চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

জাতিসংঘে কেন গিয়েছিল ভারতীয় ধর্মগুরুর স্বঘোষিত দেশ ‘কৈলাসা’?

সম্প্রতি জাতিসংঘের এক আলোচনা সভায় যোগ দিয়েছেন ‘রিপাবলিক অব কৈলাসা’ বা ‘ইউনাইটেড স্টেটস অব কৈলাসা’ নামের একটি নতুন রাষ্ট্রের প্রতিনিধি। যার ফলে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে বিষয়টি নিয়ে।

বিশ্বের মানচিত্রে এই দেশের অস্তিত্ব কেউ দেখতে না পেলেও, এই দেশ রয়েছে। আছে এই দেশের নাগরিকও। এই দেশের সবকিছু একজনই, ‘স্বামী নিত্যানন্দ’। যিনি ভারত থেকে পলাতক একজন আসামী, এই বিতর্কিত ধর্মগুরু ধর্ষণ ও শিশু অপহরণে অভিযুক্ত। জাতিসংঘের বৈঠকে তার প্রতিনিধিদের দেখা গিয়েছে। তাদের দেশ রিপাবলিক অব কৈলাসের সুরক্ষার দাবি জানান নিত্যানন্দের প্রতিনিধি বিজয়প্রিয়া ও ই এন কুমার।

কে এই স্বামী নিত্যানন্দ?
ভারতের তামিলনাড়ুতে একটি সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করা নিত্যানন্দের আসল নাম অরুণাচলম রাজাশেখরন। সাইভা ভেল্লালা সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন তিনি। তার দাবি, মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি প্রথম আধ্যাত্মিকতা লাভ করেন। ২২ বছর বয়সে তার আধ্যাত্মিকতার বিষয়ে সম্পূর্ণ অনুভূতি হয়।

২০০২ সালে নিত্যানন্দ নিজের ধর্মের সূচনা করেন। ২০০৩ সালে তিনি কর্নাটকে প্রথম উপাসনালয় তৈরি করেন। এরপর দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে তার উপাসনালয় তৈরি হয়।

স্ব-ঘোষিত ধর্মগুরু নিত্যানন্দের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অভিযোগ, নেওয়া হয়েছিল কারাগারেও। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে শিশু ধর্ষণ, শোষণ ও অপহরণ। নিজের আশ্রমে শিশুদের দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিসহ বিভিন্ন বেআইনি কাজে ব্যবহার এবং আটকে রাখার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে নিত্যানন্দের বিরুদ্ধে।

২০১০ সালে কর্নাটকে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা হয়। স্বঘোষিত ধর্মগুরুকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল সেই বার। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। কিন্তু ২০২০ সালে নিত্যানন্দের জামিন বাতিল করা হয়। এরপরই তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।

নতুন এই দেশ ‘কৈলাসা’ কোথায়?

ভারত থেকে পালিয়ে গিয়ে ২০২০ সালে নিত্যানন্দ আবারো আসেন আলোচনায়। দেশ থেকে পালানোর পর নিত্যানন্দ একটি দ্বীপ কিনেছিলেন। দ্বীপটিকে একটি পৃথক দেশ হিসাবে ঘোষণা করা হয় এবং কৈলাসা নামে নামকরণ করা হয়। নিত্যানন্দের দেশ কৈলাসা দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরে রয়েছে। তিনি দাবি করেন, নিজস্ব দেশ তৈরি করেছেন তিনি, যার নাম ‘ইউনাইটেড স্টেটস অব কৈলাসা’।

মূলত দক্ষিণ আমেরিকায় একাধিক ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে, যা যেকোনো ব্যক্তি চাইলে কিনতে পারেন। তিনি সে সুযোগ ব্যবহার করেন। তার দাবি, কৈলাস হলো প্রাচীন হিন্দু সভ্যতার ভিত্তিতেই তৈরি। এই দেশে খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা এবং চিকিৎসা বিনামূল্যে পাওয়া যায়।

অনলাইনে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে এই দেশের অস্তিত্ব থাকলেও, বাস্তবে এই দেশ কোথায় অবস্থিত, তা কেউ জানেন না। অনুমান করা বলা হচ্ছে, দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরের কাছেই কোনো একটি দ্বীপ কিনে, তাতে নিজের দেশ তৈরি করেছেন। কৈলাস সরকারের একটি নিজস্ব ওয়েবসাইটও রয়েছে। জাতীয় সঙ্গীত ও নিজস্ব পতাকাও রয়েছে। নিত্যানন্দের সমর্থকরা তাদের বাড়ি, গাড়িতে এই পতাকা ব্যবহার করতে পারেন।

নিত্যানন্দের দেশের নিজস্ব মুদ্রা ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কও রয়েছে বলে দাবি করছেন তারা। শুধু তাই নয়, নিত্যানন্দ নিজেই এই দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। দেশের পতাকায় নিজের ছবিও লাগিয়েছেন তিনি। তিনি কৈলাসা আসার জন্য মানুষকে ভিসা দেবেন বলেও দাবি করছেন।

জাতিসংঘে কৈলাস নিয়ে আলোচনায়:
২৪ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের বৈঠকে ‘রিপাবলিক অফ কৈলাসা’র প্রতিনিধিদের দেখা গিয়েছে। জাতিসংঘের এই বৈঠকে বিজয়প্রিয়া নিত্যানন্দ নামে এক নারী বক্তব্য রাখেন। বিজয়প্রিয়া নিত্যানন্দ নিজেকে ইউনাইটেড স্টেটস অব কৈলাসের প্রতিনিধি হিসেবে বর্ণনা করেন।

তিনি দাবি করেন যে এটি হিন্দুদের প্রথম সার্বভৌম দেশ, যা নিত্যানন্দ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। নিত্যানন্দকে হিন্দুদের ‘সর্বোচ্চ গুরু’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন বিজয়প্রিয়া। এছাড়া অভিযোগ করেছেন যে তিনি নির্যাতিত হচ্ছেন।

এছাড়া তিনি দাবি করেন, নিত্যানন্দ প্রাচীন হিন্দু সভ্যতা ও তাদের ১০ হাজার ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করছেন। এই কাজ করতে গিয়ে তার মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হয়েছেন নিত্যানন্দ। হিন্দু ধর্মের প্রাচীন রীতিনীতি পালন করায় নির্যাতিত হয়েছেন তিনি। মাতৃভূমিতে তার ধর্মপ্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিজয়প্রিয়া।

 

বিজয়প্রিয়ার কথা বলার পর কৈলাসার পুরুষ প্রতিনিধি নিজেকে ই এন কুমার নামে পরিচয় দেন। নিজেকে ক্ষুদ্র কৃষক বলে পরিচয় দেয়া এই ব্যক্তি দাবি করেন, কৈলাসা ইকুয়েডরের উপকূলে অবস্থিত একটি দেশ, যার নিজস্ব জাতীয় পতাকা, জাতীয় ফুল-পশু, পাসপোর্ট এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রয়েছে।

তিনি জানান, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে নিত্যানন্দ দেশে ফ্লাইট চলাচলের ঘোষণা দেন। কৈলাসের ওয়েবসাইটে একে পৃথিবীর ‘সবচেয়ে বড় হিন্দু জাতি’ হিসেবে বর্ণনা করেন। কৈলাসা সীমানা ছাড়া একটি দেশ এবং বিতাড়িত হিন্দুদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, যারা নিজ দেশে নিগৃত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক ফোরামে স্বীকৃতি ও গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার জন্য ‘কৈলাসা’-এর প্রতিনিধিদের জেনেভায় পাঠানো হয়েছিল বলে অনেকের ধারণা। যদিও এটি স্পষ্টতই যে জাতিসংঘ এখনও এটিকে দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি।