উঠছে ফুটবল মহাযজ্ঞের পর্দা। ২০ নভেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর, মাসব্যাপী ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনে কোথাও ঘাটতি রাখছে না স্বাগতিক কাতার। সোনালি ট্রফি সামনে রেখে আটটি ভেন্যুতে লড়বে ৩২ দল। বৈশ্বিক আসরটিতে সমর্থন, দল, প্রিয় খেলোয়াড়কে সাহস জোগাতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে ভ্রমণ করছে লাখো ফুটবলপ্রেমী।
কোথায় কোথায় হবে হাসি-কান্না, রোমাঞ্চ-উন্মাদনার মঞ্চায়ন, কোথায় উচ্ছ্বাস সবুজ গালিচা পেরিয়ে আছড়ে পড়বে গ্যালারিতে। সেসবের পরিচিতিতে এপর্বে থাকছে বিশ্বকাপের অন্যতম ভেন্যু আল লুসেইলের ‘লুসেইল স্টেডিয়াম’র কথা।
এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ ১০টি ম্যাচ আয়োজন করতে চলেছে লুসেইল স্টেডিয়াম। কাতারবাসীদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও আরব সংস্কৃতিকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরবে ভেন্যুটি। এখানেই সোনালী ট্রফির স্বপ্নপূরণে যাত্রায় নামবেন পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি ও ব্রাজিলের নেইমাররাও। ফাইনাল মহারণে লুসেইলের আকাশেই শিরোপা উঁচিয়ে বিশ্বজয়ের আনন্দে মাতবেন বিশ্বসেরারা।
কাতারের এই স্টেডিয়ামটি মূলত বিশ্বকাপকে সামনে রেখেই তৈরি করা। ২০১০ সাল থেকে নকশা চেয়েও মনের মতো হচ্ছিল না কর্তৃপক্ষের। শেষে আয়োজক কমিটি বাটি-আকৃতির একটি নকশাকে বেছে নেয়। সুন্দর লুসেইল স্টেডিয়ামে এক সঙ্গে বসে ৮০ হাজার দর্শক খেলা উপভোগ করতে পারবেন।
বৈশ্বিক মহাযজ্ঞ শুরুর দ্বিতীয় দিনে এখানে মেসি-ডি মারিয়াদের আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হবে সৌদি আরবের। চারদিন পর ২৬ নভেম্বর মেক্সিকোর বিপক্ষে লড়বে আলবিসেলেস্তেরা। ২৪ তারিখ লুসেইলে নেইমার-জেসাসদের ব্রাজিল খেলবে সাইবেরিয়ার বিপক্ষে। ২ ডিসেম্বর হলুদ জার্সিধারীদের প্রতিপক্ষ ক্যামেরুন। রোনালদো-ব্রুনোদের পর্তুগাল ২৮ তারিখ মুখোমুখি হবে নুনেজ-সুয়ারেজদের উরুগুয়ের বিপক্ষে। এখানে বসবে শেষ ষোলোর একটি, কোয়ার্টার ফাইনালের একটি ও একটি সেমিফাইনালের মহারণ। ১৮ ডিসেম্বর এই মাঠেই হবে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ।
২০১৭ সালে নির্মাণ শুরু হয়ে ২০২১-এর নভেম্বরে কাজ শেষ হয়। দৃষ্টিনন্দন ভেন্যুটি লুসেইল আইকনিক স্টেডিয়াম নামেও পরিচিত। ব্রিটিশ সংস্থা ফস্টার পার্টনার্স ও পপুলাস মাঠটির নকশা দিয়েছে। এটি দক্ষিণ দোহার খুব কাছে এবং পারস্য উপসাগরের উপকূলে অবস্থিত। পুরনো জাহাজ ও সেটির বিভিন্ন বস্তুর স্তর সজ্জা নকশায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
সুবিশাল স্টেডিয়ামটিতে রয়েছে আধুনিক প্রায় সব সুযোগ-সুবিধা। সোনালি রঙয়ের মাঠটিতে আলো-ছায়ার খেলা করার অনিন্দ্য সুন্দর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। স্টেডিয়ামটির প্রায় সব কাজ সৌরবিদুৎ দিয়ে সম্পন্ন করা হবে। কাঁচের আবরণ ও ধাতব পদার্থের মিশেলে গড়া মাঠটির ছাদ বিশেষ উপাদান দিয়ে গড়া। যেটি বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পাশাপাশি স্টেডিয়ামকে বালি, গরম বাতাস থেকে দূরে ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।
বিশ্বকাপের পর সেটি অর্ধেকে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত আসনও সেই সময় সরিয়ে ফেলা হবে বলে জানিয়েছে স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মাঠের বাকি অংশে দোকান, ক্যাফে, অ্যাথলেটিকসের জন্য ছেড়ে দেয়া হবে। পাশাপাশি শিক্ষার সুযোগসুবিধা ও স্বাস্থ্যক্লিনিক করার পরিকল্পনা মাথায় রেখে এগোচ্ছে লুসেইল কর্তৃপক্ষ।