চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের রিট পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ‘পুলিশের বেপরোয়া হামলা’ নিয়ে বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের করা রিটটি পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তির করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এবারের নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি-সম্পাদকসহ ১৪ প্রার্থীর করা রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার আদেশ দেন। তবে আদালত কি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তা প্রকাশিত আদেশে পাওয়া যাবে।

Bkash July

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। তার সঙ্গে ছিলেন সভাপতি প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।

নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্যেই সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলা আর দুই পক্ষের আইনজীবীদের হট্টগোল-ধাক্কাধাক্কি ও মামলায় শেষ হয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই দিন ব্যাপি এবারের নির্বাচন। দৃশ্যত ‘একতরফা’ এই নির্বাচনে সব পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।দ্বিতীয় দিনের ভোট গ্রহণ শেষে ১৬ মার্চ মধ্য রাতে সমিতির দক্ষিণ হলে অ্যাডভোকেট মো. মনিরুজ্জামান এই ফলাফল ঘোষণা করেন। ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থী মোমতাজ উদ্দিন ফকির তিন হাজার ৭২৫ ভোট পেয়ে সভাপতি হিসেবে পুননির্বাচিত হয়েছেন। এই প্যানেলের প্রার্থী মো. আবদুন নূর তিন হাজার ৭৪১ ভোট পেয়ে সম্পাদক পদে পুর্ননির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া সহসভাপতির দুটি পদে সাদা প্যানেল থেকে মো. আলী আজম ও জেসমিন সুলতানা জয়ী হয়েছেন। কোষাধ্যক্ষ পদে একই প্যানেলের এম. মাসুদ আলম চৌধুরী জয়ী হয়েছেন। সহসম্পাদক হিসেবে জয় পেয়েছেন এ বি এম নূর-এ-আলম ও মোহাম্মদ হারুন-উর রশিদ। আর সদস্য সাতটি পদে সাদা প্যানেল থেকেই জয়ী হয়েছেন, মহিউদ্দিন আহমেদ (রুদ্র), মনিরুজ্জামান রানা, শফিক রায়হান শাওন, মো. সাফায়েত হোসেন (সজীব), মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. নাজমুল হুদা ও সুভাষ চন্দ্র দাস।

Reneta June

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচন পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল আইনজীবী শাহ খসরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের উপ–কমিটি ঘোষণা করে। পরবর্তীতে বিএনপি সমর্থিত প্যানেল হতে আইনজীবী এ জেড এম ফরিদুজ্জামান আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনার উপ কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে গত ২ মার্চ উভয়পক্ষের সম্মতিতে নির্বাচন পরিচালনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনসুরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট উপ-কমিটি পুর্নগঠন করা হয়। কিন্তু সোমবার মনসুরুল হক চৌধুরী পদত্যাগপত্র জমা দেন।

এই পদত্যাগের ঘোষণার প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মোঃ মনিরুজ্জামানকে মনোনীত করেন। অন্যদিকে, বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা এ এস এম মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক মনোনীত করেন। একপর্যায়ে এনিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল, হইচই ও হট্টগোল শুরু হয়। সেই সাথে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে এবং আইনজীবী সমিতি ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ব্যালট পেপার পড়ে থাকতে দেখা যায়।

এরপর নির্বাচনের প্রথম দিন বুধবার সকাল থেকেই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে দেখা যায় শত শত পুলিশের উপস্থিতি। এছাড়া সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। একপর্যায়ে ঐ দিন বেলা বেলা ১২টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনের (ভোটকেন্দ্র) ভেতরে নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে হইচই-হট্টগোলের মাঝেই  সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। এতে প্রায় এক ডজন সাংবাদিক আহত হন। সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলা ঘটনায় মর্মাহত উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। অন্যদিকে, সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের এইবন্যক্কার জনক হামলা নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও ল’রিপোর্টার্স ফোরামসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও পেশাজীবি সংগঠন। পরদিন দুপুরে ল’ রিপোর্টার্স ফোরামে এসে সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান হারুর অর রশিদ। এসময় টেলিফোনে ডিএমপি কমিশনার ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি আশুতোষ সরকারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।

এদিকে আলোচিত এই নির্বাচনের ঘটনা প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আট বিচারপতির আপিল বিভাগে উপস্থিত হয়ে জানান বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী। পরবর্তীতে আবার প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সাথে খাস কামরায় গিয়ে নির্বাচন ও হামলা-মামলার বিষয়ে কথা বলেন বিএনপির আইনজীবী নেতারা। এরপর প্রধান বিচারপতির সাথে দেখা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। পরে রাষ্ট্রের এই প্রধান আইন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি বলেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি একটা প্রাইভেট বডি। তাই এটা আইনজীবী সমিতির বিষয়। এখানে প্রধান বিচারপতির করণীয় কিছু নেই। আপনারা বারের সিনিয়র আইনজীবীদের নিয়ে বসে আলাপ করে সমস্যার সমাধান করেন। সবাই মিলে পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার চেষ্টা করেন।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৪টি পদের বিপরীতে এবার ২৯ জন প্রার্থী ছিলেন। অন্যদিকে এবারের নির্বাচনে ভোটার ছিল ৮ হাজার ৬০২ জন আইনজীবী।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলে সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক পদে বর্তমান সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নুর দুলাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের অন্য পদে প্রার্থী ছিলেন— সহ-সভাপতি পদে মোহাম্মদ আলী আজম ও জেসমিন সুলতানা, ট্রেজারার পদে মাসুদ আলম চৌধুরী, সহ-সম্পাদক পদে নুরে আলম উজ্জ্বল ও হারুনুর রশিদ।

কার্যনির্বাহী সদস্য পদে সাত প্রার্থী ছিলেন— মো. সাফায়েত হোসেন সজীব, মহিউদ্দিন রুদ্র, শফিক রায়হান শাওন, সুভাষ চন্দ্র দাস, নাজমুল হোসেন স্বপন, মো. দেলোয়ার হোসেন, মনিরুজ্জামান রানা।

অন্যদিকে, এবারের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের সভাপতি পদে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। এই প্যানেলের অন্য পদগুলোতে প্রার্থী ছিলেন— সহ-সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির মঞ্জু, সরকার তাহমিনা সন্ধ্যা, সহ-সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন, অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল করিম ও কোষাধ্যক্ষ পদে রেজাউল করিম। আর কার্যনির্বাহী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন অ্যাডভোকেট আশিকুজ্জামান নজরুল, ফাতিমা আক্তার, ফজলে এলাহি অভি, ব্যারিস্টার ফয়সাল দস্তগীর, অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান আহাদ ও রাসেল আহমেদ।

 

Labaid
BSH
Bellow Post-Green View