চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

মাঠে ফরাসিরাই আজ সৌরভ ছড়াবে

ওয়াসিম ইকবাল, সাবেক তারকা ফুটবলার

গতকাল প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডস প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রকে ৩-১ গোলে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে আর্জেন্টিনা প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ গোলে পরাজিত করে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। সঙ্গত কারণেই আর্জেন্টিনা এবং অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের দিকেই চোখ ছিল বেশি। শেষদিকে এসে ম্যাচটিতে দারুণ উত্তেজনা তৈরি হলেও আর্জেন্টিনাকে আর কোনো বিপদে পড়তে হয়নি।

আজ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডের দ্বিতীয় দিন। রাত ৯টায় প্রথম লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স এবং পোল্যান্ড। রাত ১টায় দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ড খেলবে সেনেগালের সাথে। সন্দেহ নেই দুটি ম্যাচেই উত্তেজনা ঠাঁসা থাকবে। ফ্রান্স এবং পোল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচটি জমে উঠবে কাইলিয়ান এমবাপে আর লেভান্ডোভস্কির দুর্দান্ত লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন এবং সেনেগালের ইসমাঈল সেরের মধ্যেও চলবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। পোল্যান্ড ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপের পর এই প্রথমবারের মতো নকআউট পর্বে এসেছে।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে শেষ সাতটি ম্যাচে অপরাজিত ফ্রান্স (জয় ৩, ড্র ৪)। পোলিশদের বিরুদ্ধে ফরাসিরা শেষ হেরেছিল ১৯৮২ সালে এক প্রীতি ম্যাচে। আবার ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপে নকআউট পর্বে এসে ফ্রান্সের মুখোমুখি তারা। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে পোল্যান্ড ৪-০ গোলে হেরেছিল ব্রাজিলের কাছে। এদিকে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে একবারই মুখোমুখি হয়েছে এই দুটি দল। সেটা ১৯৮২ বিশ্বকাপের কথা। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ৩-২ গোলে কিন্তু জিতেছিল পোল্যান্ডই। আর শেষবার ১৯৯৬ ইউরো বাছাইপর্বে মুখোমুখি হয়েছিল এই দুই দল। দুটো ম্যাচই ড্র হয়েছিল।

আজকের ম্যাচে পোল্যান্ডের স্বপ্ন একটু বেশি। সেই স্বপ্নের কথা পোল্যান্ডের কোচ চেশ্লোভ চেসলাই মিচনেইজ বলেছেন এভাবে- ‘আমরা জানি নকআউট পর্বে জয় ছাড়া কিছুই নাই। সুতরাং আজ দল খেলবে জয়ের জন্য। বিগত দিনের সব ভুলত্রুটি সামলে খেলোয়াড়রা খেলবে। তাছাড়া আমাদের ডিফেন্স অনেক ভালো। সুতরাং আজ সব উজাড় করেই আমরা খেলবো।’

জয়ের ক্ষুধাটা পোল্যান্ডের বেশিই। কেননা অনেক অনেকদিন পর তারা উঠে এসেছে দ্বিতীয় পর্বে। তাই চমকটা দিতে চায় তারা। কিন্তু প্রতিপক্ষ তো ফ্রান্স। ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশম শুধু ঠাণ্ডা মাথায় বলেছেন, ‘পোল্যান্ডকে কোনাভাবেই আমরা ছোট করে দেখছি না। আমরা আমাদের খেলাটা খেলবো।’

এই বিশ্বকাপে অন্যতম ফেভারিট ফ্রান্স। গ্রুপপর্বে শুরুও ছিল মারাত্মক। কিন্তু তিউনিশিয়ার সাথে পরাজয় কিছুটা হলেও তাদের পথ চলার উজ্জ্বলতা ক্ষুণ্ণ করেছে। কিন্তু না, বাংলাদেশের সাবেক তারকা ফুটবলার ওয়াসিম ইকবাল এটিকে খুব বড় করে দেখতে রাজি নন। ওয়াসিম আশির দশকের অন্যতম সেরা এক স্ট্রাইকার। মাঠে নামলেই দ্যুতি ছড়াতেন, ড্রিবলিং মাস্টার হিসেবে খ্যাত ছিলেন। পরিচিত ছিলেন ব্রাদার্স ইউনিয়নের ঘরের ছেলে বলে। জাতীয় দলের নেতৃত্বও তিনি দেন। আবাহনী ক্রীড়ার চক্রের জার্সিতেও ছিলেন মুগ্ধময়।

ওয়াসিম ইকবাল

আজ ফ্রান্স-পোল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচে সাবেক তারকা ফুটবলার জয়ের ক্ষেত্রে ফ্রান্সের সৌরভই বেশি পাচ্ছেন। এগিয়ে রাখছেন ফ্রান্সকেই। ওয়াসিম বলেন, ‘ফ্রান্স সব বিবেচনায় অনেক বেটার টিম। আর এই টিমে কাইলিয়ান এমবাপের মতো এমন একজন ‘মাষ্টারমাইন্ড’ ফুটবলার রয়েছেন যে কিনা মুহূর্তেই খেলার মোড় বদলে দিতে পারেন। মারাত্মক স্কিল এবং স্পিডি সম্পন্ন এক ফুটবলার। আসলে ফুটবল সম্মিলিত খেলা হলেও এমন একজন পজিটিভ মাস্টার মেকার দলে প্রয়োজন হয়। এমবাপের মধ্যে প্রতিপক্ষকে হারানোর সব ধরনের উপকরণ আছে। ওকে সামাল দেওয়া খুবই কঠিন। এ কারণে ফ্রান্স আজকের খেলায় কৌশলে, কার্যকরণে, বাস্তবায়নে অনেক এগিয়ে থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, তিউনিশিয়ার সাথে পরাজয় আজ তাদের আরও বেশি উজ্জীবিত করবে বলে মনে হচ্ছে। পোল্যান্ড দলে লেভান্ডোভস্কির মতো ভালো ফুটবলার রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। বলেন, মাঠে অনেক সময় অনেক ধরনের ঘটনা ঘটে। বিশ্বকাপেও ঘটেছে। সারাক্ষণ খেলে একদল জিতে যায় আরেক দল। ’৭৪ সালের ফাইনালে জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যকার ম্যাচে এমনটি হয়েছিল বলে জানান। ইংল্যান্ড এবং সেনেগালের মধ্যেও উপভোগ্য ম্যাচ হবে বলে ওয়াসিম ইকবালের ধারণা। অবশ্য বিশেষজ্ঞরাও বলছেন এই ম্যাচে ইংল্যান্ড ফেভারিট। কিন্তু কোনোভাবেই সেনেগালকে আন্ডারস্টিমেট করার অবকাশ নেই। সেনেগাল অনেক দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকলেও তারা শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়াই করবে এটি চরম সত্য।এবারের বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে এসেছে জাপান এবং সাউথ কোরিয়া। এই দুই দেশের সাথে ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে সাবেক তারকা ফুটবলার ওয়াসিম ইকবালের। বলেন, ‘‘অনেক সাধনা আর পরিশ্রম করে জাপান ও সাউথ কোরিয়া দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে এসেছে। এ দুটি দেশ ফুটবলকে প্রচণ্ড রকম ভালোবাসে। বিশ্বকাপের আগে এই দুই দেশের খেলোয়াড়রা নিজেদেরকে তৈরি করার জন্য ভালো সময়ও পেয়েছে। কিন্তু এশিয়ার টিমের বড় সমস্যা হল দলে ‘মাস্টার মাইন্ড’ ফুটবলারের অভাব। এই অভাবটা রয়েই গেছে। আসলে একটি দলে যদি ম্যাজিকম্যান না থাকে তাহলে খুব বেশি সামনে যাওয়া যায় না। দেখুন ইউরোপ, লাতিন আমেরিকার প্রায় প্রতিটি দলেই ম্যাজিকম্যান রয়েছে। যারা যেকোনো ম্যাচ দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘুরিয়ে দিতে পারে। মেসি, নেইমার, এমবাপে, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো- এরাতো অন্যরকম। এশিয়াতে এরকম মহাতারকার প্রয়োজন আছে। সেটা না হলে টেক্কা দেওয়া যাবে না।’’

সবশেষে তিনি বললেন, ‘এবারের বিশ্বকাপে জাপান এবং কোরিয়ার মধ্যে যথেষ্ট প্রাণশক্তি লক্ষ্যণীয়। স্পিড এবং স্ট্যামিনার কোনো অভাব নেই, স্বল্পতা নেই। ফলে প্রতিপক্ষদের যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে। এ দুটি দলের সামনে কেউ ফ্লপ করলে, ছন্দ হারালে, খেই হারিয়ে ফেললে রেহাই পাবে না। তাদের জন্য পরাজয় নিশ্চিত। জাপান ও সাউথ কোরিয়া আরও ভালো করুক- এটিই কামনা থাকল।’