ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের সাইফুল ইসলাম ছিলেন কাপড়ের ব্যবসায়ী, পাশাপাশি সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে মাদক কারবারিদের তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়মিত দিতেন। মূলত তিনি ছিলেন মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ। যিনি মাদকমুক্ত সমাজ দেখতে চাইলেন তাকেই চোখ উপড়ে নৃশংসভাবে মাদক কারবারীদের হাতে খুন হতে হলো।
এলাকার মাদক কারবারে জড়িত রাজন। গত ২৮ জুন গ্রেপ্তার হবার পর তিনি ধারণা করেন তার গ্রেপ্তারের পেছনে ব্যবসায়ী সাইফুলের হাত রয়েছে। জেল থেকে জামিনে বেড়িয়েই তিনি সাইফুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
গত ৩০ জুলাই রাতে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ সাতপাখি এলাকায় সাইফুল ইসলাম নামে এক পোশাক ব্যবসায়ীকে কতিপয় দুর্বৃত্তরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসহভাবে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে এবং চোখ উপড়ে ফেলে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এ ঘটনায় নিহতের বড় বোন বাদী হয়ে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গতকাল সোমবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১০ এর একটি দল রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর সাইফুল হত্যাকাণ্ডের মূলপরিকল্পনাকারী মো. রাজন হোসেন (৩১)সহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন, জানে আলম (৩৬), মো. সুমন ওরফে গর্দা সুমন (২৫), লিটন হোসেন (২৬), মো. দিপু (২৩), সরোয়ার আকন্দ (২৬), এবং মো. সজীব (২৯)। উদ্ধার করা হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সূচালো লোহার রড, ১টি ভাঙ্গা ক্রিকেট ব্যাট, ১টি ব্যাটন ও ৬টি মোবাইল ফোন।
মঙ্গলবার ১ আগস্ট দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য দেন।
গ্রেপ্তারদের দেওয়া প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে কমান্ডার মঈন বলেন, সাইফুল দীর্ঘদিন যাবত ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ সাতপাখি এলাকায় পরিবারের সাথে বসবাস করে আসছিলেন এবং সাতপাখি রোডে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। গ্রেপ্তার আসামিরা রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় বসবাস করেন।
কমান্ডার মঈন বলেন, সাইফুল ছিল এলাকায় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদী কণ্ঠ। মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠনে তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতেন। তিনি বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসা সম্পর্কে তথ্য দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও সহায়তা করতেন। এ কারণে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও অন্যান্যরা সাইফুলের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করে।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তার রাজন গত ২৮ জুন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হয় এবং সে ধারণা করে যে, তার এই গ্রেপ্তারের পেছনে সাইফুলের হাত রয়েছে। এছাড়াও গ্রেপ্তার জানে আলম এবং গ্রেপ্তার সুমন ও তার মাতা ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা গ্রেপ্তার হওয়ার পিছনেও সাইফুলের হাত রয়েছে বলে তারা ধারণা করে।
গ্রেপ্তার রাজন গত ১৯ জুলাই মুক্তি পেয়ে গ্রেপ্তার জানে আলম, সুমন ও অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে ভিকটিম সাইফুলকে উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পিতভাবে গত ৩০ জুলাই রাতে সাইফুল নৃশংসভাবে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব মুখপাত্র বলেন: গ্রেপ্তাররা এলাকায় এলাকায় মাদক, ছিনতাই, ডাকাতি, গাড়ি চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে।
গ্রেপ্তার রাজন স্থানীয় একটি রিক্সা গ্যারেজ পরিচালনা করতো। গ্রেপ্তার জানে আলম রাজমিস্ত্রি’র কাজ করতেন। সাইফুল হত্যাকাণ্ডে রাজনের অন্যতম সহযোগী জানে আলম। হত্যাকাণ্ডের সময় জানে আলম ভুক্তভোগী সাইফুলকে ব্যাটন দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে। গ্রেপ্তার সুমন কাঠ কাটা শ্রমিকের কাজ করতেন। সাইফুল হত্যাকাণ্ডে রাজনের অন্যতম সহযোগী ছিল। সুমন সাইফুলকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে মাথায় গুরুত্বর জখম করে।
গ্রেপ্তার লিটন, দিপু, সরোয়ার ও সজীব ভুক্তভোগী সাইফুল হত্যাকাণ্ডে রাজনের সহযোগী ছিল। গ্রেপ্তার লিটন টাইপিস্ট, গ্রেপ্তার দিপু ও সজীব জাহাজ ভাঙ্গার শ্রমিক এবং সরোয়ার রং মিস্ত্রির কাজ করেন। হত্যাকাণ্ডের সময় গ্রেপ্তার লিটন, দিপু, সরোয়ার ও সজীব লাঠি ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সাইফুলকে এলোপাথাড়িভাবে আঘাত করে গুরুতর জখম করে।