শহীদ তাজুল দিবসে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি আয়োজিত সমাবেশে সিপিবির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, রাজনীতি এক দুঃসময় অতিক্রম করছে। নীতিহীন রাজনীতি জনগণের কাঁধে চেপে বসেছে, মুক্তবাজারের নামে রাজনীতিতে লুটপাটের ধারা প্রধান হয়ে উঠেছে। সিপিবি নীতিনিষ্ঠ রাজনীতিকে অগ্রসর করে ভোটাধিকার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসনের অবসান ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অগ্রসর করে নিয়ে যাবে।
শুক্রবার ১ মার্চ সকাল ১০টায় সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তিভবনের সামনে শহীদ তাজুল স্মরণে স্থাপিত অস্থায়ী বেদীতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শহীদ তাজুলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সিপিবি সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রমিক নেতা হাফিজুল ইসলাম, শহীদ তাজুলের সন্তান তৌফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক কৃষকনেতা জাহিদ হোসেন খান।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামে যারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের মধ্যে কমরেড তাজুল ইসলাম অন্যতম। ১৯৯০ এ স্বৈরাচারী শাসককে উৎখাত করতে পারলেও স্বৈরাচারী ব্যবস্থা উৎখাত করা যায়নি।
স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর থেকে পালাক্রমে যারা ক্ষমতায় এসেছে এবং এখনও আছে তারা এসব শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি করে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। বর্তমান সরকার জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে দেশে একদলীয় কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী ব্যবস্থা কায়েম করেছে। মুক্তবাজারের নামে চলমান অর্থনীতি হলো এই স্বৈরাচারী ব্যবস্থার ভিত্তি।
আজ তাই দেশে চলছে অবাধে অর্থ পাচার, খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমাগত বেড়ে চলছে, দুর্নীতি লুটপাট সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সরকার এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে জনগণের পকেট কাটার নীতি গ্রহণ করেছে। মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। একদিকে নিত্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে জনগণ দিশেহারা। অন্যদিকে বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে জনগণের জীবনকে আরও কঠিন করে তোলা হচ্ছে। নেতৃবৃন্দ চলমান দুঃশাসনের অবসান, ব্যবস্থা বদল ও বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, চলমান দ্বি-দলীয় ধারার রাজনীতির অবসান ছাড়া মানুষের মুক্তি নেই।
এজন্য বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে নিজস্ব দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসনের অবসান ও ব্যবস্থা বদলের সংগ্রামকে বেগবান করতে হবে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি নীতিনীষ্ঠ অবস্থানে থেকে এই আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। কোন অপশক্তি কমিউনিস্ট পার্টিকে এই পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না।
সকাল ১০টায় অস্থায়ী বেদীতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবন্ধনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শুরু হয়।
এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ মার্ক্সবাদী, বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলসহ (জাসদ) বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গ সংগঠন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আর আন্তর্জাতিক সংগীতের মধ্য দিয়ে পুরো কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটে।