁখি। রাজধানীর মিরপুরে গত ২৮ জানুয়ারি শুটিং স্পটে এ দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।

অগ্নিদগ্ধ হয়ে শরীরের ৩৫ শতাংশ পুড়ে যায় অভিনেত্রীর। সেরে উঠা নিয়ে ছিলো আশঙ্কা। দৃঢ় মনোবল আর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের আন্তরিক সেবায় তিনি আশঙ্কা মুক্ত। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। এসব তথ্য তিনি নিজেই জানিয়েছেন।

Bkash July

দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পর এই প্রথম অভিনেত্রী শারমিন আঁখি ফেসবুকে এলেন। বর্ণনা করলেন বিগত দুই মাস তাকে কী যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, সেইসব ঘটনা।

বললেন, ‘এটি তার দ্বিতীয় জীবন’। চিকিৎসকদের পাশাপাশি শোবিজ অঙ্গনের বেশকিছু মানুষের নাম উল্লেখ করে তাদের প্রতিও প্রকাশ করলেন কৃতজ্ঞতা।

Reneta June

শারমিন আঁখির দেয়া সেই পোস্টটি চ্যানেল আই অনলাইনের পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো:

এখন আমি অল্প অল্প হাঁটতে পারি, একটু একটু করে হাত মুঠ করতে পারি, আগের মত কথা বলতে পারি, কষ্ট করে নিজের হাতে খেতেও পারি, সব কিছুই আমাকে নতুন করে শিখতে হচ্ছে। নিজেকে মনে হয় আমি একটা নিউ বর্ন বেবি। এটা আমার জন্য সেকেন্ড লাইফ। আমার বাম হাতের এখোনো শক্তি ফিরে পাইনি। হাতটা অনড় করে রাখতে হবে আরও বেশ কিছুদিন। তারপর ধিরে ধিরে এই হাতেরও শক্তি ফিরিয়ে আনবো ইনশাআল্লাহ।

যেদিন এডমিট হয়েছিলাম আমার দুই হাত-পা ডিপ বার্ন আর আমার মুখ সুপার ফেসিয়াল বার্ন, সাথে শ্বাসনালীও এফেক্টেড। এতোটাই ক্রিটিকাল সিচুয়েশনে ছিলাম, ডক্টর নিশ্চয়তা দিতে পারছিলো না আমি ফিরে আসতে পারবো কিনা। যখন আইসিইউতে ছিলাম তখন বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা ছিলো মাত্র ৩০%। প্রতি রাতে ১০৪-১০৫ ডিগ্রী জ্বরের ঘোরে শুধু ফ্লাশব্যাক এর মত ফেলে আসা স্মৃতিগুলো চোখের সামনে আসতো। মনে হত মানুষ তার অন্তিম মুহূর্তে এভাবেই বুঝি ভালো স্মৃতিগুলো দেখতে দেখতে চলে যায়। কিন্তু এই ভালো স্মৃতিগুলোই আমাকে ফিরে আসতে শক্তি যুগিয়েছে। আমি বোঝাতে পারবোনা গত দু মাস ধরে কী কঠিন যুদ্ধ আমাকে করতে হচ্ছে। আমার এক একটা রাতের অসহ্য যন্ত্রণা শুধু আমি জানি। আইসিইউ-তে সারা রাত আশপাশের পেশেন্টদের আর্তচিৎকারে কেঁপে কেঁপে উঠতো শরীর আর মন। ভারী হয়ে উঠতো বাতাস। প্রতিরাতেই কেউ না কেউ এই যন্ত্রণার কাছে হার মেনে নিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছে। প্রতিদিন সকালে কোনো না কোন বেড খালি দেখে বুঝে নিতাম আরেকজন পরাজিত হলো। অসহ্য যন্ত্রণায় দিন রাত কাতরেছি, ধৈর্যশক্তির অধিক ধৈর্য ধারণ করে সব যন্ত্রণা গিলেছি, আর একটা কথাই জপেছি বার বার, মনোবল ভাঙা যাবে না, শেষবিন্দু পর্যন্ত চেষ্টা করবো। বাকিটা আল্লাহ ভরসা। আল্লাহ সত্যি মহান। আল্লাহ স্বয়ং তার রহমতের চাদর দিয়ে আমাকে জড়িয়ে রেখেছিলেন বলেই আমি বেঁচে ফিরেছি।

বিশেষ কিছু মানুষের দোয়া, ভালোবাসার কথা আমি কখনই ভুলবো না। বার্ন ইন্সটিটিউট এর সকল ডক্টর, বিশেষ করে ডক্টর সোহানা আরজু, এই মানুষটা যেভাবে যত্ন নিয়ে আমার ট্রিটমেন্ট করেছেন- এক পোস্টে আপনার গল্প বলে শেষ করা যাবে না আপু। ইবনে হাসান ভাই, আপনি প্রতিদিন যেভাবে খোঁজ নিয়েছেন, প্রতি মুহূর্তে যেভাবে সাহস যুগিয়েছেন, চরম বিপদে যেভাবে পাশে থেকেছেন আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা ভাষা বা লেখায় প্রকাশ করা সম্ভব না। আপনি আমার এই নতুন জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে থাকবেন সবসময়। ঊর্মিলা আমার মুমূর্ষু অবস্থায় তোমার এতো কুইক রেস্পন্স, যেভাবে প্রতি মুহূর্তে পাশে ছিলে তুমি না থাকলে সব কিছু এতো সহজ আর দ্রুত হতো না। আল্লাহ তোমাকে আরো বড় করুক। কৃতজ্ঞ আমি আমার সংঠন এক্টরস ইকুইটির কাছে প্রথম দিন থেকে আমার পাশে ঢাল হয়ে থাকার জন্যে। ফাহাদ ভাই ,আমি হসপিটালে পৌঁছানোর আগেই আপনি ইমার্জেন্সিতে সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। রুপেল ভাই আপনিই প্রথম আমাকে সাহস দিয়ে বলেছেন আপনারা সবাই আমার পাশে আছেন। মৌসুমী হামিদ, তোমার সেই জ্বালাময়ী বক্তব্য আইসিইউতে আমাকে যে কি বুস্ট আপ করেছে, ওই মুহূর্তে আমার এমন কিছুরই দরকার ছিলো। আবু হেনা রনি তুমিও আমার মত একটা টাফ টাইম পার করেছো এই বার্ন ইন্সটিটিউট এ। আমার যন্ত্রণা একমাত্র তুমি বুঝবে কী গেছে আমার উপর দিয়ে। থ্যাংকস আমাকে সাহস দিয়ে যাওয়ার জন্য। পিকলু ভাই তুমি এভাবেই চুপচাপ ভালোবাসা আর দোয়া করে যেও। মিঠু আপা তুমি পুরাই একটা ভালোবাসার ডিব্বা, তোমার বানানো জাউ ভাত আমি আবার খেতে চাই। মুননা ভাই আমি শুয়ো পোকার খোলস থেকে প্রজাপতি হয়ে বের হয়ার জন্যে তৈরী হচ্ছি। হাসিব, দোস্ত বুস্ট ইজ দ্য সিক্রেট অফ আওয়ার এনার্জি। আতিক, জয়ী, লারা, আইরিন, ইমতু, সিফাত, তন্নি- তোদের নিয়া কিচ্ছু বলবো না। আমাকে জলদি বাসায় নিয়া চল।

আগামী ৬ মাসের যুদ্ধটাও অনেক কঠিন। মন শক্ত করে যেনো এই যুদ্ধটাও জিতে ফিরতে পারি এই দোয়া চাই সবার কাছে। আমার পরিবার এর প্রত্যেকটা মানুষ যেভাবে আমার পাশে ছিলেন, যেভাবে আমাকে সাহস দিয়ে গেছেন, বার্ন ইন্সটিটিউট এর ডক্টর, নার্স , ফিজিও সকলের যেই সেবা আর ভালোবাসা আমি পেয়েছি, আমার সকল সহকর্মী – কলিগ যারা প্রতিনিয়ত আমার খোঁজ নিয়েছেন, আমার জন্য দোয়া করেছেন সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা।

Labaid
BSH
Bellow Post-Green View