ঢাকায় গণপরিবহন মানেই নৈরাজ্য। লক্করঝক্কর ফিটনেসেহীন বাস, প্রশিক্ষণহীন চালক সহযোগি এসব নিয়েই চলছে ঢাকার গণপরিবহন। এখন সাধারণ মানুষ এদের দৌরাত্ম্যে গণপরিবহনের নাম শুনলে আতংকিত হয়ে উঠে। অধিকাংশ মানুষ বিকল্প যানে চলার চেষ্টা করলেও বেশিরভাগ মানুষের অগত্যা আশ্রয় গণপরিবহন। সীমাহীন অবহেলা ও পরিকল্পনার অভাবে এই সেক্টরে অব্যবস্থা ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে মাঝে মাঝে ভয়ংকর সব সংবাদ গবেষণায় উঠে আসে মানুষের নিরাপত্তাহীনতার ভয়াবহ ঘটনা।
‘ঢাকা শহরে গণপরিবহনে হয়রানি: কিশোরী এবং তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব’ নামক সাম্প্রতিক এক জরিপে জানা যায়: অযাচিত স্পর্শ-ধাক্কা-বাজে মন্তব্যের শিকার ৪৭ শতাংশ নারী। গণপরিবহনে চলাচল করা কিশোরী, তরুণী ও নারীদের ৬৩ শতাংশ নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন। এর মধ্যে প্রায় ৪৭ শতাংশ যৌন হয়রানির শিকার হন। যৌন হয়রানির শিকার এই নারীদের প্রায় ৪৫ শতাংশ পরবর্তী সময় মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। এসব যৌন হয়রানির মধ্যে রয়েছে গণপরিবহনে ওঠা-নামার সময় চালক সহকারীর অযাচিত স্পর্শ, বাসে জায়গা থাকার পরও যাত্রীদের গা ঘেঁষে দাঁড়ানো, বাজেভাবে স্পর্শ করা, ধাক্কা দেওয়া, বাজে মন্তব্য। জরিপে অংশগ্রহণকারী বেশির ভাগ নারী ঝামেলা এড়াতে এসব ঘটনার প্রতিবাদ করেন না। যৌন নিপীড়নকারী ব্যক্তিদের মধ্যে যাত্রীর সংখ্যাই বেশি। গণপরিবহনের চালক ও চালকের সহকারীর হাতেও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন অনেকে। নিপীড়নকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যা বেশি।
আমরা এই জরিপের ভিত্তিতে বলতে চাই দ্রুতই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন এটি গুরুত্ব দিয়ে এগুলোর প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া হয়। এইসব ছোট ছোট সামাজিক অবক্ষয় এক সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ হয়ে উঠতে পারে। গণপরিবহনের মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চয় নূন্যতম সংকট নিরসন হবে বলে আমরা আশা করি।