সম্প্রতি জারি করা সড়ক পরিবহন বিধিমালা- ২০২২ এ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকৃত সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। কারণ ১৬৭টি বিধির মধ্যে মাত্র পাঁচটি বিধিতে সড়কের নিরাপত্তার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে এবং বাকিগুলোতে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
আজ বুধবার ‘ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ’ এবং ‘বাংলাদেশ অর্থপেডিক সোসাইটির’ যৌথ আয়োজনে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘হাই-লেভেল ডায়ালগ অন রোড ট্রান্সপোর্ট অ্যাক্ট-২০১৮ অ্যান্ড রোড ট্রান্সপোর্ট রুলস-২০২২’ রোল অব মিডিয়া’ শীর্ষক একটি মতবিনিময় সভায় একথা বলেন বক্তারা।
বক্তারা মনে করেন, এই বিধিমালার আওতায় সড়কের নিরাপত্তা বজায় রাখা সম্ভব নয়।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোড সেইফটি অ্যান্ড ইনজুরি প্রিভেনশন প্রোগ্রামের ডা. মাহফুজুর রহমান ভূঁঞা বলেন, সরকার ২০১৮ সালে সড়ক পরিবহন আইন জারি করেন এবং দীর্ঘ চার বছর পরে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সড়ক পরিবহন বিধিমালা প্রণয়ন করেন। কিন্তু এই বিধিমালায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকৃত সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। বরং বিধিমালায় সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশে প্রতিবছর ২৩ হাজার ১৬৬ জন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় বলে সিআইপিআরবি এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে। এই অকাল মৃত্যু রোধ করতে জাতিসংঘের ‘সেকেন্ড ডিকেড অব অ্যাকশন ফর রোড সেইফটি ২০২১-২০৩০’ এ বর্ণিত পাঁচটি স্তম্ভ, নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ মোটরযান, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী এবং দুর্ঘটনা পরবর্তী ব্যবস্থাপনাকে কাজে লাগানো হলে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার হ্রাস পায় ও দীর্ঘমেয়াদী পঙ্গুত্ব থেকে মানুষকে রক্ষা করা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই স্তম্ভগুলো কাজে লাগিয়ে মৃত্যু হার কমিয়ে এনেছে।
তবে এধরনের পদক্ষেপ গ্রহনের পাশাপাশি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রণীত ৫টি আচরণগত ঝুকিঁর (গতি কমানো, সিটবেল্ট ব্যবহার, সঠিক হেলমেট ব্যবহার, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি না চালানো এবং শিশুদের জন্য বিশেষ সিটের ব্যবস্থা) উপরেও নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে জানান ডা. রহমান।
সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আওয়াল রিজভী বলেন, সড়ক পরিবহন বিধিমালায় সড়কের নিরাপত্তার বিষয়টি অল্প পরিমাণে উল্লেখ করা হলেও সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিত রয়েছে। তাই সড়ককে নিরাপদ করতে গাড়ির গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ, সঠিকভাবে সিটবেল্ট পরিধান, গুনগত হেলমেটের ব্যবহার নিশ্চিত করা। দুর্ঘটনা পরবর্তী আহত ব্যক্তির যথাযথ চিকিৎসা এবং পুর্নবাসন সংক্রান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এর আগে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আওয়াল রিজভীর সভাপতিত্বে এবং টিভি টুডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাংবাদিক নেতা মুনজুরুল আহসান বুলবুলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অর্থপেডিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোনায়েম হোসেন, মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ও গ্লোবাল হেলথ এডভোকেসি ইনকিউবেটরের রোড সেইফটি প্রোগ্রামের ক্যান্ট্রি কো-অরডিনেটর ড. মোঃ শরিফুল আলম, দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম-বার্তা সম্পাদক সোহরাব হোসেন, বাংলাভিশন টেলিভিশনের জ্যৈষ্ঠ বার্তা সম্পাদক আবু রুশ মো. রুহুল আমীন, নাগরিক টিভির প্রধান প্রতিবেদক শাহনাজ শারমিন ও দৈনিক ইত্তেফাকের মাইনুল হোসেন।