জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, ছাদকৃষি বাংলাদেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বাড়াতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।
যেখানে প্রতিনিয়ত খাদ্যপণ্যের অপচয় হচ্ছে, সেসময় দেশের খালি ছাদগুলোতে ফল ও সবজি চাষ করে নগরবাসীদের টেকসই উৎপাদনে আগ্রহী করে তোলা সম্ভব।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় প্রায় সাড়ে চার লাখেরও বেশী ছাদ এখনও অব্যবহৃত আছে– অর্থাৎ সাড়ে চার হাজার হেক্টর জায়গা খালি আছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন একটি ড্রোন সার্ভের মাধ্যমে জানতে পেরেছে যে ঢাকায় শুধুমাত্র ২ শতাংশ ছাদে ছাদকৃষির ব্যবস্থা রয়েছে।
মহানগরে ছাদকৃষি বাড়ানোর লক্ষ্যে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্প বুধবার ঢাকা উত্তরের সকল ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের জন্য একটি প্রশিক্ষণমূলক কর্মশালার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনে। এ আয়োজনে ঢাকা উত্তরের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। উপস্থিত ছিলেন চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ।
ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পের সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার জাভিয়ে বোয়ান বলেন, শহরের পরিবারগুলো ছাদকৃষির মাধ্যমে পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদনের সুবিধা পেতে পারে। সমাজে ছাদকৃষির অনেক ধরণের ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এর মাধ্যমে নগরবাসী নিজেদের খাদ্য নিজেরাই উৎপাদন করার মাধ্যমে সেই খাদ্যের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। যখন আমরা খাবারের জন্য বাইরের উৎস ও শিল্পকারখানার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি, তখন থেকেই খাদ্যের সাথে আমাদের সেই সম্পর্ক দুর্বল হয়ে গিয়েছে”।
বাড়িতে উৎপন্ন খাদ্য বর্জ্য থেকে জৈবসার তৈরির করে তা ছাদকৃষির ফসলে ব্যবহার সম্ভব। এটি বিষাক্ত কেমিক্যাল সারের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাস করার পাশাপাশি শহরের খাদ্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনারও একটি সমাধান হতে পারে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছাদকৃষির জন্য নগরবাসীদের দশ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স ছাড়ের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। এই পরিকল্পিত ট্যাক্স ছাড় নীতি বাস্তবায়নের জন্য একটি সঠিক নির্দেশিকা প্রস্তুত করতে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা শহরের চারটি কর্পোরেশনকে সহায়তা করছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বিভন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে। শহরে ছাদকৃষির পরিমাণ জানার জন্য যে ড্রোন সার্ভেটি করা হয়েছে, তাও এর একটি অংশ। আজকের কর্মশালার অংশগহণকারীরা ট্যাক্স ছাড়ের এই নির্দেশিকা প্রস্তুত এবং প্রয়োগের জন্য তাদের মতামত জানিয়েছেন। এই নির্দেশিকাটি ট্যাক্স ছাড়ের জন্য উপযুক্ত বাড়িগুলোকে সনাক্ত করতে সিটি কর্পোরেশনকে সহায়তা করবে।
ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এবং দ্রুত বর্ধনশীল শহরগুলোর মধ্যে একটি, যেখানে অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় অবদান রাখছে। দিনে দিনে শহর আরও বিস্তৃত হওয়াতে আশেপাশের কৃষি জমির সংখ্যা কমে আসা, নগরায়নের প্যাটার্ন এবং নদী ও জলপথের মাধ্যমে শহরটি সীমাবদ্ধ হওয়ার কারণে ঢাকায় আরও গাছপালা ও সবুজায়নের সুযোগ খুবই কম। ছাদকৃষি শহরের পরিবেশে একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখার পাশাপাশি গাছপালা ও সবুজায়ন বৃদ্ধির একটি বিকল্প সুযোগ তৈরি করতে সহায়তা করে।
ছাদকৃষির বিভিন্ন কৌশল নগরবাসীকে, এমনকি দরিদ্র অঞ্চলেও নিরাপদ, পুষ্টিকর খাবারের উৎস প্রদান করতে পারে। শহরের ছাদগুলো ফল এবং শাকসবজি চাষের জন্য একটি আদর্শ স্থান, কারণ তারা সূর্য, বৃষ্টি ও বাতাসের সংস্পর্শে আসে এবং তা লোকালয় এবং কর্মস্থলের কাছাকাছি অবস্থিত।
শহর জুড়ে ২০টি ছাদকৃষির প্রদর্শনী প্লট তৈরি করতে নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পটি প্রশিকা নামক একটি স্থানীয় সংস্থার সাথে কাজ করছে। এছাড়াও প্রকল্পটি বস্তি এলাকায় ৫৫০ জনকে ছাদবাগানের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং নেদারল্যান্ডসের ওয়াগেনিনজেন ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড রিসার্চের কারিগরি সহায়তায় ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্প বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে।