চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

এবার ব্রাজিলই চ্যাম্পিয়ন হবে: আজমত

সাবেক তারকা ফুটবলার

নানা অঘটনের মধ্যে দিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম পর্বের লড়াই ভীষণরকম জমে উঠেছে। আর তাই প্রতিদিনই নতুন নতুন চমকের রঙে বিশ্বকাপ হয়ে উঠছে আরও রঙ্গিন, বর্ণিল। প্রথম পর্বের অনেক অনুমানই মিলছে না। সুপার ফেভারিটরা নাস্তানাবুদ হয়েছে আন্ডারডগদের কাছে। আর এ কারণেই জার্মানি, আর্জেন্টিনা, ডেনমার্ক, বেলজিয়ামের মতো দলের এখনও দ্বিতীয় পর্বে ওঠাটা ঝুলে আছে। অনুমিত হচ্ছে এদের মধ্যে কেউ কেউ হয়ত বাদও পড়বে।

বিশ্বকাপের শুরুতে কারও ভাবনাতেই ছিল না জাপানের কাছে ধরাশায়ী হবে চারবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। আবার ৩৬ ম্যাচে অপরাজিত থাকা আর্জেন্টিনাকে প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে মুখ থুবড়ে পড়তে হবে। শক্তিশালী বেলজিয়ামকে ০-২ গোলের ব্যবধানে হারতে হবে মরক্কোর কাছে। কিন্তু এসব ঘটনাই বিশ্বকাপের লড়াইকে যে আরও জমিয়ে তুলেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

বিশ্বকাপের এসব নিয়েই আজ কথা হয় সাবেক তারকা ফুটবলার আজমতের সাথে। রক্ষণভাগ সামলে বাংলাদেশের যেসব ডিফেন্ডার ফুটবল ইতিহাসে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখতে সক্ষম হয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম আজমত। এই নামটা এখনও শুনলে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক জাদুকর ডিফেন্ডারের প্রতিচ্ছবি। যাকে ভেদ করে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের ডি-বক্সে ঢুকে পড়া, গোল করা ছিল সবচেয়ে দূরহ কাজ। ফুটবলের স্বর্ণযুগে আজমত আলী এমনটিই ছিলেন। ফরোয়ার্ড জোনে কত কত তারকা, ক্ল্যাসিক ফুটবলার, কিন্তু অনেকটাই গ্রামীণ গন্ধে ভরা আজমত ছিলেন রক্ষণভাগে অনড়-অটল এক ফুটবলার। আশির দশকে ফুটবলের স্বর্ণযুগে ধারাভাষ্যকাররা মোলায়েম কণ্ঠে বলতেন আজমত ‘চীনের প্রাচীর’। আর গলি-ঘুপচির টং দোকানে আড্ডামারা ফুটবল প্রেমিকদের কাছে আজমত পরিচিত ছিলেন ‘বেড়া’ হিসেবে।

এই আলোচিত, তারকা স্টপার ব্যাক আজমত বহু আগেই ফুটবল ছেড়ে আড়ালে চলে গেছেন। সাবেক অনেক ফুটবলারই ফুটবল ছেড়ে অফিসিয়াল বা কোচ হিসেবে মাঠের মায়া ধরে রাখলেও আজমত অনেকটাই নির্বাসনে। ফুটবলের সাথে খুব একটা আর সম্পর্ক রাখেননি। এ কারণেই আজমত নামটা এখনও ফুটবল প্রেমিকদের কাছে যতটা সতেজ হয়ে আছে ঠিক তেমনি ফুটবল প্রেমিকদের স্মৃতিপট থেকে যেন হারিয়েও গেছে তার চেহারা। তবে আজমত হারিয়ে যাননি, থাকেন গাজীপুরে নিজ বাড়িতে। বয়স বেড়ে যাওয়ায় তেমন ঢাকায়ও আসা হয় না তার। অসুস্থও অনেক। কিন্তু বিশ্বকাপের খেলা না দেখে তিনি আর থাকতে পারেন না।

এ পর্যন্ত হওয়া ম্যাচ সম্পর্কে সাবেক ফুটবলার আজমত বলেন, এখন পর্যন্ত তার কাছে মনে হয়েছে ফুটবলের লড়াই ছন্দে আছে ফ্রান্স, স্পেন, ব্রাজিল, ক্রোয়েশিয়া। এ চারটি দল গোলপোস্ট থেকে ফরওয়ার্ড সব প্লেসে ভারসাম্যপূর্ণ। শুরু থেকেই তারা ভালো খেলছে। তারা ধাপে ধাপে আরও ভালো খেলবে বলে তার বিশ্বাস। শিরোপার অন্যদলগুলো এলোমেলো খেলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আর্জেন্টিনা এবং জার্মানির কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রত্যাশামাফিক তারা খেলতে পারছে না। আগামীদিনের ম্যাচগুলো তাই তাদের জন্য ভীষণ রকম চ্যালেঞ্জিং হবে।

আজমত আলী বরাবরই ব্রাজিলের সমর্থক। ব্রাজিলকে ভালোবাসেন হৃদয় দিয়ে। এই দলের খেলা খুবই পছন্দ করেন। আর সবসময় হৃদয়ে ধরে রেখেছেন ব্রাজিলের সাবেক ফুটবলার সক্রেটিসকে। আজমত আলী বলেন, ‘ড. সক্রেটিস আমার আদর্শ। আমার ভালোবাসা। আশির দশকে ব্রাজিলের মধ্যমাঠের এই তারকার খেলা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখতাম। এখনও তাকে ভালোবাসি। তার পাস, পজিশন, বল রিসিভ সবই ছিল অন্যরকম।’

আজমতের মতে, এবারের বিশ্বকাপে অবশ্যই অন্যতম ফেভারিট ব্রাজিল। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো সব রসদ তাদের আছে। প্রথম ম্যাচের খেলাতেই সে প্রমাণ তারা রেখেছে। ব্রাজিলের খেলার যে আভিজাত্য সেটা প্রথম ম্যাচেই তারা কিছুটা হলেও তুলে ধরতে পেরেছে। আগামী ম্যাচগুলোতে তারা আরও তুলে ধরতে পারবে।

ব্রাজিল কী এবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে পুরনো দুঃখ মোচন করতে পারবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে অনেকগুলো ফ্যাক্টর ফেভারে থাকা লাগে। স্ট্রাইকার নেইমার মাঠের বাইরে চলে যাওয়াটা কিন্তু খুবই সিগনিফিকেন্ট। ও একটা কি প্লেয়ার। আগামীতে যদি এরকম কিছু আর না ঘটে তাহলে ব্রাজিল মূল লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে বলে তার ধারণা।

তবে ফ্রান্সকেও তিনি খুবই সমীহ করছেন। বলেন, ফ্রান্সের টোটাল খেলার মধ্যে ভীষণ গতি আছে। ২৬ নভেম্বর ডেনমার্কের মধ্যকার ম্যাচে তারা যেভাবে খেলেছে সেটি মনে রাখতে হবে। এই দলে এমবাপের মতো দুর্দান্ত এক পারফর্মার রয়েছে এটিও মনে রাখতে হবে। সুতরাং ফ্রান্সকে রুখে দেয়া যেকোনো দলের পক্ষে খুবই টাফ হবে।

আজমত আলী

কাতার বিশ্বকাপে এশিয়ান টিমগুলোর পারফরম্যান্সকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন আজমত আলী। বললেন, এই বিশ্বকাপে সৌদি আরব, জাপান, সাউথ কোরিয়া ভালো খেলছে। এই দলগুলো আগামীতে আরও ভালো খেলবে। কোস্টারিকার বিপক্ষে জাপানের পরাজয়কে তিনি দুর্ভাগ্য বলে আখ্যায়িত করেন।

আজমত বলেন, ‘জাপানে অনেকবার খেলতে গিয়েছি। ওরা ফুটবলকে খুব ভালোবাসে। ফুটবলের উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে। জাপান কোস্টারিকাকে হারিয়ে দ্বিতীয় পর্বে ওঠা নিশ্চিত করতে পারলে মনটা শান্তি পেত। জাপান হেরে যাওয়ার কারণে অনেক কষ্ট পেয়েছি। সামনে জাপানের জন্য কঠিন ম্যাচ। ১ ডিসেম্বর স্পেনের মুখোমুখি হতে হবে তাদের। কিন্তু এই ম্যাচে জেতা অনেক কঠিন।’

সবশেষে আজমত আলী বলেন, সামনে আর বিশ্বকাপ দেখা হবে কিনা বলা মুশকিল। শরীর ভালো নেই। কষ্ট করে চলাফেরা করতে হয়। গাজীপুরে বাসার পাশের একটা বাজার ছাড়া কোথাও যাওয়া হয় না। সব জায়গাতেই এখন বিশ্বকাপ আর বিশ্বকাপ। ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনাকে ঘিরেই এদেশে যত উচ্ছ্বাস আনন্দ। এ দুটি দেশ বলতে আমাদের দর্শকরা পাগল। কিন্তু এসব খারাপ কিছু না। তবে দেশের ফুটবলকে এগিয়ে নেয়ার দৃঢ় প্রচেষ্টাও আমাদের থাকতে হবে।

সবশেষে তিনি বলেন, এবার ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হবে আর ভালো ফুটবল উপহার দিয়ে। আজকে সুইসদের সাথে ম্যাচেও জয়ী হবে ব্রাজিল।

বিজ্ঞাপন

Nil Joler Kabbo
Bellow Post-Green View