তীব্র তাপপ্রবাহে দেশ যখন অতিষ্ঠ, তখন কম তাপমাত্রার দেখা মিলছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে। অর্ধযুগে ক্যাম্পাস জুড়ে রোপণ করা হয়েছে প্রায় লাখখানেক ফলদ, বনজ এবং ঔষধি গাছ।
পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা বলছেন, এসব গাছ ক্যাম্পাস তথা পুরো সিলেটের তাপমাত্রায় প্রভাব ফেলার পাশাপশি অক্সিজেন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
রোববার (২১ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, ৩২০ একরের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গাছপালা আছে এমন জায়গার পরিমাণ প্রায় ২০০ একর। এরমধ্যে ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিজ উদ্যোগ, ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভারনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের উদ্যোগ ও বন বিভাগের সহায়তায় বিভিন্ন সময়ে টিলাবেষ্টিত এলাকা বিশেষ করে শহীদ মিনার ও তার পাশ্ববর্তী নিউজিল্যান্ড এলাকা, শাহপরান ও বঙ্গবন্ধু হলের পাশের টিলাসহ মেডিকেল সেন্টার ও শারীরিক শিক্ষা দপ্তরের আশপাশে বনায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এছাড়া একই স্থানে গবেষণা ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে গতবছরের ১৭ই আগস্ট ৫ হাজার আগরগাছের চারা রোপণের প্রকল্প হাতে নিয়ে আগর বাগান করেন ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগ। গবেষকগণ ধারণা করছে, এই আগরগাছ সুষ্ঠ্য ব্যবস্থাপনায় কোটি টাকার সম্পদে পরিণত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ আরফিন খাঁন বলেন, বর্তমান উপাচার্যের আমলে রোপিত বৃক্ষের পরিমাণ এখন লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়া বনবিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গাছ লাগিয়েছে। বিশেষত ফলজ, বনজ এবং ঔষধি বৃক্ষ রোপনের মাধ্যমে সবুজ ক্যাম্পাসকে আরও সবুজতর করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বৈশ্বিক তাপনাত্রা যেভাবে বাড়ছে তাতে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে জণজীবন, পশু-পাখি ও বৃক্ষের বৈচিত্র্য রক্ষা তথা উদ্ভিদ ও প্রাণিকুল রক্ষায় বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে বিশাল সামাজিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে সকলেরই নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসা দরকার।
তিনি আরও বলেন, সরকার সারাদেশেই বনায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আমরা সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে উদ্যোগ নিয়ে আমাদের প্রত্যেকেই বাড়ির আঙ্গিনা ও উপর্যক্ত জায়গায় বৃক্ষরোপণ করা দরকার। এ উদ্যোগ পরিবার, সমাজ ও দেশ এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিগত ছয় বছরে শাবিপ্রবিতে যে পরিমাণ গাছ লাগানো হয়েছে তা প্রকৃতির প্রতি দরদের এক অনন্য উদাহরণ বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ভূমি সন্তান বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক আনিস মাহমুদ। চ্যানেল আই কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগ একই সাথে একটা বার্তা পৌঁছাতে সাহায্য করেছে যে, গাছ রক্ষা করেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বজায় রাখা যায়। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যে জায়গায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য নির্বিচারে গাছ কাটে সে জায়গায় শাবিপ্রবি ভিন্নতার পরিচয় দিয়েছে।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কাজকে সাধুবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগের পরিচালক ড. শামসুল আরেফিন বলেন, নানা কারণে পৃথিবীর জলবায়ু ও পরিবেশ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় ক্যাম্পাসে ধারাবাহিক বৃক্ষরোপণ একটি অতি জরুরি ও শুভ উদ্যোগ।
তিনি আরও বলেন, শাবিপ্রবির এই উদ্যোগ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় অনুকরণ করে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বৃক্ষরোপণ বৃদ্ধি করতে পারে।
অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘পরিবেশ সুরক্ষায় এবং পৃথিবীজুড়ে গ্লোবাল ওয়ার্মিং প্রতিরোধ করতে গাছ লাগানোর মাধ্যমে বনায়ন সৃষ্টির বিকল্প নেই। আমাদের কর্মপরিকল্পনাগুলা হতে হবে পরিবেশবান্ধব।
উপাচার্য আরও বলেন, ২০১৭ সালে উপাচার্যের দায়িত্ব পাবার পর বন বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি বিভাগের সহযোগিতায় লাখের কাছাকাছি হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। এই বৃক্ষরোপণ সামনের দিনগুলোতে অব্যাহত থাকবে। পড়াশোনার সুন্দর পরিবারের পাশাপাশি আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে এই শিক্ষাও নিয়ে যাবে যে, একটি সুন্দর পৃথিবীর জন্য গাছ খুবই প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়কে সবুজ ও শ্যামল করতে আগামী দিনগুলোতেও আমরা গাছ লাগিয়ে যাবো ইনশআল্লাহ।