বিশ্বকাপ শুরু থেকে এখন পর্যন্ত, শতবর্ষ হতে চলা আসরে কত হাজার-কোটি শব্দই না লেখা হয়েছে! কত শত গল্প, কত আখ্যানই না রচিত হয়েছে বৈশ্বিক আসরটিকে ঘিরে। এই যেমন প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা মরক্কো, রোনালদোর দলকে হারিয়ে দিতে পারলে নিজেদের নিয়ে যাবে অ্যাটলাস পর্বতেরও উঁচুতে। আফ্রিকান দল হিসেবে শেষ চারে ওঠার কীর্তিতে ‘প্রথম’ হিসেবে লেখা হয়ে যাবে মরক্কোর নাম।
আল সুমামা স্টেডিয়ামে প্রতিপক্ষ পর্তুগালের সামনে আরও বড় সুযোগ। শিরোপার খুব কাছে থেকে দুবার বিদায় নেয়া দলটির সমীকরণ এমন হোক সেটা সব পর্তুগিজ চাইবেন- ‘মরক্কোকে হারিয়ে শেষ চার, এরপর সেখানেও জয়, তারপর…।’ ভাবনাটা যতটা না ইতিহাস-পরিসংখ্যান কিংবা আবেগ নির্ভর, বাস্তবতা ঢের কঠিন। মাঠের খেলায় ব্রুনো-রোনালদোদের দিকে তাকিয়ে থাকবে পর্তুগাল। জিতলেই যে তৃতীয়বারের মতো শেষ চারে উঠবে দলটি, যাবে শিরোপা জয়ের আরেকটু কাছে।
১৯৬৬ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে এসে চমকের জন্ম দেয়া ইউরোপিয়ান দলটির সেরা সাফল্য সেবারই। ইউসেবিওর নায়কোচিত আসরে পর্তুগাল অর্জন করেছিল তৃতীয়স্থান। তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়নকে হারিয়ে দেয়ার আগে শিরোপার স্বপ্নভঙ্গ হয় ইংল্যান্ডের কাছে। ২-১ গোলে পর্তুগিজদের কাঁদিয়ে দেয়া ইংলিশরা ওয়েস্ট জার্মানিকে হারিয়ে সেবারই প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একবার শিরোপা জিতেছে।
১৯৬৬ সালে দুর্দান্ত রূপ দেখানো পর্তুগাল পরের চারটি আসরে কোয়ালিফাই করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত ৮টি বিশ্বকাপে খেলে ২০০৬ সালে আরেকবার সেমিতে উঠেছিল দলটি। সেবার চতুর্থ হয়ে থেমেছিল শিরোপার স্বপ্ন। এবার রোনালদোর সামনে অনেক বড় সুযোগ। তৃতীয়বারের মতো দলকে সেমিতে উঠিয়ে শিরোপা উঁচিয়ে ধরার মিশনে আরেকধাপ এগোনোর।
কাতারে শেষ আটের লড়াইয়ে পর্তুগালকে যে কোনোরকমের ছাড় দেবে না মরক্কো তা হিসেব-নিকেশ না করেই বলা যায়। অপরাজিত থেকে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত এসেছে মরক্কো। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে গ্রপপর্বে ড্র করার পর কানাডা ও বেলজিয়ামকে হারিয়ে নিশ্চিত করে শেষ ষোলো। সেখানে টাইব্রেকারে ৩-০ ব্যবধানে হারায় শক্তিশালী স্পেনকে। বিশ্বকাপে এটিই তাদের সর্বোচ্চ অপরাজিত থাকার ধারা। সেটি বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ হেলায় হারাতে চান না কোচ ওয়ালিদ রেগ্রাগুইয়ে!
শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত নয়টায় লড়াইয়ে নামার আগেও বড় আসরের মঞ্চে দুবার দেখা হয়েছে দুদলের। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে ৩-১ গোলে বাজিমাত করেছিল মরক্কো। ২০১৮ সালে দারুণ এক জয়ে শোধ তুলেছিল রোনালদোর দল। ১-০ গোলের সেই জয়টিও ছিল গ্রুপপর্বে। এবার শেষ চারে ওঠার লড়াইয়ে নিজেদের পাল্লা ভারি করার লড়াইয়ে নামবে উভয় দল।
উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ের আগে বিশ্বকাপে পারফর্ম ও ইতিহাসে অনেকটা সমানে সমান পর্তুগাল ও মরক্কো। শক্তি-সামর্থ্যও দিচ্ছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস। বর্তমানে ফিফা টেবিলে ৯ নম্বরে পর্তুগাল। মরক্কো ২২তম স্থানে। দুদলের বিশ্বকাপ পারফর্মও আছে দুর্দান্ত ধারায়।
ফের্নান্দো সান্তোসের দলের ফিফা র্যাঙ্কিং ও মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে চাওয়া ঠেকাতে চাইবে মরক্কো। রোনালদোর স্বপ্নপূরণের আসরে পর্তুগিজরাও শেষটা দিয়ে লড়বে সেমির টিকিট জোগাড়ে। পরিসংখ্যানের খেরোখাতায় আরও কিছু গল্প যোগ হবে। আপাতত বাকিটা থাকছে সময়ের হাতেই।