সেন্টমার্টিন দ্বীপের উত্তরপাড়া সৈকতে মৃত অবস্থায় বিলুপ্ত প্রজাতির হক্সবিল কাছিম পেয়েছেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকরা।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে তারা এই বিলুপ্ত প্রজাতির কাছিম পান।
সামুদ্রিক কাছিমের জন্য দিন দিন অনিরাপদ হয়ে উঠেছে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। এক সময় শীতের মৌসুমে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে প্রচুর পরিমাণ সামুদ্রিক কাছিম দ্বীপে ডিম পাড়তে আসত। কিন্তু গেলো দু’বছর ধরে সেটি অনেকটায় কমে গেছে।
বিষয়টির জন্য দ্বীপে হোটেল মোটেল রিসোর্ট ও কটেজসহ নানা স্থাপনা বৃদ্ধি, মানুষের উৎপাত, শব্দ ও বন্যপ্রাণীর উপস্থিতিকে দায়ী করছেন গবেষকরা। তারা দ্বীপে ১০ দিন গবেষণার কাজ করবেন।
৮ সদস্যের গবেষক দলের নেতৃত্বে দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ মোহাম্মদ শরীফ। তিনি বলেন, গবেষণার কাজে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে রয়েছেন তারা। শনিবার বিকেলে বালিয়াড়িতে মৃত কাছিম দেখেন তিনি যার আকার প্রায় ১ ফুটের মতো। কাছিমটির পিঠের চামড়া উঠে গিয়েছিল, এর পা এবং পেছনের অংশ বিচ্ছিন্ন ছিল।
এটি দুর্লভ প্রজাতির বিরল সামুদ্রিক কাছিম। সাধারণত কোরাল এলাকা তাদের খুব পছন্দ এবং এসব এলাকায় তাদের বসবাস। এটি সাঁতারের মাধ্যম প্রবালে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে। কাছিমটি হক্সবিল প্রজাতির। যার ঠোঁট বাজপাখির মতো।
আবু সাঈদ মোহাম্মদ শরীফ বলেন, সম্ভবত ৪/৫ দিন আগে মারা যায় কাছিমটি। কিন্তু কিভাবে বিলুপ্ত প্রায় কাছিমটি মারা গেল তা জানা যায়নি। তবে মাথার আঘাতের চিহ্নি দেখে ধারণা করা যায়, বেওয়ারিশ কুকুরের আক্রমণে কাছিমটি মারা গেছে।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে নানা কারণে কাছিমের ডিম পাড়ার আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে। দ্বীপে হোটেল মোটেল রিসোর্ট ও কটেজসহ নানা স্থাপনা বেড়েছ। একই সঙ্গে মানুষের আনাগোনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাত। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, কুকুর কাছিমকে আক্রমণ করছে এবং ডিমও নষ্ট করে দিচ্ছে। এসব কারণে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে আগের মতো কাছিম দেখা যায় না। বিশেষ করে, হক্সবিল কাছিম একদম দেখাই যায় না। গেলো বছর বা চলতি বছর হক্সবিল কাছিম দ্বীপে এসেছিল কিনা তা জানা নেই।
সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, “প্রধান বিষয় কাছিম যেখানে ডিম পাড়তে আসে প্রতিবছর সেই নির্দিষ্ট স্থানেই ডিম পাড়ে। সেখানে যদি মানুষের কোন ধরণের উৎপাত থাকে অর্থাৎ শব্দ, মানুষের বিচরণ বা হিংস্র বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি থাকে তাহলে সেখানে আর সামুদ্রিক কাছিম ডিম পাড়তে আসে না। সেন্টমার্টিন দ্বীপের যেসব স্থানে কাছিমের আবাসস্থল ছিল, সেগুলো বিভিন্ন কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়াও দ্বীপে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যাও বেড়েছে। এসব কারণেই কিন্তু কাছিম এখন হুমকির সম্মুখীন।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে খুব কম রেকর্ডই আছে কাছিম এসেছে গত দুই-এক বছরে। কিন্তু দ্বীপে এর আগে প্রচুর কাছিম আসতো।
সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, কাছিমের যে ডিম পাড়ার আবাসস্থল আছে এগুলো এমনভাবে সংরক্ষণ করতে হবে, যা একদম প্রাকৃতিকভাবে সংরক্ষণ থাকে। দ্বীপে যে ডেইলগুলো ছিল, তা নষ্ট হয়ে গেছে। এই ডেইলগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে। এখন ভাবতে হবে, কাছিম যেখানে ডিম পাড়ে সেসব স্থান চিহ্নিত করতে হবে। একই সঙ্গে এসব স্থানে যাতে মানুষ আনাগোনা, গান-বাজনার শব্দ বা কুকুরের উৎপাত না থাকে জরুরিভাবে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।