গত কয়েক আসরে ধারাবাহিকভাবে একই দৃশ্য দেখে আসছিল বিশ্বকাপ। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে এসে প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নেয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা হচ্ছিল। এবার ইতিহাস পাল্টে দিল ফ্রান্স। গ্রুপপর্বে নিজেদের দ্বিতীয় খেলায় ডেনমার্ককে ২-১ গোলে হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে এবার নকআউটে উঠে গেল দিদিয়ের দেশমের শিষ্যরা। কাইলিয়ান এমবাপে করেছেন জোড়া গোল।
গ্রুপ-ডি থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়া ফ্রান্স দুই ম্যাচে জিতে পেয়েছে ৬ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে অস্ট্রেলিয়া। দুই ম্যাচে এক ড্র ও এক হারে ১ পয়েন্ট পাওয়া ডেনমার্ক ও তিউনিশিয়া গোল ব্যবধান সমান হওয়ায় যৌথভাবে টেবিলের তলানিতে আছে।
শনিবার স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ ম্যাচের ১০ মিনিটে আদ্রিয়েন রাবিওতের দারুণ ক্রসে পা ছোঁয়াতে পারেননি অলিভিয়ের জিরুদ। লিড পায়নি ফ্রান্স। পাঁচ মিনিট পর জিরুদের হেড পোস্টের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।
মিকেল ডামসগার্ড বলের নিয়ন্ত্রণ হারালে বল কেড়ে পাল্টা আক্রমণে অনেকটা পথ দৌড়ান রাফায়েল ভারানে। তার পাসে বল পেয়ে কাইলিয়ান এমবাপে বক্সে ঢুকে যাচ্ছিলেন। তাকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন ক্রিস্টেনসেন। বক্সের কাছে সেট পিস থেকে চমৎকার পাস দেন উসমানে ডেম্বেলে। ২১ মিনিটে রাবিওতের নেয়া হেড শেষে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকাল ডেনিশ গোলরক্ষক ক্যাসপার স্মাইকেল।
ম্যাচের ৩০ মিনিটে এমবাপে বাঁ-প্রান্ত থেকে বক্সে প্রবেশ করে ডানদিকে ক্রস দেন। হুলেস কৌন্ডে বল নিয়ে শট করলেও প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড় দারুণভাবে সেটি ব্লক করেন। ছয় মিনিট পর পাল্টা আক্রমণ থেকে বল পান ডেনমার্ক ফরোয়ার্ড আন্দ্রেয়াস কর্নেলিয়াস। তার ডান পায়ের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরের মিনিটে আবারও ঠিকঠাক হেড নিতে না পারায় বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হন জিরুদ। বক্সের বেশ বাইরে দিয়ে বল চলে যায়।
খেলার ৪০ মিনিটে ডেম্বেলের পাসে বল পাওয়া এমবাপে গোলের সুযোগ পান। বক্সের ভেতর তার ডান পায়ের ফিনিশিং ভালো ছিল না। বল বারের অনেক উপর দিয়ে চলে যায়।
বিরতি সেরে একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে ফ্রান্স। ৫০ মিনিটে প্রতিপক্ষের তিন ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে বক্সে থাকা ডেম্বেলেকে বল বাড়ান লক্ষ্যের দিকে। তবে পাসের গতি বেশি থাকায় কোনো সতীর্থ সুযোগ নেয়ার আগেই বল স্মাইকেলের গ্লাভসবন্দি হয়।
ম্যাচের ৫৬ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে রাবিওতের বাড়িয়ে দেয়া বল নিয়ে একা ছুটে যাওয়া এমবাপে নেন দূরপাল্লার শট। কর্নারের বিনিময়ে দলকে রক্ষা করেন স্মাইকেল। ৬০ মিনিটে গোলমুখে গোলরক্ষককে একা পেয়েও পোস্টের অনেক উপর দিয়ে শট মেরে ফ্রান্সের হতাশা বাড়ান অ্যান্টনিও গ্রিজম্যান।
পরের মিনিটেই ভাঙে ডেডলক। থিও হের্নান্দেজের বাঁ-প্রান্ত থেকে বাড়ানো বল নিয়ে ডান পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন এমবাপে। ম্যাচে সমতা টানতে মোটেও সময় নেয়নি ডেনমার্ক। কর্নার কিকে ৬৮ মিনিটে জোয়াচিম অ্যান্ডারসনের হেড মাটিতে ড্রপ খায়। এরপর হেডে বল জালে জড়ান ক্রিস্টেনসেন।
পাঁচ মিনিট পর ডেনিশরা লিড পেতে পারত। ডামসগার্ডের পাসে বল পেয়ে ডান পায়ে শট নেন জেসপার লিন্ডস্ট্রম। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকান ফ্রেঞ্চ গোলরক্ষক হুগো লরিস। ৮০ মিনিটে রাবিওতের বাইসাইকেল কিক পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। খানিক পর ডেনমার্ক স্ট্রাইকার মার্টিন ব্র্যাথওয়েটের শট পাশের জালে লাগে।
নিজেকে উজাড় করে খেলতে থাকা এমবাপে ৮৬ মিনিটে আবারও নিশানাভেদ করে ফ্রান্সকে লিড পাইয়ে দেন। গ্রিজম্যানের ক্রসে ডান পায়ের হাঁটুর উপরের অংশে বল লাগিয়ে জালে ঠেলে দেন। ফ্রান্সের জার্সিতে এমবাপের এটি ৩১তম গোল। শেষ ১৩ আন্তর্জাতিক ম্যাচে পেলেন ১৪ গোল।
ম্যাচের বাকি সময়ে ডেনমার্ক চেষ্টা করেও সমতায় ফিরতে না পারায় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।