চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

তাকওয়া অর্জনের মোক্ষম সময় রমজান

KSRM

রহমত, বরকত, মাগফিরাত, নাজাতের সমন্বয়ে সজ্জিত হয়ে প্রতি বছর ‘রমজান’ নামে মুমিন-মুসলমানের দ্বারে একটি মাস আগমন করে। সিয়াম-সাধনার এই মাসে নিছক উপবাস থাকাই উদ্দেশ্য নয়। বরং এই মাস আমলের অনুশীলন ও তাকওয়া অর্জনের মাস। আর মহান আল্লাহ তা’আলা তার বান্দাদের তাকওয়ার রঙে রাঙাতেই এই মাসে দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম-সাধনাকে ফরজ করেছেন। মহান আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, “হে ইমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।” (সুরা বাকারা, আয়াত নং ১৮৩)।

সাধারণভাবে আমরা তাকওয়া বলতে বুঝি, খোদাভীতি। তাকওয়া হচ্ছে আল্লাহর ভয়ে গুনাহের কাজ থেকে সর্বদা নিজেকে বিরত রাখা। একবার হজরত ওমর (রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহু) হজরত উবাই ইবনে কাব (রাদ্বিআল্লাহু আনহু)-কে জিজ্ঞেস করলেন, তাকওয়া কী? হজরত উবাই ইবনে কাব (রাদ্বিআল্লাহু আনহু) বলেন, আপনি কি কখনো কাঁটা বিছানো পথে হেঁটেছেন? হজরত ওমর (রাদ্বিআল্লাহু আনহু) বলেন, হ্যাঁ। হজরত উবাই ইবনে কাব (রাদ্বিআল্লাহু আনহু) বলেন, কাঁটা বিছানো পথে আপনি কীভাবে হেঁটেছেন? হজরত ওমর (রাদ্বিআল্লাহু আনহু) বলেন, খুব সাবধানে। কষ্ট সহ্য করে হেঁটেছি যাতে আমার শরীরে কাঁটা বিঁধে না যায়। হজরত উবাই ইবনে কাব (রাদ্বিআল্লাহু আনহু) বলেন, এটাই হচ্ছে তাকওয়া। (তাফসিরে কুরতুবি, ইবনে কাসির)।

Bkash July

কাঁটাযুক্ত পথে কাঁটা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ যেভাবে সতর্ক হয়ে চলে, ঠিক সেভাবে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন সেগুলো থেকে বেঁচে থাকা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আল্লাহ যা ভালোবাসেন, সেই অনুযায়ী আমল করার নাম তাকওয়া। আমরা কীভাবে বুঝবো, আমাদের তাকওয়া অর্জিত হয়েছে? ফকিহ হজরত আবুল লাইস সমরকন্দী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন: কারো কলবে প্রকৃতভাবে তাকওয়া অর্জিত হয়েছে কিনা, তা সাতটি লক্ষণের মাধ্যমে বুঝা যাবে। এই লক্ষণগুলো কারো চাল-চলন, কথাবার্তা, ভাব-ভঙ্গি ও জীবনধারায় পরিলক্ষিত হলে বুঝা যাবে, সে তাকওয়াবান। সেই লক্ষণগুলো হলো:

১. সে তার জবান দিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট, পরনিন্দা, অপবাদ, মন্দকথা, অহেতুক কথাবার্তা বলবে না। সে সর্বদা নিজেকে আল্লাহর জিকির, কুরআন তিলাওয়াত ও ইলমে দ্বীন চর্চায় নিমগ্ন রাখবে।

Reneta June

২. সে অপরের প্রতি শত্রুতা পোষণ, বিনা দোষে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা এবং হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণা, এসব থেকে মুক্ত থাকবে।

৩. সে আল্লাহর ভয়ে কখনো হারাম খাদ্য ও পানীয় আহার এবং হারাম পোশাকাদি পরিধান করবে না।

৪. সে আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে নিজেকে অবৈধ উপার্জন ও অবৈধ পথে উপার্জিত জীবিকা ভক্ষণ করা থেকে বিরত রাখবে।

৫. সে তার হাতকে কখনোই হারামের দিকে প্রসারিত করবে না।

৬. সে তার পদযুগল দিয়ে আল্লাহর নাফরমানি ও অবাধ্যতার দিকে পা অগ্রসর করবে না।

৭. সে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে গুণাহের কাজ থেকে বিরত থেকে সর্বদা আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতে নিয়োজিত থাকবে। (মুকাশাফাতুল কুলুব)।

মুমিন জীবনের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত, তাকওয়া অর্জন। নতুবা ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে লাঞ্ছনা ভোগ করতে হবে। আর তাকওয়াবানদের জন্যই রয়েছে পরকালের কল্যাণ ও জান্নাতের ভোগবিলাস। যা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন, “তাকওয়াবানদের জন্যই রয়েছে তোমার রবের পক্ষ থেকে পরকালের কল্যাণ।” (সুরা যুখরুফ: ৩৫)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, “নিশ্চয়ই তাকওয়াবানরাই থাকবে জান্নাত ও ভোগবিলাসে।” (সুরা তুর, আয়াত-১৭)

রমজান মাস হচ্ছে, একজন মুমিনের জন্য নিজেকে নিষ্পাপ করে গড়ার মোক্ষম সময়। তাই আসুন আল্লাহভীতি অর্জন করে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর দাসত্বে নিজেকে নিয়োজিত করি। পরিশেষে তাকওয়া অর্জনের গুরুত্ব প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালার এই বাণীই প্রণিধানযোগ্য, ‘যারা ইমান এনেছে এবং তাকওয়া অর্জন করেছে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া এবং আখেরাতে সুসংবাদ।’(সুরা ইউনুস: ৬৩-৬৪)।

I Screen Ami k Tumi
Labaid
Bellow Post-Green View