ভারত সরকারের ‘পদ্মশ্রী’ পদকের জন্য মনোনীত হওয়ার পর থেকেই শুভেচ্ছায় ভাসছেন দেশের খ্যাতনামা রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। সাংস্কৃতিক অঙ্গণ থেকে শুরু করে সাধারণ ভক্ত অনুরাগীও বন্যাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। এবার তাকে নিয়ে কথা বললেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ রাজশ্রী ভট্টাচার্য।
‘পদ্মশ্রী’র জন্য ভারত সরকার যোগ্য মানুষকে বেছে নিয়েছেন বলেও হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে এক সাক্ষাৎকারে জানান রাজশ্রী ভট্টাচার্য। তার ভাষ্য,“অত্যন্ত যোগ্য একজন মানুষকে এই সম্মান প্রদান করা হল। তিনি বাংলাদেশের মানুষ, নাকি ভারতীয়— এক্ষেত্রে সেটিও বড় কথা নয়। তিনি বাঙালি হিসাবে এই সম্মান পেলেন, সেটিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের জন্য গর্বের। তাছাড়া মানুষ হিসাবেও তিনি অতুলনীয়।”
বেশীরভাগ সময় ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ পদ্ম সম্মাননা দেয় ভারত সরকার- এমন অভিযোগও মানতে নারাজ রাজশ্রী। এক্ষেত্রেও রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার পদ্মশ্রী প্রাপ্তিতে প্রমাণ হিসেবে নিলেন এই রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ। বললেন,“বন্যাদি ভারতীয় নাকি বাংলাদেশি, বন্যাদির ধর্ম কী— এই আলোচনার কোনও অর্থ এক্ষেত্রে নেই। একজন যোগ্য শিল্পী হিসাবে তাঁকে এই সম্মান দেওয়া হয়েছে। তার পিছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে কি না, তা জানা নেই। তাই সে আলোচনায় না গিয়েই তাই বলতে পারি, সঠিক মানুষ সম্মান পেয়েছেন। আজ যদি অন্য কোনো রাজনৈতিক দল কেন্দ্রে থাকত, বা অন্য কোনও দলের সরকার যদি তাঁকে অন্য কোনো সম্মান দেয়— তাহলেও আমি একই কথাই বলব। এর কোনও ব্যত্যয় হবে না।”
রেজওয়ানা চৌধুরীর সাথে ব্যক্তিগত পরিচয়ের বিষয়টিও এসময় উল্লেখ করেন রাজশ্রী। বলেন,“কলকাতায় উনি যখন থাকেন, বেশ কয়েক বার তাঁর কাছে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। কখনও মনে হয়নি, কোনও দূরের মানুষের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছি। বাড়িতে উনি একেবারে আমাদের চেনা এক বাঙালি মেয়ে। কথা বলতে কখনও অসুবিধা হয় না। সহজে কথা বলা যায়, এমন একজন মানুষ উনি। সাধারণত্ব এবং অসাধারণত্বের এক চমৎকার মিশ্রণ আছে তাঁর মধ্যে।”
বাঙালি জাতিসত্তাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন বন্যা, সে পর্যবেক্ষণের কথাও বলেন কলকাতার এই রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী। বলেন,“বন্যাদি বাঙালি জাতিসত্তাকে আলাদা করে খুব গুরুত্ব দেন। বাংলাদেশে পয়লা বৈশাখের অন্যতম আকর্ষণ হল রমনার বটমূলে ছায়ানটের তরফে সংগঠিত অনুষ্ঠানটি। তার পাশাপাশি আরও একটা অনুষ্ঠান করে ‘সুরের ধারা’ সংগঠন। সেটিও কোনও অংশে কম নয়। আর এই ‘সুরের ধারা’ বন্যাদিরই সৃষ্টি। এই সংগঠন আজ বাঙালির সংগীতচর্চায় বড় ভূমিকা নিচ্ছে। আর তার পিছনে কাজ করছে বাঙালির জাতিসত্তার বোধ। সেখানে বন্যাদির ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না।”
বন্যার গানের মূল্যায়ন সম্পর্কে রাজশ্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,“কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমার প্রিয় শিষ্য’। এর পরে তাঁর প্রতিভা, তাঁর ক্ষমতা নিয়ে কারও আলাদা করে কিছু বলার থাকতেই পারে না। বন্যাদি কম বয়স থেকেই কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে থাকতেন, তাঁর কাছে শিক্ষা পেয়েছেন। বন্যাদি শান্তিনিকেতনে থেকে অনেক বছর পড়াশোনা করেছেন। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহচর্য তখন থেকেই পান। তার পাশাপাশি শান্তিদেব ঘোষ, নীলিমা সেনের মতো আরও বহু দিকপাল সংগীতগুরুর ছাত্রী তিনি। শিল্পী হিসাবে আলাদা করে তাই এখন তাঁর গানের গুণমান বিশ্লেষণের প্রয়োজন আর নেই।”-হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা