কাতার বিশ্বকাপের তৃতীয় দিনে আজ মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা, মাঠে নামবেন মহাতারকা লিওনের মেসি। আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ সৌদি আরব। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের অবস্থান অনুযায়ী ৩-এর সাথে ৫১-এর লড়াই। এটি সত্য যে, আর্জেন্টিনা ছাড়া বিশ্বকাপ ফুটবল উন্মাদনা বেমানানই বটে। ফুটবলের কারণেই আর্জেন্টিনাকে ঘিরে আবেগ আর অনুভূতির শেষ নেই। সেই আবেগ আর অনুভূতির ঘনত্ব এদেশে, এই উপমহাদেশে যেন আরও আরও বেশি। আর্জেন্টিনাকে নিয়ে এদেশে যত মাতামাতি হয়, তা পৃথিবীর কোনো দেশেই হয় না বললেই চলে। আজ তাই সবার চোখ আর্জেন্টিনা-সৌদি আরবের ম্যাচের দিকে। চোখ মহাতারকা লিওনেল মেসির দিকে।
শক্তিমত্তার বিবেচনায় সৌদি আরব অনেক পিছিয়ে। আর আর্জেন্টিনা এখন দুরন্ত, ক্ষিপ্র এক চিতাবাঘ। জমে থাকা আক্ষেপ, অপ্রাপ্তি মেলানোর এক বিশ্বকাপে তারা ফের এক স্বপ্নে বিভোর। এমন এক সন্ধিক্ষণে আজ লুসেইল স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচেই সামনে পড়েছে সৌদি আরব। বেলা ৪টায় খেলা। কাতারের সময় অনুযায়ী বেলা ১টায়। এই ম্যাচ নিয়ে কথা হয় সাবেক তারকা ফুটবলার ছাঈদ হাসান কাননের সাথে।
ছাঈদ হাসান কানন বলেন, ‘এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট হল আর্জেন্টিনা। সবদিক দিয়েই তারা অনেক অনেক এগিয়ে। এখন পর্যন্ত টানা ৩৬ ম্যাচে অপরাজিত। আজকে আর্জেন্টিনার সামনে সৌদি আরব কোনো ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। আর আর্জেন্টিনা এখন যেভাবে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলছে, আজকেও সেই স্ফুরণ দেখা যাবে মাঠে। তবে মাঠটাই কেবল তাদের অচেনা। আর সৌদিদের কাছে প্রতিবেশী কাতারের আবহাওয়া, মাঠ চেনা। এইটুকু ছাড়া সবই আর্জেন্টাইনদের পক্ষে। মেসি তার দলবল নিয়ে উজাড় করেই ফেলবে। সৌদি আরব সব সামলিয়ে যত কম গোল খাবে সেটাই হবে উত্তম। সেই কৌশলে খেললেই ভালো হবে। কেননা এশিয়ানরা বিশ্বকাপে খুব ভালো করতে পারছে না।’
কাতার বিশ্বকাপে এশিয়ানদের পারফরম্যান্স নিয়ে ভীষণরকম অখুশি সাবেক তারকা ফুটবলার ছাঈদ হাসান কানন। তার মতে, উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক কাতার এবং পরবর্তী ম্যাচে ইরানের পারফরম্যান্স প্রমাণ করেছে বিশ্ব ফুটবলে এশিয়ানরা সবদিক দিয়েই অনেক অনেক পিছিয়ে। উল্লেখিত দুটি দলের প্রথম ম্যাচেই ব্যবধানটা পরিষ্কার ধরা পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘ইউরোপ, লাতিন (ল্যাটিন) আমেরিকা ফুটবলের কৌশলগত দিক যেভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছে, সেখানে এশিয়ানরা থমকে গেছে। মাঠে এশিয়ানদের দুর্বল গতি, এলোমেলো আক্রমণ, সমন্বয়হীনতা- সবার চোখে ধরা পড়েছে। এমন ফুটবল এশিয়ানদের জন্য কোনো নতুন বার্তা বয়ে আনবে না।’
উল্লেখ্য যে, এশিয়া থেকে বিশ্বকাপে টিকিট পাওয়া দলগুলোর মধ্যে স্বাগতিক কাতার এবং ইরান ইতোমধ্যে একটি করে ম্যাচ খেলেছে। দুটি দলের একটি দলও আলো ছড়াতে পারেনি, বরং বড্ড দুর্বল ফুটবল উপহার দিয়ে পরাজিত হয়েছে। কাতার উদ্বোধনী ম্যাচে হেরেছে ইকুয়েডরের কাছে। অন্যদিকে ইরান ২-৬ গোলে পরাজিত হয়েছে ইংল্যান্ডের কাছে। সেই ধারাবাহিকতায় আজ সৌদি আরব মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনার।
কানন বলছিলেন, ‘‘আজতো বাঘের সামনে পড়েছে সৌদি আরব। একটা মিশন নিয়ে এসেছে মেসির দল। লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া। প্রতিটি ম্যাচই তারা খেলবে নিজেদের সব সামর্থ্য দিয়ে। টিম কম্বিনেশনও চমৎকার। পুরাতন আর নতুন মিলিয়ে তুলনামূলক অনেক ভালো দল তৈরি করেছে কোচ স্কালোনি। ফরোয়ার্ড পজিশনে লিওনের মেসি, ডি মারিয়ার সাথে তরুণ মার্টিনেজ, দিবালা অনেক বেশি ইফেকটিভ। গোলপোস্ট থেকে মধ্যমাঠ, ফরোয়ার্ড সবই সাজানো গোছানো- আর সব অর্থেই পরিপূর্ণ দল আর্জেন্টিনা। অন্যদিকে নিজস্ব চেনা পরিবেশ ছাড়া সৌদি আরবের আর তেমন কিছুই নেই। সৌদি আরব আজকে তাই একটা ছক কষে খেলবে সেটা হল যত কম গোল খাওয়া যায়।’
সাঈদ হাসান কানন আরও বলেন, ‘আর্জেন্টিনা দল খুব ভালো ছন্দে আছে। ছন্দে আছেন মেসিও। এই মহাতারকার খেলার মধ্যে সবাই আনন্দ খুঁজে পান। একটানা ৩৬ ম্যাচে অপরাজিত তারা। বর্তমান সময়ে আরও কিছু প্রতিভাবান ফুটবলারও যুক্ত হয়েছে দলে। কিন্তু বিশ্বকাপ এমন একটা মঞ্চ এখান থেকে ছিটকে যেতেও সময় লাগে না। এ কারণেই মেসি বারবার স্মরণ করেন ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের কথা। ফাইনালে শিরোপা জিততে জিততে হেরে গেল তার দেশ। সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনও তাকে তাড়া করে। মেসি নিজেও জানেন সেবার আর্জেন্টিনা শিরোপা পেলে তার ফুটবল জীবনে অপরিপূর্ণতা বলে কিছু থাকতো না। কিন্তু এখন বর্ণাঢ্য-বর্ণময়-বর্ণিল ফুটবল জীবন বিশ্বকাপ শিরোপাহীন থাকায় এক বিশাল অপরিপূর্ণতাও রয়েছে। সে কারণে মেসি নিজেও এই বিশ্বকাপে কঠিন এক মন্ত্র নিয়ে এসেছেন।’
আসলে মেসির জন্য এবারের বিশ্বকাপে সবকিছুই ভীষণ এক চ্যালেঞ্জ। মেসি নিজেও সেটা অনুভব করেন। বিশ্বকাপ নিয়ে তাই আগাম কিছু বলতে চান না। মাঠে সেরা পারফরম্যান্সটা দেখাতে চান।
ছাঈদ হাসান কানন বলেন, ‘‘আজ মাঠে মেসি ম্যাজিক দেখার আগ্রহ আমার নিজেরই রয়েছে। যদিও মেসি দলকে প্রায়োরিটি দেন বেশি। জয়টাকে আগে সুনিশ্চিত করতে চান। কিন্তু মেসির ম্যাজিক দেখার জন্যও সবাই উন্মুখ হয়ে আছে। মেসির পা থেকে দুর্দান্ত ফ্রি-কিক থেকে গোল আসুক এটিও আমার কাম্য। এতে বিশ্বকাপের নান্দনিকতা বৃদ্ধি পাবে। মেসির ফ্রি-কিকের গল্প তো আর নতুন নয়। তার অলোৗকিক সব ফ্রি-কিকের রূপছটা ফুটবল দর্শকরা অনেকখানি ধরেই দেখে আসছে। তার ফ্রি-কিক বরাবরই ‘ট্রেডমার্ক’ হিসেবেই গণ্য। বহু বহুবার তিনি প্রমাণ করেছেন নির্ভুল নিশানায় তিনি অনন্য। ফ্রি-কিকের ইমপ্রেসিভ ডিসপ্লেতে তার জুড়ি মেলা ভার। আজ বিশ্বকাপ আরও প্রাণময় হোক মেসির ফ্রি-কিকে।’’