বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরে জনবান্ধব বাজেট প্রণয়ন জরুরি বলে মতামত দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
রোববার ৫ জুন গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন, সেইফটি এন্ড রাইটস সোসাইটি, বণিক বার্তা ও সেন্টার অন বাজেট এন্ড পলিসির যৌথ উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত ‘জন-বাজেট সংসদ ২০২২’শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা।
জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন জাতীয় বাজেটের গণতান্ত্রয়ন ও জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এই ছায়া বাজেট অধিবেশনের আয়োজন করেছে। এই অধিবেশনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে সাধারণ করদাতা, উদ্যোক্তা, কৃষক, শ্রমজীবি, নারী, দলিত, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, গবেষক, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, ট্রেড ইউনিয়নকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার প্রতিনিধি উপস্থিত হয়ে জাতীয় বাজেট বিষয়ে তাদের সুচিন্তিত মতামত প্রদান করেছেন।
দুটি অধিবেশনে সংসদ বাজেট অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি ও বাজেট জনপ্রত্যাশা শিরোনামে প্রথম অধিবেশন এবং জীবন ও জীবিকা রক্ষায় সর্বজনীন কৌশল ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা শিরোনামে দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম অধিবেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যাক্ষ ও সেন্টার অন বাজেট এন্ড পলিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এম এম আকাশ এবং দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ। বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় প্রথম অধিবেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের সহ-সভাপতি আমানুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ এখনো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি। তবে অনেক দিক থেকে এগিয়েছে। স্বাধীনতার পর মাথাপিছু আয় ছিল ১২৫ ডলার। এখন এটি বহুগুণ ছাড়িয়ে গেছে। আগে খাদ্যের চরম অভাব ছিল। এখন সেটি নেই। মন্ত্রী বলেন, দেশে ভয়াবহ দারিদ্রতা ছিল। আমি নিজে দারিদ্রতা দেখেছি। না খেয়ে থাকা মানুষের আহাজারি শুনেছি। কিন্তু এখন মানুষ না খেয়ে মরছে না। মানুষ এখন খেতে পারছে। গ্রামে-গঞ্জে পর্যন্ত ফলের বৃহৎ বাজার গড়ে উঠছে। অথচ আগে এটা ছিল না। কৃষিকে একক গুরুত্ব দিয়ে মানুষে চাহিদা মেটানো সম্ভব নয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সরকার কৃষির পাশাপাশি শিল্পায়নকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। গার্মেন্টস শিল্পে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এটা আমাদের জন্য গর্বের। এর অবদান একা কারো নয়। একজন সাধারণ পোষাক শ্রমিকও এর কৃতিত্ব পাবে।
দ্বিতীয় অধিবেশনে স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক ডা. রশীদ-ই মাহবুবের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শামীম হায়দার পাটেয়ারী এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) কান্ট্রি ইকোনোমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ। গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের সহ-সভাপ্রধান আসগর আলীর সঞ্চালনায় দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের যুগ্ম-সম্পাদক সেকান্দার আলী মিনা।
দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শামসুল আলম বলেন, শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন দুর্ঘটনায় পড়ে আহত হচ্ছেন। কেউ কেউ প্রতিবন্ধী হয়ে যাচ্ছেন, তারা যেন একটা সুরক্ষার আওতায় আসতে পারে আএটি খেয়াল রাখা প্রয়োজন। একটা পেনশন স্কিম করে তাদের সারাজীবন কিছু সহায়তা দেয়া দরকার। ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প গত ১৩ বছরে অনেক ইতিবাচক ভুমিকা রেখেছে। আগামীতে স্বাস্থ্য বিমা বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন।
অধিবেশনের শেষে মডারেটর হিসেবে ডিবিএম-এর সহ-সভাপতি আসগর আলী সাবরি এই ছায়া সংসদে উথ্থাপিত দাবী উপস্থিত প্রতিনিধিদেরকে জাতীয় সংসদে তুলে ধরার অনুরোধ জানান।