চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ঢাকাগামী অবরুদ্ধ ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে রেল কর্মচারীরা

এক ঘণ্টা ৫ মিনিট অবরোধ করে রাখার পর অবশেষে ঢাকাগামী পঞ্চগড় এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনটি ছেড়ে দিয়েছে দিনাজপুর রেলওয়ে কর্মচারীরা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে সৃষ্ট ঘটনায় মামলা দায়েরের দাবিতে দুপুর ২টা ২৩ মিনিট থেকে বিকেল ৩টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে কর্মচারীরা পঞ্চগড় এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনটি দিনাজপুরে অবরোধ করে রাখে রেলওয়ে কর্মচারীরা।

দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও স্টেশনের কর্মকর্তাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে মামলার দাবি জানায়। পরবর্তীতে মামলা রজুর আশ্বাস পেয়ে বিকেল ৩টা ২৮ মিনিটে অবরোধ তুলে নেয় তারা।

বুধবার সন্ধায় দিনাজপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের হাতে দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও স্টেশনের কর্মকর্তারা হামলা শিকার হন। এসময় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্যকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে বুধবার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় এই ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মাসুদ পারভেজের মাথা ফেটে যায়। তাকে দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষে টিকিট কালেক্টরের পরিহিত পোশাক ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

জানা গেছে, সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় বিনা টিকিটে রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ করতে যান দিনাজপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শাহ শাহনেওয়াজ। এ সময় দায়িত্বরত স্টেশন কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাকে টিকিট কালেক্টর রুমে নিয়ে গিয়ে বন্ধ করে রাখেন। পরে খবর পেয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৭-৮ জন সদস্য স্টেশনে এসে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, টিকিট কালেক্টর ও স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ওপর লোহার রড দিয়ে অতর্কিত হামলা চালান।

এতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মাসুদ পারভেজের মাথা ফেটে যায় ও টিকিট কালেক্টর মো. রিপনের পরিহিত পোশাক ছিঁড়ে যায়। পরে রেলওয়ে পুলিশ এগিয়ে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময় আহত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মাসুদকে উদ্ধার করে দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

টিকিট কালেক্টর মো. রিপন জানান, আমি তাকে (মো. শাহ শাহনেওয়াজ) টিকিট দেখাতে বলি। এ সময় তিনি টিকিট দেখাতে পারেননি। তাই তাকে পাশে টিকিট কালেক্টর রুমে নিয়ে যাই। কিছুক্ষণ পর মাদকের ইন্সপেক্টর রায়হান আহম্মেদ ও এএসআই হাসিবুল হাসানসহ ৭ থেকে ৮ জন লোহার রড দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মাসুদ পারভেজের মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করেন। তারা আমার পরণের কাপড় ছিঁড়ে ফেলেন। পরে স্টেশনে দায়িত্বরত নারী কর্মকর্তাদের ওপর হামলা করলে তারা তাদের রুমে পালিয়ে গিয়ে রক্ষা পান।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.শাহ শাহনেওয়াজ জানান, বিকেলে আমি ও আমার অফিস সহকারী মাসুদ আলম স্টেশনে যাই। স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে মাসুদকে টিকিট কাটতে পাঠিয়ে আমি প্রধান ফটক দিয়ে স্টেশনে প্রবেশ করতে যাই। এ সময় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আমার টিকিট দেখতে চান। আমি তাদের বলি আমার টিকিট কাটতে গেছে, আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি। এ সময় স্টেশনের এক কর্মচারী আমাকে ধাক্কা মারতে মারতে টিকিট কালেক্টরদের রুমে নিয়ে গিয়ে তালা মেরে রাখেন। এ সময় মাসুদ আলম অফিসে জানালে অফিস থেকে ইন্সপেক্টর রায়হান আহাম্মেদসহ কয়েকজন স্টেশনে এসে আমাকে রুম থেকে বের করেন। আমাকে বের করার সময় স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও আমাদের মধ্যে একটু ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এতে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্যের মাথা ফেটে গেছে। সম্ভবত ধাক্কাধাক্কির সময় কারো মোবাইল তার মাথায় লেগে ফেটে গেছে।

দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাসুদ পারভেজ জানান, আমাকে লোহার রড দিয়ে মারা হয়েছে। এসময় আমি মাটিতে পড়ে গেলে তারা আমাকে এলোপাথারি কিলঘুষি ও পা দিয়ে লাথি মারতে থাকে। আমার মাথায় ৩টি সেলাই পড়ছে।

এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত স্টেশন সুপার মোশাররফ হোসেন ও রেলওয়ে থানার ওসি এরশাদুল হক ভুইয়া জানান, স্টেশনে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় দুই পক্ষকে নিয়ে রেলওয়ে থানায় বসা হয়। সালিশীর মাধ্যমে সৃষ্ট ঘটনার নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হয়।