‘রমাদুন’ ধাতু থেকে আগত ‘রমাদান’ শব্দের অর্থ পুড়িয়ে ফেলা, জ্বালিয়ে দেয়া, ভস্ম করা। হজরত আনাস (রা.) এর সূত্রে রসুল (সাঃ) এর হাদিসে এসেছে, “রমজান মাসের নাম ‘রমাদান’ রাখার কারণ হলো এই মাস গুনাসমূহকে নেকি দ্বারা পুড়িয়ে ফেলে।” (তাফসিরে দুররে মনসুর, খণ্ড ১)
অপার নিয়ামতের ঝুলি নিয়ে আগমন করা রমজানের মূল বিশেষত্ব হিসেবে পবিত্র কুরআনে এসেছে, “লায়াল্লাকুম তাত্তাকুন।” অর্থাৎ, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো। (সুরা বাকারা, ১৮৩ নং আয়াত) মুত্তাকির বৈশিষ্ট্য অনুসারে মুত্তাকি হতে পারার অন্যতম বিশেষত্ব গুনাহ থেকে মুক্ত হওয়া যা মাগফিরাতের মাধ্যমে অর্জিত হয় এবং সে প্রক্রিয়ারই পূর্ণ বাস্তবতা নিয়ে রমজান ঘোষণা করে একের পর এক শুভ সংবাদ।
যদিও বা একটি হাদিসে পাকে রমজানকে তিনভাগে বিভক্ত করে মাঝের দশককে মাগফিরাতের দশক বলা হয়েছে, তদুপরি পুরো রমজানেই চলে মাগফিরাতের কর্মসূচি। যার প্রমাণ মিলে অন্যান্য হাদিসে পাকে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে সহিহ সনদে বর্ণিত, সুনানে ইবনে মাজাহ শরিফের ১৬৪১ নং হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা পালন করল, তার পূর্বের গুণাহসমূহ ক্ষমা করা হলো।”
রমজানের মাগফিরাত সম্পর্কে একই বর্ণনাকারী থেকে অপর হাদিসেও এরূপ আশা জাগানিয়া সুসংবাদ লক্ষ্য করা যায়। রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, “যখন রমজান মাসের প্রথম রাত আসে, তখন শয়তান ও অভিশপ্ত জিনদের শিকলবন্দি করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা রাখা হয় না। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, এর একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। এবং একজন আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকেন, হে সৎকর্মপরায়ণ, অগ্রসর হও। হে অসৎকর্মপরায়ণ, থেমে যাও। আল্লাহ তায়ালা (এই রমজানের) প্রতি রাতে অসংখ্য লোককে জাহান্নাম থেকে নাজাত দেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১৮৯৮)
এই রমজানের প্রতি রাতে যে অসংখ্য লোককে ক্ষমা করা হয়, তার প্রমাণ মিলে অন্য হাদিসেও। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে আরও ওকটি হাদিস এসেছে মিশকাত শরিফে। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, তাঁর উম্মতকে রমজান মাসের শেষ রাতে মাফ করে দেয়া হয়। নিবেদন করা হলো, “হে আল্লাহর রসুল, সেটা কি লায়লাতুল কদরের রাত?” তিনি উত্তর দিলেন, “না। বরং আমলকারী যখন নিজের আমল শেষ করে, তখনই তার বিনিময় তাকে দিয়ে দেয়া হয়।”
শেষোক্ত হাদিসে শেষরাতের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বস্তুত গভীর রাতে যখন সবাই ঘুমে নিমগ্ন থাকে, তখন জাগ্রত বান্দার সাথে আল্লাহর যোগাযোগ হয় অতি নিবিড়। সে সময়ে বান্দা যা চায়, আল্লাহ তাই দিতে থাকেন। এ কারণেই বুজুর্গানে দিনরা শেষরাতে তাহাজ্জুদ পড়ার তাগাদা দিয়ে থাকেন। সুতরাং, কেউ যদি এই রমজানের শেষরাতে তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান, আল্লাহর গাফ্ফারিয়্যতের দরজা তার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর ‘গাফফার’ তথা অতীব ক্ষমাশীল নামের পূর্ণ তাজাল্লি আমাদের উপর বর্ষিত হোক, এটাই প্রার্থনা।